সহকর্মীর লাশ সঙ্গে নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের পথে এমভি বাংলার সমৃদ্ধির নাবিকরা

যুদ্ধের মধ্যে ইউক্রেইনের ওলভিয়া বন্দরে রকেট হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশি জাহাজ ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’ পরিত্যাক্ত ঘোষণা করে ২৮ নাবিক ও প্রকৌশলীর সবাইকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 March 2022, 02:27 PM
Updated : 4 March 2022, 02:55 AM

সবাইকে পোল্যান্ডে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে জানিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, আগের দিন হামলায় নিহত জাহাজের প্রকৌশলী হাদিসুরের রহমানের মরদেহও তাদের সঙ্গে রয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাতে এক ভিডিও বার্তায় প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমরা জাহাজের ২৮ জন নাবিককে একটা সেইফ জোনে নিয়েছি। তারা নিরাপদে আছেন এবং তারা তাদের সহকর্মী হাদিসুর রহমানের মরদেহও বহন করছেন। আমরা খুব দ্রুততার সাথে তাদের ওয়ারশ নিয়ে আসার চেষ্টা করছি।

“এবং সেটা নিয়ে আসতে পারলে শিপিং মিনিস্ট্রির সঙ্গে আলোচনা করা হবে। সম্ভবত সকলকেই, মরদেহসহ, বাংলাদেশে দ্রুততম সময়ের মধ্যে পাঠানোর ব্যবস্থা করব। এবং পোল্যান্ডে অবস্থানকালীন সময়ে পোল্যান্ডে হাদিসুরের নামাজে জানাজা করা হবে। লেটেস্টটা হল যে তারা এখন সকলেই নিরাপদে আছেন।”

বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের মালিকানাধীন জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ ইউক্রেইনের ওলভিয়া বন্দরে গিয়ে যুদ্ধের মধ্যে আটকা পড়ে। বুধবার সন্ধ্যার দিকে জাহাজটিতে রকেট হামলা হয়। ক্রুদের চেষ্টায় আগুন নেভানো গেলেও ব্রিজে থাকা জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমানের মৃত্যু হয়।

জাহাজের বাকি নাবিকদের আকুতি আর পরিবারের উদ্বেগের মধ্যে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারছিল না যে কীভাবে তাদের ফিরিয়ে আনা হবে। যুদ্ধের মধ্যে স্থলভাবে যাওয়া নিরাপদ হবে কি না, অথবা আপাতত জাহাজেই তারা থাকবেন কি না, সেসব বিষয় নিয়েও প্রশ্ন ছিল।

কিন্তু রকেটের আঘাতে জাহাজের মূল নিয়ন্ত্রণ কক্ষ (নেভিগেশন ব্রিজ) পুরোপুরি বিধ্বস্ত হওয়ায় এবং প্রধান বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ায় সবাইকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। 

বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে জাহাজ পরিত্যক্ত ঘোষণা করে সবাইকে সরিয়ে নেওয়া হয় বলে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন) ড. পীযূষ দত্ত জানান। 

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “জাহাজের মাস্টার জাহাজটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে আমাদের মেইল দিয়েছেন।”

হাদিসুর রহমানের মরদেহও তাদের সাথে আছে জানিয়ে বিএসসির উপ মহাব্যবস্থাপক (শিপ পারসোনাল) ক্যাপ্টেন আমির মো. আবু সুফিয়ান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তাদের জাহাজ থেকে টাগবোটে করে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পরই তাদের নামানো হয়েছে। এরপর তারা কীভাবে যাবেন, সেটা পোল্যান্ডে আমাদের দূতাবাস নির্ধারণ করবে।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পোল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা হোসেন রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নাবিকরা এখন ইউক্রেইনে সেইফ হাউজে আছে। ইউক্রেইন থেকে তাদের বের করা নিয়ে কাজ করছি।”

ওই বন্দর থেকে মলদোভার দূরত্ব দুইশ কিলোমিটারের বেশি। আর পোল্যান্ডের সবচেয়ে কাছের সীমান্তও অন্তত আটশ কিলোমিটার দূরে।

এ অবস্থায় বাংলাদেশি নাবিকদের কোন পথে ইউক্রেইন থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হবে, তা স্পষ্ট করেননি রাষ্ট্রদূত। 

তিনি বলেন, “আমরা এখনও এটা নিয়ে কাজ করছি। বুধবার পর্যন্ত পোল্যান্ড সীমান্তে ৫৩২ জন বাংলাদেশিকে রিসিভ করা হয়েছে।”

সব মিলিয়ে ইউক্রেইন থেকে প্রতিবেশী কোনো দেশে আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশির সংখ্যা ছয়শর মত বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।

বাংলার সমৃদ্ধির নাবিকদের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তারা বাংকার বা কোনো নিরাপদ স্থানে যাবেন। সেখান থেকে মলদোভা বা অন্য সীমান্ত এলাকায় যেখানে সুবিধা হয় নেওয়া হবে। কারণ পোল্যান্ডের বর্ডারে বেশ রাশ আছে।”

রাতে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের এক ফেইসবুক পোস্টে বাংলার সমৃদ্ধির নাবিকদের টাগবোটে সরিয়ে নেওয়ার ছবি প্রকাশ করে বলা হয়, তারা সবাই ‘সেইফ জোনের’ পথেই রয়েছেন। শুক্রবার চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলন করে তাদের বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করা হবে।  

 

কেন আটকা পড়ল বাংলার সমৃদ্ধি?

এমভি বাংলার সমৃদ্ধির মালিকানা বিএসসির হলেও ডেনিশ কোম্পানি ডেলটা করপোরেশনের অধীনে সেটি ভাড়ায় চলছিল। গত ২৬ জানুয়ারি মুম্বাই বন্দর থেকে রওনা হয়ে তুরস্কের ইরেগলি হয়ে ইউক্রেইনের অলভিয়া বন্দরে পৌঁছায় জাহাজটি।

গত ২৬ জানুয়ারি ভারতের মুম্বাই বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করেছিল বাংলাদেশের পতাকাবাহী ও রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের জাহাজটি। তুরস্কের একটি বন্দরে পণ্য খালাস করে পৌঁছায় ইউক্রেইনের ওলভিয়া বন্দরে।

জাহাজে ২৯ জন বাংলাদেশি নাবিক ও প্রকৌশলী ছিলেন, যাদের মধ্যে দুজন নারী ক্যাডেট। ২২ ফেব্রুয়ারি জাহাজটি ছিল বন্দরের আউটার অ্যাংকরেজে, পরদিন ইনার অ্যাংকরেজে নিয়ে যাওয়া হয়।

ওই বন্দর থেকে সিমেন্ট ক্লে নিয়ে ২৪ ফেব্রুয়ারি ইতালির রেভেনা বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার কথা ছিল বাংলার সমৃদ্ধির। কিন্তু সেদিন ভোরে রাশিয়া ইউক্রেইনে আগ্রাসন শুরু করলে পরিস্থিতি রাতারাতি বদলে যায়।

যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বন্দরের বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তাছাড়া নিরাপত্তার কারণে বন্দর ত্যাগের অনুমতিও দেওয়া হচ্ছিল না বলে মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছিল।

বিএসসির কর্মকর্তারা বলেছিলেন, জাহাজটি যেখানে নোঙ্গর করে হয়েছে সেখান থেকে মূল সাগরে যেতে ৬০ নটিক্যাল মাইল পথ পার হতে হবে এবং সেজন্য স্থানীয় ‘পাইলট শিপ’ দরকার, যে নৌযান পথ দেখিয়ে জাহাজটিকে বের করে নেবে। কিন্তু যুদ্ধের মধ্যে তা পাওয়া যাচ্ছিল না।

তাছাড়া সাগরে মাইন পাতা রয়েছে বলে শোনা যাচ্ছিল। ফলে যুদ্ধের মধ্যে সেখান থেকে বের হওয়ার উপায় ছিল না জাহাজটির।

হামলার পর আতঙ্ক

বুধবার সন্ধ্যায় জাহাজের ব্রিজে একটি রকেট এসে পড়লে বিস্ফোরণে আগুন ধরে যায়। জাহাজে থাকা কর্মীরা আগুন নেভাতে পারলেও প্রাণ যায় থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমানের।

আগুন লাগার খবর পেয়ে দুটো টাগবোট পাঠিয়েছিল বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে তাতে করে নাবিক ও ক্রুদের তীরে সরিয়ে নেওয়া হয়নি।

যুদ্ধের মধ্যে তীরে গেলে আদৌ নিরাপত্তা বা খাবার মিলবে কি না, সে বিষয়ে সংশয় ছিল। তাছাড়া জাহাজে মোটামুটি মাসখানেকের খাবার আর পানি মজুদ থাকায় আপাতত সেখানেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

জাহাজের বাকি ২৮ জন অক্ষত থাকলেও সহকর্মীর মৃত্যু আর জাহাজ আক্রান্ত হওয়ার অভিজ্ঞতায় সবার মনে ভর করে জীবন শঙ্কা। দেশে পরিবারের সদস্যরাও উদ্বেগের প্রহর গুণতে থাকেন।

চিফ ইঞ্জিনিয়ার ওমর ফারুক তুহিন বৃহস্পতিবার সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যে কোনে সময় এখানে আবারও মিসাইল পড়তে পারে। আমাদের লাইফ থ্রেটের মধ্যে আছে।”

জাহাজে থাকা দুই তরুণ ক্যাডেট ফারজানা ইসলাম মৌ এবং ফারিয়াতুল জান্নাত তুলি ফেইসবুকে ভিডিও বার্তায় তাদের উদ্ধারের আকুতি জানান।

উদ্ধারের পথ

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী দুপুরে নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, “নাজুক অবস্থার মধ্যে পড়ে গেছি। জাহাজটি বাণিজ্যিক, বন্দরের চ্যানেলে আটকা পড়েছে। জাহাজের ক্যাপ্টেনের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমরা তাদেরকে সাহস যুগিয়েছি।”

তিনি জানান, জাহাজের সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো হচ্ছে। রাশিয়া ও ইউক্রেইন, আইওএম, রেডক্রসের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হচ্ছে।

তখন পর্যন্ত ২৮ জনের জাহাজে থেকে যাওয়ায়ই নিরাপদ বলে মনে করছিল কর্তৃপক্ষ। নৌ প্রতিমন্ত্রীও বলেছিলেন, “চলমান অবস্থায় আতঙ্ক থাকাটাই স্বাভাবিক। জাহাজ ত্যাগ ও ছেড়ে দেওয়া সম্ভব নয়। তবে জাহাজে নিরাপদ থাকার সম্ভাবনা বেশি।”

আর বিএসসির নির্বাহী পরিচালক পীযূষ দত্ত চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন, যুদ্ধের মধ্যে তাদের তীরে সরিয়ে নিতে হলেও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রয়োজন।

“তীর থেকে যদি নিশ্চয়তা না পাই, তাহলে চট করে তাদের জাহাজ থেকে নামিয়ে দিতে পারি না। আমাদের যারা চেষ্টা করছেন শোরে (তীরে), তাদের কাছ থেকে নিশ্চয়তা পেলে আমরা এ ব্যবস্থাটা নেব।”

কিন্তু ওই জাহাজেও যে থাকার উপায় নেই, তা স্পষ্ট হতে বেশি সময় লাগেনি। রকেট হামলায় জাহাজের ক্ষয়ক্ষতির একটি চিত্র পাওয়া যায় ফেইসবুকে প্রকাশিত একটি ভিডিও থেকে।

সেখানে দেখা যায়, নেভিগেশন ব্রিজ, এআইএস, রেডারসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। জাহাজের ইঞ্জিনের তাপ-চাপ, পানির গভীরতাসহ বিভিন্ন তথ্য পাওয়ার মিটারগুলোও ভেঙে গেছে।

জাহাজের এক কর্মী ফেইসবুকে জানান, জাহাজে কোনো ‘পাওয়ার সাপ্লাই’ নেই। অর্থাৎ জাহাজের মূল বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। কাজ চলছে ইমারজেন্সি জেনারেটর দিয়ে।

ইউক্রেইনে রাত নামার আগেই জাহাজ থেকে নাবিকদের সরিয়ে নেওয়ার খবর আসে।

রাশিয়ার শোক, আশ্বাস

যুদ্ধের মধ্যে কোন পক্ষের ছোড়া রকেটে বাংলাদেশি মেরিন ইঞ্জিনিয়ারের প্রাণ গেল, সেই দায় কেউ স্বীকার করেনি। বাংলাদেশের কর্মকর্তারাও বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন।

ইউক্রেইনের গণমাধ্যম ওই হামলার জন্য রাশিয়াকেই দায়ী করেছে। আর রাশিয়া স্বীকার কিংবা অস্বীকার না করে বলেছে, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ঢাকার রুশ দূতাবাস থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে প্রকৌশলী হাদিসুর রহমানের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়।বলা হয়, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের আটকে পড়া জাহাজটির ‘নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের জন্য’ রাশিয়া সব ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে।

রাশিয়া কী ধরনের সহযোগিতা দিয়েছে বা দিচ্ছে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জাহাজের নাবিকরা এখন ইউক্রেনের ভেতরে রয়েছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি দ্রুত ওই এলাকা রাশিয়ানদের দখলে চলে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে রাশিয়ানদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রাখতে হবে।”

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “রাশিয়ানরা জাহাজে হামলা করেছে এমন কোনো শক্ত প্রমাণ কারও কাছেই নেই। রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ আছে এবং তারাও বিষয়টি নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে।

”একটি টার্ম আছে- ‘ফগ অফ ওয়ার’ অর্থাৎ যুদ্ধের মধ্যে কে কোন দিক থেকে গোলাগুলি করছে সেটি বোঝা যায় না।”

এই বিপদ এড়ানো যেত?

নাবিকদের উদ্ধার করে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার প্রথম ধাপ শুরু হলেও পরিত্যক্ত বাংলার সমৃদ্ধি আপাতত ওলভিয়া বন্দরের ওই এলাকাতেই থাকবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।

তিনি বলেছেন, “জাহাজটি এখন পরিত্যক্ত রেখে আসতে হবে। কারণ সেখানে মাইন পাতা রয়েছে। কাজেই জাহাজটা এখন যেখানে রয়েছে সেখান থেকে সরানো ঝুঁকিপূর্ণ।”

ইউক্রেইন ঘিরে উত্তেজনা চলছিল গত সাড়ে তিন মাস ধরেই। সেটা যুদ্ধে গড়ানোর শঙ্কাও ষোল আনাই ছিল। তাহলে বাংলার সমৃদ্ধি কেন সেখানে গেল, সেই প্রশ্ন রাখা হয়েছিল বিএসসি কর্মকর্তা পীযূষ দত্তের কাছে।

উত্তরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিএসসির কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে এমভি বাংলার সমৃদ্ধি পরিচালনা করছে ডেনিশ কোম্পানি ডেলটা করপোরেশন। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী তাদের কথাতেই চলতে হবে। 

 “আমাদের যে চার্টার পার্টি আছে, সে অনুযায়ী ইন্স্যুরাররা যদি ওয়ার রিস্ক প্রিমিয়াম নিয়ে কোথাও যাওয়ার পারমিশন দেয়, সেক্ষেত্রে আমাদের চার্টার পার্টি অনুযায়ী সেটা অ্যালাউ করতে হয়। আমাদের যেমন লিবিয়াতে বা পারস্য উপসাগরে বিভিন্ন সময় এরকম পরিস্থিতি হয়। সেসব ক্ষেত্রেও ওয়ার রিস্ক প্রিমিয়াম নিয়ে চার্টার পার্টি অনুসারে সেগুলো অ্যালাউ করতে হয়।”

বাংলার সমৃদ্ধির আশেপাশে আরও গোটা বিশেক জাহাজ আছে জানিয়ে তিনি বলেন, “কনডিশন ফুলফিল করেই সেখানে যাওয়া হয়েছে। কোনো ব্যত্যয় হয়নি।”

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে পীযূষ দত্ত বলেন, “যদি জাহাজ সেখানে যাওয়ার আগেই যুদ্ধ শুরু হয়ে যেত, তাহলে ক্যাপ্টেন চাইলে ফিরে আসতে পারতেন। কিন্তু যুদ্ধ শুরু হয় তারা সেখানে পৌঁছানোর পরে।”

তবে এটা এড়ানো যেত বলেই মনে করছেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মেরিন ইঞ্জিনিয়ার মো. সাখাওয়াত হোসাইন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “কয়েক দিন আগে থেকেই বলা হচ্ছিল যুদ্ধ পরিস্থিতি হতে যাচ্ছে। তাই যত এগ্রিমেন্টই থাকুক। চুক্তি বাতিল করে, তুরস্ক থেকেই জাহাজকে ফেরত আনা যেত।”

মেরিনারদের উন্নয়ন সংগঠন ‘অঙ্গীকার বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন’ এর প্রেসিডেন্ট সিনিয়ার মেরিনার ক্যাপ্টেন আতিক খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা যতটুকু জেনেছি, “১৫ ফেব্রুয়ারি সেখানে ওয়ার জোন ঘোষণা করা হয়। এরপর কেন জাহাজ সেখানে গেল? নাবিকদের জীবনের কী মূল্য নেই?”