চবির সাবেক ভিসিকে ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ পদবি ব্যবহারে মানা

শিক্ষকদের আপত্তির পরও ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’-এর দায়িত্ব নেওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীকে সম্মানজনক এই পদবি ব্যবহার না করার নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Feb 2020, 07:21 AM
Updated : 11 Feb 2020, 07:23 AM

মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কে এম নুর আহমদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উপাচার্যের আদেশক্রমে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীকে বঙ্গবন্ধু চেয়ার পদবী ব্যবহার না করতে অনুরোধ করা হয়েছে।”

এ বিষয়ে সোমবার ইফতেখার উদ্দিনকে নোটিসও দেওয়া হয়েছে।

নোটিসে বলা হয়েছে, “চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু চেয়ার পদের নীতিমালা প্রণয়নে প্রাক্তন উপাচার্য মহোদয় গৃহীত ব্যবস্থা অনুমোদন সংক্রান্ত রিপোর্ট এখনো একাডেমিক কাউন্সিলে অনুমোদন হয়নি।

“উক্ত পদে নিয়োগ প্রদান সংক্রান্ত গৃহীত ব্যবস্থা অনুমোদন সংক্রান্ত সিন্ডিকেট সিদ্ধান্তটি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এমতাবস্থায় বর্ণিত বিষয়ে একাডেমিক কাউন্সিল কর্তৃক সিদ্ধান্ত না দেওয়া পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু চেয়ার পদবি ব্যবহার না করার জন্য আদেশক্রমে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।”

এ বিষয়ে জানতে অধ্যাপক ইফতেখারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

কয়েকজন সিন্ডিকেট সদস্য এবং উপ-উপাচার্যর আপত্তি সত্ত্বেও গত বছরের ৭ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’র দায়িত্ব নেন তখনকার উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী।

বিশিষ্টজনদের নামে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে 'চেয়ার অধ্যাপক' পদ রয়েছে। শিক্ষা ও গবেষণার প্রসারে এসব পদে সম্মানিত ব্যক্তিরা নিয়োগ পান। যেখানে নিয়োগপ্রাপ্ত অধ্যাপক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণা করে থাকেন। বাংলাদেশের উন্নয়ন, রাজনীতি, ইতিহাস প্রভৃতি বিষয়ে অধ্যাপক সমমর্যাদাসম্পন্ন একজন বিশিষ্ট গবেষক এ চেয়ারে নিয়োগ পেয়ে থাকেন।

তিনি অধ্যাপকের সমান বেতন-ভাতা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকার সুবিধা পান। এক বছরের মেয়াদ হলেও ক্ষেত্র বিশেষে তা দু'বছর করার সুযোগ রয়েছে।

২০১৮ সালের ২৭ অগাস্ট সিন্ডিকেট সভায় ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ নিয়ে নির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়। এরপর গতবছরের ৩ জানুয়ারি নির্বাহী কমিটির প্রথম সভায় এই পদ সৃষ্টি এবং এ সংক্রান্ত নীতিমালা অনুমোদন দেওয়া হয়।

একই দিন চার বছরের জন্য উপাচার্যকে এ পদে নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশও করা হয়। পরে গতবছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি কমিটির দ্বিতীয় সভায় একজন সদস্যের আপত্তির পরও উপাচার্যকে ওই পদে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়।

ইফতেখার উদ্দিনের ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’র মনোনয়ন সম্পর্কে তখনকার উপ-উপাচার্য শিরীন আখতার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, উপাচার্যের এ চেয়ারে মনোনীত হওয়ার প্রক্রিয়াটি নিয়ম বহির্ভূত হওয়ায় তিনি ৫২০তম সিন্ডিকেটে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধু চেয়ার অনুমোদনের ব্যাপারে একাডেমিক কাউন্সিল সুপারিশ করেছে। কিন্তু ওই চেয়ারের নীতিমালা তৈরি হওয়ার পর একাডেমিক কাউন্সিলের কোনো মতামত না নিয়ে রিপোর্ট আকারে সিন্ডিকেটে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সুতরাং বিষয়টি যথাযথ প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়নি।”

ইফতেখার উদ্দিনের পর শিরীন আখতারই এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্বে আছেন।

ইফতেখার উদ্দিনের ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’র দায়িত্ব নেওয়ার দুইদিন পর এ ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দেন সিনেটের আটজন শিক্ষক প্রতিনিধি। বিবৃতিতে তারা উপাচার্যের বিরুদ্ধে ‘ক্ষমতার অপব্যবহারের’ অভিযোগ তোলেন।

পরদিন ইফতেখার উদ্দিন ওই আট শিক্ষকের কয়েকজনের বিরুদ্ধে গবেষণা জলিয়াতিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার পাল্টা অভিযোগ তোলেন।