চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে এক সপ্তাহ আগে যুবলীগকর্মী শহীদুল ইসলাম আকাশ হত্যা মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর র্যাব বলছে, দুই বন্ধুর মধ্যে বিরোধ এবং আগের দুটি হত্যাকাণ্ডের জেরে এ খুনের ঘটনা ঘটেছে।
রোববার চান্দগাঁও ক্যাম্পে সংবাদ সম্মেলনে র্যাব ৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমএ ইউসুফ এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে শনিবার নগরীর পতেঙ্গা এলাকা থেকে আকাশের ব্ন্ধু মামুন, চাঁদপুর সদরের পুরাতন বাজার থেকে মামুনের ছোট ভাই ইকবাল ও সহযোগী মুকেশকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে মীরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ থানার হিংগুলী ইউনিয়নের ইনতির হাটবাজারে প্রকাশ্যে কুপিয়ে খুন করা হয় আকাশকে, যিনি স্থানীয় যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও দলে তার পদপদবি ছিল না। ওই বাজারে তার একটি ফার্নিচারের দোকান রয়েছে।
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও সাত/আট জনকে আসামি করে জোরারগঞ্জ থানায় মামলা করেছেন নিহত আকাশের বোন।
আসামিদের মধ্যে মামুনের বিরুদ্ধে হত্যা ও মাদকসহ ১২টি, ইকবালের বিরুদ্ধে ১৭টি ও মুকেশের বিরুদ্ধে দুটি মামলা আছে। আর নিহত আকাশের বিরুদ্ধে খুন, মাদকসহ মামলা আছে ১৩টি বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
আকাশ হত্যায় গত ২১ সেপ্টেম্বর মামলা হওয়ার পরপরই ছায়াতদন্তে নামার কথা জানিয়ে র্যাব কর্মকর্তা ইউসুফ জানান, এ খুনের পেছনে দীর্ঘ কাহিনি রয়েছে। এর আগে দুটি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে এর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। ২০১৯ সালে মামুনের ভাই আফজাল খুন হন। আর ২০১৬ সালে সাদ্দাম নামে একজন খুন হন, যিনি আকাশের ওপর একটি হামলার ঘটনায় জড়িত ছিলেন।
সাদ্দাম খুনের পরিকল্পনাকারী হিসেবে আকাশ জেল খেটেছিল জানিয়ে লে. কর্নেল ইউসুফ বলেন, বিরোধের জেরে মামুন ২০১৫ সালের দিকে আকাশকে হত্যার চেষ্টায় হামলা করেছিল। ওই মামলায় বেশ কিছুদিন কারাগারে ছিলেন মামুন। পরের বছর সাদ্দাম খুন হন।
এছাড়া মামুনের আরেক ছোট ভাই গ্রেপ্তার ইকবালকেও কুপিয়ে জখমের ঘটনা ঘটে যেটির অন্যতম আসামি ছিলেন নিহত আকাশ। এ মামলাতেও আকাশ জেল খাটেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য তুলে ধরে র্যাব ৭ অধিনায়ক বলেন, মামুনের ধারণা ছিল আকাশ তাকে খুন করতে পারে। বিভিন্ন সময়ে তার গ্রেপ্তারের পেছনে এক সময়ের বন্ধু আকাশের হাত ছিল। পাশাপাশি দলীয় বিরোধও ছিল তাদের মধ্যে।
তিনি বলেন, “গত ১৩ সেপ্টেম্বর ২২ মাস পর মামুন জামিনে কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে আকাশকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। এর সাথে অন্যতম উস্কানিদাতা ছিলেন তাদের অপর বন্ধু মোতালেব।”
র্যাব জানায়, এক সময় মামুন ও নিহত আকাশ ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন এবং বারৈয়াহাটের স্থানীয় এক নেতার ‘ক্যাডার’ হিসেবে কাজ করতেন। তখন তারা মাদক, কাঠসহ বিভিন্ন ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। পরে তাদের মধ্যে ব্যবসায়িক বিরোধও দেখা দেয়।
২০১৯ সালে নাবালিকা চাচাত বোনকে বিয়ে করায় নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় মামুন গ্রেপ্তার হয়েছিল বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
আকাশের হত্যাকাণ্ডের দিনের ঘটনা তুলে ধরে র্যাব ৭ অধিনায়ক বলেন, “পরিকল্পনা অনুযায়ী মামুন জামিনে মুক্তি পাওয়ার পাঁচ দিনের মাথায় ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে ক্রেতা সেজে এক যুবককে আকাশের ফার্নিচারের দোকানে পাঠায়। এ সময় ওই ক্রেতা তর্ক বাধায় আকাশের সাথে।
“এসময় মামুন দলবল নিয়ে গিয়ে আকাশকে দোকান থেকে টেনে বের করে কিরিচ দিয়ে মাথার পেছনে আঘাত করে। পরে মোতালেব তার হাতে থাকা ধামা দিয়ে গলায় ও থুতনিতে আঘাত করে।”
তিনি জানান, এসময় আকাশের বাবা এগিয়ে এলে তাকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় ফেলে দেয়। আর আকাশকে বাইরে বের করে কুপিয়ে জখম করা হয়। পরে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলার পাঁচ নম্বর আসামি স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. মিজানকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। আর আরেক আসামি মোতালেবকে ধরতে র্যাব কাজ করছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।