রোববার নগরীর দেওয়ানজি পুকুর পাড়ে পূর্ণেন্দু দস্তিদারের পৈত্রিক নিবাসে গিয়ে সিপিবি নেতারা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
সিপিবি চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক অশোক সাহা বলেন, “বিপ্লবী পূর্ণেন্দু দস্তিদার ছিলেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামের সাহসী যোদ্ধা মাস্টারদা সূর্য সেনের সাথী। তিনি আইয়ুব স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে কারা নির্যাতন ভোগ করেছেন। সারাজীবন তিনি দেশের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করে গেছেন।”
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে সীমান্ত অতিক্রমের সময় ১৯৭১ সালের ৯ মে অসুস্থ হয়ে পথেই মারা যান ষাটোর্দ্ধ পূর্ণেন্দু দস্তিদার।
দীর্ঘকাল কারা নির্যাতিত পূর্ণেন্দু দস্তিদার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও জননেতা ছিলেন।
শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় উপস্থিত ছিলেন সিপিবি নেতা ফরিদুল ইসলাম, অজয় সেন, অজিত দাশ, অমিতাভ সেন, পূর্ণেন্দু দস্তিদারের ভাইয়ের মেয়ে শিখা দস্তিদার, প্রিয়ঙ্কা সেনগুপ্ত প্রমুখ।
এ সময় মুষ্টিবদ্ধ হাতে সবাই দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করে পূর্ণেন্দু দস্তিদারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন।
১৯২৫ সালে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে এন্ট্রান্স এবং ১৯২৭ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে আইএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন পূর্ণেন্দু।
চট্টগ্রামের তরুণদের বিপ্লবের প্রতি আকর্ষণে কাজ করেছেন দিনের পর দিন। এই অঞ্চলের বিপ্লবী দলে কল্পনা দত্ত ও প্রীতিলতাসহ নারীদের সংগঠিত করেন তিনি।
যাদবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হলেও সূর্যসেনের সহযোগী হিসেবে কলকাতায় গ্রেপ্তার হলে তার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার ইতি ঘটে।
বন্দি অবস্থায় ১৯৩৪ সালে তিনি বিএ পাস করেন। পরে আইনের ডিগ্রিও পান। ১৯৪০ সালে ব্রিটিশ ভারতের কারাগার থেকে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।
১৯৪৮ সালে পূর্ববঙ্গ কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হওয়ার পর আবারও গ্রেপ্তার হন পূর্ণেন্দু। জেলে থাকা অবস্থাতেই তিনি ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে পূর্ববঙ্গ আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। পরের বছর তিনি মুক্তি পান।
কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ থাকায় পূর্ণেন্দু দস্তিদার ১৯৫৭ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে (ন্যাপ) যোগ দেন। ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারি হলে তিনি আবারও গ্রেপ্তার হন এবং ১৯৬২ সালে ছাড়া পান।
১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় তাকে আবার গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৬৯ সালে গণআন্দোলনের প্রেক্ষাপটে তিনি মুক্তি পান।
চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ নিয়ে পূর্ণেন্দু দস্তিদার রচিত ‘স্বাধীনতা সংগ্রামে চট্টগ্রাম’ ও ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা’ গ্রন্থ দুটি এখনো সমাদৃত।
তার বড় ভাই অর্ধেন্দু দস্তিদার চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের সময় জালালাবাদ পাহাড়ের যুদ্ধে শহীদ হন।