মাইনের ভয়, আপাতত ইউক্রেইনেই থাকবে ‘বাংলার সমৃদ্ধি’

গোলার আঘাতে এক সহকর্মীর মৃত্যুর পর ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ ছেড়েছেন বাংলাদেশের নাবিকরা; যুদ্ধক্ষেত্র ইউক্রেইনের ওলভিয়া বন্দরে পড়ে আছে এখন জাহাজটি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 March 2022, 05:25 PM
Updated : 3 March 2022, 06:28 PM

বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাবাহী জাহাজটি পরিত্যক্ত ঘোষণার পর আপাতত ওলভিয়া বন্দর এলাকায়ই থাকবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে একথা জানান তিনি।

তার কয়েক ঘণ্টা আগেই পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জাহাজটি পরিত্যক্ত ঘোষণার কথা জানিয়ে বলেন, জাহাজটিতে বেঁচে থাকা ২৮ বাংলাদেশি কর্মীকে পোল্যান্ডে নেওয়া হচ্ছে।

মাসদ বিন মোমেন বলেন, “জাহাজটি এখন পরিত্যক্ত রেখে আসতে হবে। কারণ সেখানে মাইন পাতা রয়েছে। কাজেই জাহাজটা এখন যেখানে রয়েছে, সেখান থেকে সরানো ঝুঁকিপূর্ণ।”

উইক্রেইনের দক্ষিণাঞ্চলে কৃষ্ণ সাগরের খাঁড়ির ৫০ কিলোমিটারের মতো ভেতরে মিকোলায়েভ শহরে ওলভিয়া বন্দর। ইউক্রেইনের প্রধান জাহাজ নির্মাণ শিল্প সেই এলাকাতেই।

ইউক্রেইনে যেখানে রয়েছে বাংলার সমৃদ্ধি।

ইউক্রেইনে রুশ সামরিক অভিযান শুরুর ঠিক আগে ওই বন্দরে গিয়ে আটকা পড়ে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের জাহাজটি। যুদ্ধের মধ্যে বুধবার জাহাজটিতে রকেট হামলা হলে মারা যান প্রকৌশলী হাদিসুর রহমান।

জাহাজটিও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ২৮ নাবিক ও প্রকৌশলীর সবাইকে সরিয়ে নেওয়া হয়।

গোলার আঘাতে জাহাজের মূল নিয়ন্ত্রণ কক্ষ (নেভিগেশন ব্রিজ) পুরোপুরি বিধ্বস্ত এবং প্রধান বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ে।

এমন পরিস্থিতিতে ডেনমার্কের একটি কোম্পানির অধীনে বাণিজ্যিক পরিবহনে যুক্ত থাকা জাহাজটিকে ওলভিয়া বন্দরেই রাখা হচ্ছে।

বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের জাহাজ বাংলার সমৃদ্ধি। (আগে তোলা ছবি)

বৃহস্পতিবারই নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে জাহাজটি পরিত্যক্ত করার চিঠি পাওয়া গেছে জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “শিপিং মিনিস্ট্রি থেকে চিঠি পেয়েছি, শিপ অ্যাবানডন্ড করার জন্য, এটা একটা আন্তর্জাতিক নিয়ম আছে। এটা আমরা সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দিয়েছি।”

মাইন পাতাসহ বিভিন্ন কারণে কৃষ্ণ সাগরের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বেসামরিক জাহাজ চলাচলে ঝুঁকির বিষয়ে বুধবার সতর্ক করেছিল ন্যাটোর শিপিং সেন্টারও।

ন্যাটো বলেছে, প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনে যুদ্ধের কারণে কৃষ্ণ সাগরের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ইউক্রেইনীয় ও আন্তর্জাতিক জলসীমায় বেসামরিক জাহাজে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ আক্রমণের খবর পাওয়া যাচ্ছে।

“এই এলাকায় বেসামরিক জলযানকে সতর্কতা ও সর্বোচ্চ মাত্রায় হুঁশিয়ার থাকতে বলা হচ্ছে।”

বাংলার সমৃদ্ধিতে থাকা নাবিকরা। ছবি: বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ওলভিয়া থেকে বাংলাদেশি নাবিকদের পোল্যান্ডের ওয়ারশতে নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। নিহত হাদিসুরের লাশও একইসঙ্গে নেওয়া হবে। 

ইউক্রেইন থেকে নাবিকদের উদ্ধারে রাশিয়া সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব।

সে সহযোগিতার ধরন কেমন হবে- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, “জাহাজের নাবিকরা এখন ইউক্রেইনের ভেতরে রয়েছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, দ্রুত ওই এলাকা রাশিয়ানদের দখলে চলে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে রাশিয়ানদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রাখতে হবে।”

বাংলাদেশি জাহাজটিতে কাদের রকেট শেল আঘাত হেনেছে, সে নিয়ে পরস্পরবিরোধী তথ্য পাওয়া যাচ্ছে বিদেশি সংবাদ মাধ্যমে।

 

এনিয়ে প্রশ্নে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, “রাশিয়ানরা জাহাজে হামলা করেছে এমন কোনো শক্ত প্রমাণ কারও কাছেই নেই। রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ আছে এবং তারাও বিষয়টি নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে।

“একটি টার্ম আছে ‘ফগ অফ ওয়ার’ অর্থাৎ যুদ্ধের মধ্যে কে কোন দিক থেকে গোলাগুলি করছে, সেটি বোঝা যায় না।”

জাহাজে থাকা বাংলাদেশি ২৮ নাবিক, প্রকৌশলী, নৌ ক্যাডেট সবাই নিরাপদে আছে বলে জানিয়েছিলেন শাহরিয়ার আলম।

তাদের সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, “আমরা যখন এই মুহূর্তে কথা বলছি, তখন তাদের উদ্ধার করা হচ্ছে।

“এরপর তারা বাংকার বা কোনো নিরাপদ স্থানে যাবেন। সেখান থেকে মলদোভা বা অন্যান্য সীমান্ত এলাকায় যেখানে সুবিধা হয় নেওয়া হবে। কারণ পোল্যান্ডের বর্ডারে বেশ রাশ আছে।”

পোল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নাবিকরা এখন ইউক্রেইনে সেইফ হাউজে আছে। ইউক্রেইন থেকে তাদের বের করা নিয়ে কাজ করছি।”

সীমান্তবর্তী কোন দেশে তাদের প্রথমে ফেরানো হবে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা এখনও এটা নিয়ে কাজ করছি।”

বুধবার পর্যন্ত পোল্যান্ড সীমান্তে ৫৩২ জন বাংলাদেশির পৌঁছনোর কথা জানান রাষ্ট্রদূত। সব মিলিয়ে ইউক্রেইন থেকে সীমান্তবর্তী দেশে ঢোকা প্রবাসীর সংখ্যা ছয়শ’র মতো বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।

এই সম্পর্কিত খবর