বাংলার সমৃদ্ধির ইউক্রেইনে যাওয়ার ব্যাখ্যা দিল বিএসসি

‘লন্ডন জয়েন্ট ওয়ারের’ ঘোষণার আগেই বাংলার সমৃদ্ধি ওয়ার জোন এলাকায় পৌঁছে বলে দাবি করেছে জাহাজটির মালিক বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি)।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 March 2022, 05:04 PM
Updated : 7 March 2022, 05:04 PM

সোমবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রকেট হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাঁচ দিন পর জাহাজটি কোন প্রেক্ষাপটে ইউক্রেইনে গিয়েছিল সেই ব্যাখ্যা দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিটি।

বিএসসির উপ মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) তারেক-উল-ইসলাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “লন্ডন জয়েন্ট ওয়ার কমিটি গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সি অব আজব ও ব্ল্যাক সি এরিয়াকে ওয়ার জোন (যুদ্ধঝুঁকি) এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে, যা ২৩ ফেব্রুয়ারি হতে কার্যকর হবে মর্মে বীমা কোম্পানি নিশ্চিত করে।

“কিন্তু জাহাজটি পণ্য খালাসের জন্য ১৪ ফেব্রুয়ারি তুরস্কের ইরেগলি (ব্ল্যাক সি এরিয়া) বন্দরে পৌঁছে অর্থাৎ ওয়ার জোন এরিয়া ঘোষণা করার পূর্বেই জাহাজটি সেখানে পণ্য খালাসের জন্য গমন করে।”

রাশিয়ার আগ্রাসনের মধ্যে ইউক্রেইনের ওলভিয়া বন্দরে অবস্থানকালে গত ২ মার্চ সন্ধ্যায় রকেট হামলায় বাংলার সমৃদ্ধির ব্রিজ ধ্বংস হয়ে যায়, মৃত্যু হয় থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুরের রহমানের। ক্ষোভ আর উদ্বেগের মধ্যে পরদিন জাহাজটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে ২৮ জন নাবিক ও প্রকৌশলীকে সরিয়ে নেওয়া হয় নিরাপদ স্থানে। হামলার তিনদিন পর তারা ইউক্রেইন সীমান্ত পাড়ি দিয়ে এখন রোমানিয়ায় অবস্থান করছেন।

নাবিক নিহত হওয়ার পর বাংলার সমৃদ্ধির ইউক্রেইন যাওয়া এড়ানো যেত বলে গত ৪ মার্চ সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করে বাণিজ্যিক জাহাজে কর্মরত বাংলাদেশি নাবিকদের সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএমওএ)।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাখাওয়াত হোসাইন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের যে অ্যাসেসমেন্ট, তাতে বাংলার সমৃদ্ধির এ ইউক্রেইন যাত্রা এড়ানো যেত।

“কারণ ইউক্রেইনের পরিস্থিতি একদিনে তৈরি হয়নি। বিভিন্ন দিক থেকে কয়েকদিন আগে থেকেই বলা হচ্ছিল, যুদ্ধ পরিস্থিতি হতে যাচ্ছে। তাই যত এগ্রিমেন্টই থাকুক। চুক্তি বাতিল করে, তুরস্ক থেকেই জাহাজকে ফেরত আনা যেত।”

সার্বিক বিষয়ে বিএসসির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “ওয়ার জোন এলাকা থেকে পরবর্তী বন্দরের জন্য পণ্য বোঝাইকরণ অর্থাৎ ইউক্রেন-ইতালি ভয়েজের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থা (ইউএন, নেটো, আইএমও ইত্যাদি) এবং ফ্ল্যাগ স্টেট কর্তৃক কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিল না।

“এছাড়া উক্ত ভয়েজের জন্য বিধি মোতাবেক ইন্স্যুরেন্স কভারেজ প্রাপ্তি এবং জাহাজের ক্যাপ্টেন কর্তৃক কোনোরূপ বাধা/আপত্তি উত্থাপিত না হওয়ার ফলে চার্টার পার্টি এগ্রিমেন্টের যুদ্ধঝুঁকি সংক্রান্ত ধারার বিধান মোতাবেক ভয়েজ অর্ডার বাতিল করার কোনো রূপ রিজনেবল জাজমেন্ট তৈরি হয়নি।”

এ পরিস্থিতিতে চার্টারের দেওয়া ভয়েজ আদেশ বাতিল করে যুদ্ধঝুঁকি এলাকা থেকে বাংলার সমৃদ্ধিকে ফেরত আসার আইনগত সুযোগ বা এখতিয়ার বিএসসির ছিল না বলে বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়।

বাংলার সমৃদ্ধির মালিকানা বিএসসির হলেও ডেনিশ কোম্পানি ডেলটা করপোরেশনের অধীনে সেটি ভাড়ায় চলছিল। মুম্বাই থেকে তুরস্ক হয়ে ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেইনের ওলভিয়া বন্দরে যায় জাহাজটি।  

ওই বন্দর থেকে সিমেন্ট ক্লে নিয়ে ২৪ ফেব্রুয়ারি ইতালির রেভেনা বন্দরের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা ছিল বাংলার সমৃদ্ধির। কিন্তু ওই দিন ভোরে রাশিয়া ইউক্রেইনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করলে ২৯ জন ক্রু নিয়ে জাহাজটি আটকা পড়ে।

বিএসসি বলছে, “যুদ্ধঝুঁকি এলাকায় কার্গো অপারেশন চলমান ছিল বিধায় সংশ্লিষ্ট পোর্ট অথরিটি বিএসসির জাহাজসহ (বাংলার সমৃদ্ধি) মোট ২১টি জাহাজ একত্রে কনভয় আকারে ইনার অ্যাংকরেজে প্রবেশ করিয়েছে। ইনার অ্যাংকরেজে জাহাজ প্রবেশ করানোর পরপরই যুদ্ধ শুরু হওয়ায় এবং বিএসসির জাহাজ মিসাইল হামলার শিকার হওয়া সংক্রান্ত ঘটনাটি খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত এবং বিএসসি কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত।”

ইউক্রেইনে রাশিয়ার অভিযান শুরু হলে অবিলম্বে লোডিং বাতিল করে বাংলার সমৃদ্ধিকে ওলভিয়া বন্দর ছেড়ে আসার জন্য মাস্টারকে নির্দেশ দেওয়া হয় জানিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “কিন্তু বন্দর কর্তৃক পাইলট সরবরাহ না করা, পোর্ট অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ হওয়া এবং বন্দর চ্যানেলে মাইন পোতার ফলে ওলভিয়া বন্দরে আটকে পড়ে জাহাজটি।”

ডেনিশ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির সময় ইউক্রেইন সংকট যে খুব নাজুক অবস্থায় পৌঁছায়নি সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে বিএসসি বলছে, “আন্তজার্তিক শিপিং নিয়মানুযায়ী ডেনমার্কভিত্তিক চার্টারার ডেলটা করপোরেশন ও বিএসসির মধ্যে তিন মাসের জন্য ২০২২ সালের ১৫ জানুয়ারি চার্টার পার্টি সম্পাদিত হয়।

“ওই চার্টার পার্টি সম্পাদনকালে কোনোরূপ ওয়ার জোন ঘোষণা না থাকায় ইউক্রেইনকে ট্রেডিং এরিয়ার বাইরে রাখা হয়নি।”

সহকর্মী হাদিসুরের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে বিএসসির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “এতে বিএসসি পরিবার খুবই শোকাহত এবং তার আত্মার মাগফেরাত কামনাসহ তার শোকাহত পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করছি।”

বিজ্ঞপ্তিতে হামলার পর জাহাজে অবস্থানরত বাকি নাবিকদের ‘জীবন রক্ষার্থে’ সবার সময়োচিত ও সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে ৩ মার্চ জাহাজটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে নাবিককে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি দেশে প্রত্যাবর্তণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।