প্রবাসে খুন: চট্টগ্রামে ‘ব্লাডমানি’ দিয়ে মৃত্যুদণ্ড মওকুফের উদ্যোগ

আবু ধাবিতে চট্টগ্রামের এক প্রবাসী শ্রমিককে হত্যার ঘটনায় ‘ব্লাড মানি’ বা ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে একই জেলার আরেক শ্রমিকের মৃত্যুদণ্ড ‘মওকুফের’ জন্য দুই পরিবারের মধ্যে সমঝোতার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

উত্তম সেন গুপ্তবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Sept 2021, 12:34 PM
Updated : 13 Sept 2021, 12:49 PM

সংসারের হাল ধরতে চট্টগ্রাম থেকে প্রবাসে পাড়ি জমিয়েছিলেন মোহাম্মদ সোহেল ও মো. হাসান। দুজনের মধ্যে বিতণ্ডার জেরে ২০১৪ সালের ২৯ মে হাসানের ছুরিকাঘাতে খুন হন সোহেল।

আবুধাবিতে ভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করলেও তারা থাকতেন একই বাসায়। সোহেলের বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগড়া উপজেলার আধুনগরে আর হাসানের বাড়ি ফটিকছড়ি উপজেলার সুন্দরপুরে।

সাত বছর আগের এ হত্যাকাণ্ডের দায়ে হাসানকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আবুধাবির আদালত। দেশটির উচ্চ আদালতে আগামী ৪ অক্টোবর মামলাটির পরবর্তী শুনানির দিন রয়েছে।

বাংলাদেশের কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের কর্মকর্তারা জানান, আবুধাবির বিচার সম্পন্ন হয়েছে শরিয়া আইনে। সে অনুযায়ী সোহেলের পরিবার যদি ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে হাসানকে ক্ষমা করে দেয়, তাহলে তার মৃত্যুদণ্ড মওকুফ হবে।

গত ৩০ অগাস্ট আবুধাবির বাংলাদেশ দূতাবাস চিঠি দিয়ে জানায়, আইন অনুযায়ী সোহেলের পরিবার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর চায়, না কি শর্তের বিনিময়ে হাসানকে ক্ষমা করে দেবে- সেটা আগামী ৪ অক্টোবর আদালতকে জানাতে হবে।

এ বিষয়ে দুই পরিবারের বক্তব্য ৪ অক্টোবরের আগে দূতাবাসকে জানানোর জন্য চিঠিতে অনুরোধ করা হয়।

চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল আলম মজুমদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দূতাবাসের চিঠি পেয়ে আমরা দুই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। স্থানীয় চেয়ারম্যান দুই পরিবারের মধ্যে মধ্যস্থতার দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছেন। সমঝোতা হলে কয়েক দিনের মধ্যে নির্দিষ্ট পরিমাণ ব্লাড মানির বিনিময়ে দুই পরিবার বিষয়টি সমাধা করে নেবে।”

তিনি জানান, সমঝোতার কাগজপত্র পররাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয় হয়ে কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ের মাধ্যমে দূতাবাসে পাঠাতে হবে। আইনজীবীর মাধ্যমে সে দেশের আদালতে সমঝোতার কাগজ জমা দেবে দূতাবাস।

“আদালত এরপর হাসানের মৃত্যুদণ্ড রহিত করে সাধারণ সাজা দেবে,” বলেন জহিরুল আলম।

তবে এ হত্যাকাণ্ডের বর্ণনায় দুই পরিবারের পক্ষ থেক আলাদা বক্তব্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের কর্মকর্তারা।

সোহেলের বাবা তোফায়েল আহমেদ জানান, মৃত্যুর ছয়/সাত বছর আগে তার ছেলে শ্রমিক ভিসা নিয়ে আবু ধাবি যান। সোহেল ও হাসান ভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলেও ছয়/সাতজন মিলে তারা এক বাসায় থাকতেন।

তবে কখন তার ছেলে বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন এবং কোথায় চাকরি করতেন সে বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু জানাতে পারেননি তোফায়েল আহমেদ।

তিনি দাবি করেন, একটি ব্যাগ হারানো নিয়ে হাসানের সঙ্গে সোহেল এবং বাসার অন্যদের ঝগড়া হয়। পরে সোহেলসহ বাকি সবাই হাসানকে ২০১৪ সালের ৩১ মের মধ্যে ঘর ছেড়ে চলে যেতে বলেন।

এতে ‘নাখোশ’ হয়ে ২৯ মে হাসান ছুরিকাঘাত করে সোহেলকে খুন করেন বলে তার বাবা তোফায়েল আহমেদের দাবি।

তবে হাসানের ভাই মো. ইদ্রিস বলছেন, পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।

তিনি জনশক্তি অফিসের কর্মকর্তাদের বলেছেন, হাসান টাকা ধার দিয়েছিলেন সোহেলকে। সেই পাওনা টাকা নিয়ে দুজনের মধ্যে ঝগড়া হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে হাসান ছুরিকাঘাত করে। 

উপ-পরিচালক জহিরুল বলেন, “এর আগেও এ ধরনের ১২টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন ভিনদেশিও ছিলেন। এ ধরনের ঘটনা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে। আমরা চাই এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে।”

এ বিষয়ে দুই পরিবারের কোনো সদস্যের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।