“কবিতাগুলোর ভাষা ব্যাপক আক্রমণাত্মক ছিল। শেখ মুজিবসহ বিভিন্ন শব্দ বলা হয়, ‘স্বাধীন দেশে আবার পাকিস্তানি শকুন’ এমন কথাও বলা হয়। এটা দেশের স্থিতিশীল পরিবেশ অস্থিতিশীল করার অপপ্রয়াস,” বলেন জাসাস নেতা মামুনুর রশিদ।
Published : 21 Feb 2025, 09:50 PM
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে চট্টগ্রামে ‘জাসাস নেতাদের বাধায়’ আবৃত্তির একটি অনুষ্ঠান মাঝপথে পণ্ড হয়ে গেছে; সেইসঙ্গে এক আবৃত্তিকারকে হেনস্তা করারও অভিযোগ উঠেছে।
শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে নগরীর বোস ব্রাদার্স সংলগ্ন টিঅ্যান্ডটি অফিসের সামনের গেইটে ‘চট্টগ্রাম আবৃত্তি সম্মিলনের’ অনুষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটে বলে আয়োজক সংগঠনের সদস্যরা এবং পুলিশ জানিয়েছে।
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের একজন বলেন, বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) নেতাদের বাধায় তারা অনুষ্ঠান চালাতে পারেননি।
আর জাসাস নেতারা বলছেন, ‘স্থানীয় জনগণই জনস্বার্থে’ ওই অনুষ্ঠান বন্ধ করেছে। তারা ‘সঙ্গে ছিলেন মাত্র’।
চট্টগ্রাম আবৃত্তি সম্মিলনের ব্যানারে বেশ কয়েকটি সংগঠন প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারিতে একক কবিতা পাঠ, কথামালা ও সংগীতানুষ্ঠান আয়োজন করে। এবারও তারা ওই আয়োজন করে।
আয়োজকদের একজন বলেন, “আমরা ১০টার পর অনুষ্ঠানমালা আয়োজন করি। বিভিন্ন সংগঠনের আবৃত্তিকাররা একক আবৃত্তি পরিবেশন করছিল। ১১টার দিকে একজন কবিতা পড়ার সময় তাকে বাধা দেওয়া হয়।”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ওই আবৃত্তিকার কবি রবিউল হুসাইনের ‘এক সেকেন্ডে মাত্র চার ফুট’ কবিতাটি আবৃত্তি করছিলেন। তখনই জাসাসের আহ্বায়ক মুসা বাবলু ও সদস্যসচিব মামুনুর রশিদ শিপনের নেতৃত্বে অনুষ্ঠানে বাধা দেওয়া হয়। ওই শিল্পীকে কান ধরে উঠবস করায়। বাধার কারণে আমরা আর অনুষ্ঠান করতে পারিনি।”
আয়োজকদের একজন ‘নরেন আবৃত্তি একাডেমির’ পরিচালক মিশফাক রাসেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই আবৃত্তি শিল্পী কী কবিতা আবৃত্তি করবেন আমরা জানতাম না। কবিতার কয়েকটি লাইনের কারণে বেশ কিছু লোক এসে প্রতিবাদ জানায় এবং পরে আমরা অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিই।”
অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে জাসাস চট্টগ্রাম মহানগরের সদস্য সচিব মামুনুর রশিদ শিপন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনুষ্ঠানে বাধা দেওয়া হয়নি। স্থানীয় জনগণ জনস্বার্থে সেটি করতে মানা করেছে এবং আমরা তাদের সঙ্গে ছিলাম।”
তিনি বলেন, “ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসরদের নেতৃত্বে এ অনুষ্ঠান হচ্ছিল। সেখানে কবিতাগুলোর ভাষা ব্যাপক আক্রমণাত্মক ছিল। শেখ মুজিবসহ বিভিন্ন শব্দ বলা হয়। এ ছাড়া কবিতায় ‘স্বাধীন দেশে আবার পাকিস্তানি শকুন’… এরকম কথাও বলা হয়েছে। এটা দেশের স্থিতিশীল পরিবেশ অস্থিতিশীল করার অপপ্রয়াস।
“সে কারণে স্থানীয় জনগণ গিয়ে প্রতিবাদ জানায়। আমরা জাসাসের সদস্যরা তাদের পাশে ছিলাম। আমরা অনুষ্ঠান বন্ধ করিনি। ওই সময় পুলিশও ঘটনাস্থলে আসে। আয়াজকরা আমাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে এবং দুঃখপ্রকাশ করে ওই জায়গা ত্যাগ করেন। আমরা কোনো শিল্পীকে হেনস্তা করিনি। তিনিও (শিল্পী) আমাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।”
চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানার ওসি মো. আবদুল করিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “টিঅ্যান্ডটি অফিসের সামনের রাস্তায় একটি অনুষ্ঠানে সমস্যা হচ্ছে শুনে আমাদের একটি দল ঘটনাস্থলে গেলেও আয়োজকদের কাউকে পাওয়া যায়নি। অনুষ্ঠান বন্ধ করার বিষয়েও কোনো অভিযোগ কেউ করেনি।”