বাঙালির জাতির পিতাকে হারানোর দিন ১৫ অগাস্ট নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে স্মরণ করেছে চট্টগ্রামবাসী।
সোমবার ভোরে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করে তোলা হয়। সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শুরু হয় শোকাবহ এ দিনটির নানা কর্মসূচি।
নগরীর টাইগারপাসে সিটি করপোরেশন কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী। এ সময় কাউন্সিলর ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মেয়রের সঙ্গে ছিলেন। এরপর দোয়া মাহফিল ও নগরীর থিয়েটার ইন্সটিটিউট প্রাঙ্গণে আলোচনা সভা হয়েছে।
সভায় সিটি মেয়র বলেন, “বঙ্গবন্ধু একটি দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। তাই মতের ভিন্নতা থাকতে পারে, কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কোনো ভিন্নতা থাকতে পারে না।”
চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল বলেন, রাজনৈতিক এক দল আরেক দলের সমালোচনা করতে পারেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সমালোচনার ঊর্ধ্বে।
অগাস্ট মাসকে ‘অভিশপ্ত’ মাস মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এ অগাস্ট মাসেই ভারতের স্বাধীনতার জন্য প্রথম জীবন দিয়েছেন ক্ষুদিরাম বসু। এ মাসের ১১ তারিখ তাকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল। এ অগাস্ট মাসে অনেক ঘটনা… বঙ্গবন্ধুকে এবং অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে এ মাসেই হত্যা করা হয়েছে।”
ইতিহাস বঙ্গবন্ধুকে সৃষ্টি করেনি, বঙ্গবন্ধু নিজেই ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন মন্তব্য করে রেজাউল বলেন, “তাই বঙ্গবন্ধুকে কেউ স্মরণ করা না করা নিয়ে কিছু আসে যায় না। কারণ ইতিহাস তার আপন গতিতে চলে। কেউ ইতিহাস বিকৃত করতে পারবে না।”
এদিকে সকাল ৯টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা। এরপর সেখান থেকে বের করা হয় শোক র্যালি।
চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান ফুল দিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জেলা ও মহানগর ইউনিটের পক্ষ থেকেও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় বঙ্গবন্ধুকে।
এরপর অনুষ্ঠিত হয় আলোচন সভা, দুপুরে শিল্পকলা একাডেমি, সার্কিট হাউসে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি ও জমিয়াতুল ফালহ জামে মসজিদে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে সকালে নগরীর দারুল ফজল মার্কেটে দলীয় কার্যালয়ে ফুল দিয়ে শোক দিবসের দিনব্যাপি কর্মসূচি শুরু করেছে মহানগর আওয়ামী লীগ।
দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনসহ দলটির নেতারা এ সময় সেখানে ছিলেন। এরপর খতমে কোরআন, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতিমখানায় খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও আলোচনা সভা করেছে নগর আওয়ামী লীগ।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানের নেতৃত্বে দলীয় কার্যালয়ে নেতাকর্মীরা ফুল দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
এদিকে নগরীর দামপাড়ায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইন্সের জনক চত্বরে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়।
তার আগের দিন রাতে একই স্থানে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের আত্মত্যাগ স্মরণে দামপাড়াস্থ মোমবাতি প্রজ্বালন করেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সদস্যরা।
আর সকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীন আখতার ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে।
বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও ইন্সটিটিউটের পরিচালক, চবি অফিসার সমিতি, কর্মচারী সমিতির নেতারা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
এরপর উপাচার্যের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় ‘বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কীর্তি’ এবং শোকাবহ ১৫ অগাস্ট শীর্ষক আলোচনা সভা, যেখানে অংশ নেন চবি বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক ড. মুনতাসী0র মামুন।
শোক দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন- চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি আলী আব্বাস ও সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, সিইউজের সভাপতি মোহাম্মদ আলী ও সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলাম।
আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের পাশাপাশি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও প্রগতিশীল সংগঠনগুলোও বঙ্গবন্ধুকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।