কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৯ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে খবর রয়েছে।
Published : 30 Jul 2024, 09:18 PM
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ‘গ্রেপ্তার’ হওয়া শিক্ষার্থীদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি করে বিবৃতি দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৬ জন শিক্ষক।
মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষকদের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে ‘নিরপরাধ’ শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তারের নিন্দাও করা হয়েছে।
বিবৃতিতে শিক্ষকরা অভিযোগ করেছেন, কোটা সংস্কারের যৌক্তিক আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বেশ কিছুদিন ধরে দেশে চরম অরাজকতা চলছে। এ সময় শিক্ষার্থীদের ওপর ‘বর্বরোচিত হামলা’ অব্যাহত রয়েছে। এখন পর্যন্ত আন্দোলনরত শিক্ষার্থীসহ শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত ২০০ জনের বেশি নাগরিকের নিহতের খবর আসছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে।
পাশাপাশি বর্তমানে আন্দোলন দমানোর লক্ষ্যে দমনপীড়নমূলক হয়রানি, মামলা ও গণগ্রেপ্তার জারি রয়েছে বলে অভিযোগ করে শিক্ষকরা বলছেন, “দমনপীড়নের এই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্যের দ্বিতীয় বর্ষের আল মাশনূন, নাট্যকলা বিভাগের সায়হাম মাহমুদ ও শিক্ষা গবেষণা ইন্সটিটিউটের রমজান শেখকে আটক বা ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে আমরা বিভিন্ন সূত্রে জানতে পেরেছি।
‘‘এদের ছাড়াও আরও কিছু শিক্ষার্থীর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলেও বিভিন্ন সূত্র থেকে দাবি করা হচ্ছে। এসব ঘটনা অন্ত্যন্ত অযৌক্তিক ও উদ্বেগজনক।‘‘
বিবৃতিতে শিক্ষকরা বলেছেন, “ আমরা বিশ্বাস করি, চলমান আন্দোলনে আমাদের এই ছাত্ররা যদি অংশগ্রহণ করেও থাকেন, তা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকারের অংশ হিসেবেই করেছেন এবং তারা কোনোভাবেই সহিংসতার সাথে জড়িত নন। এর পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষক হিসেবে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি, সব রকম পুলিশি হয়রানির নিন্দা জানাচ্ছি এবং তাদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।”
চলমান আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হামলা-মামলা, ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড, গণগ্রেপ্তার ও হত্যাকাণ্ডের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ‘হত্যাকারীদের’ দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করার দাবি করেছেন শিক্ষকরা।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করাদের মধ্যে রয়েছেন, নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক খাদিজা মিতু, বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকুলার বায়োলজির অধ্যাপক রেজওয়ানুল হক, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজির অধ্যাপক আদনান মান্নান, অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নাইম হাসান চৌধুরী, নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোশরেকা অদিতি হক, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আলী আর রাজি, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাপস কুমার ভৌমিক, ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গোলাম হোসেন হাবীব।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতা পরবর্তী অভিযানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৯ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে খবর রয়েছে।
বলা হচ্ছে, নাট্যকলা বিভাগ সায়হাম মাহমুদ, ফার্সি বিভাগের আল মাশনুন, শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের রমজাম শেখ, ফাইন্যান্স বিভাগের লুৎফুর রহমান, ইসলামিক স্টাডিজের আশিকুর রহমান, একই বিভাগের হাবিব উল্লাহ, আলফাজ, আবু সাঈদ এবং পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শরীফ মাহমুদ গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ১৫ জুলাই সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। সেই থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত সারা দেশের মত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও আন্দোলন চরে, সহিংসতাও হয়।
কারফিউ পরিস্থিতির মধ্যেই সোমবারও চট্টগ্রামের চেরাগী পাহাড় মোড়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের ব্যানারে আবার বিক্ষোভের চেষ্টা করে শিক্ষার্থীরা। বেশ কয়েকজন আটক হলেও মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
তবে সোমবার এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে অনুপ্রবেশের অভিযোগে ‘বহিরাগত’ চারজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছেন কোতোয়ালী থানায় ওসি কেএম ওবায়দুর রহমান।
তিনি বলেন, কর্তব্যে বাধা দেওয়ার অভিযোগে মঙ্গলবার কোতোয়ালী থানায় একটি মামলা হয়েছে। এ মামলায় ১৬ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত ৩০০/৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
“ঘটনাস্থল ও আশেপাশের এলাকা থেকে আটক করা ১৬ শিক্ষার্থীকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে অনুপ্রবেশকারী চারজন বহিরাগতকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।”
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক রোববার ভিডিও বার্তায় চলমান আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। কিন্তু সমন্বয়কদের দিয়ে ‘জোর করে’ বিবৃতি দেওয়ানো হয়েছে অভিযোগ করে ৯ দাবিতে সোমবার চেরাগী পাহাড় মোড়ে বিক্ষোভে জড়ো হয় একদল শিক্ষার্থী।
পরে পুলিশ টিয়ার সেল ও সাউন্ড গ্রেনেড মেরে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ঘটনাস্থল ও আশেপাশের এলাকা থেকে ২০ জনকে আটক করে। সেদিনই তাদের মধ্যে ১৬ শিক্ষার্থীকে ছেড়ে দিয়ে বাকি চারজনকে ‘বহিরাগত’ দাবি করে কোতয়ালি থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (জনসংযোগ) কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, কোতোয়ালির পাশাপাশি পাহাড়তলী থানায় আলাদা একটি মামলা হয়েছে। এ নিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার ঘটনায় গত ১৬ থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগরীতে ২২টি মামলা হয়েছে।
এসব মামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় গ্রেপ্তার ৩৪ জনসহ মোট ৫৬৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে তথ্য দেন তিনি।
তবে গ্রেপ্তার এই ৫৬৬ জনের মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ আছেন কিনা, তা যাচাই করা যায়নি।