গভীর রাতে ‘হাতকড়া লাগিয়ে গাছে বেঁধে পিটিয়ে মেরেছেন’ এসআই পারভেজ

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে মোবাইল চোর সন্দেহে যুবককে পিটিয়ে মারার ঘটনায় পুলিশের এসআই ইকবাল পারভেজ রায়হানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে নিহতের পরিবার।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Oct 2019, 04:40 PM
Updated : 23 Oct 2019, 04:59 PM

নিহত এজাহার মিয়ার ভাই আলমগীর হোসেন মানিকের করা মামলায় বলা হয়েছে, সোমবার রাত ২টার দিকে নিজের বাড়িতে তার ভাইকে হাতকড়া পরিয়ে উঠানের আমগাছের সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে মারধর করেছিলেন এসআই পারভেজ ও তার ভাই ইমতিয়াজ আরমান।

মারধরের পর ভোর ৬টার দিকে স্বজনদের সঙ্গে এজাহারকে গাড়িতে করে নিয়ে নামিয়ে দেওয়া হয় সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারি-হাটহাজারি লিঙ্ক রোডের পাশে। পরে সেখান থেকে তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। 

মঙ্গলবার সকালে সীতাকুণ্ডের একটি শিপ-ইয়ার্ডের শ্রমিক এজাহার মিয়া (২৭) নিহতের খবর পেয়ে তার লাশ উদ্ধারের পাশাপাশি এসআই পারভেজ (৩৬) ও তার ভগ্নিপতি মিজানুর রহমানকে আটক করে পুলিশ। পারভেজ পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্সে দায়িত্বরত ছিলেন।

এ ঘটনায় বুধবার সকালে এজাহারের বড় ভাই আলমগীর হোসেন মানিক বাদী হয়ে সীতাকুণ্ড থানায় মামলাটি করেন। তাতে এসআই পারভেজ ও তার ভগ্নিপতি মিজানুরের সঙ্গে পারভেজের ছোট ভাই ইমতিয়াজ আরমানকে (২৬) আসামি করা হয়েছে।

সীতাকুণ্ড থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শামীম শেখ জানান, পারভেজ ও মিজানুরকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আর ইমতিয়াজকে ধরতে তৎপরতা চলছে।

মামলায় বলা হয়, গত ৯ অক্টোবর ভাটিয়ারি-হাটহাজারি লিঙ্ক রোডে এসআই পারভেজ নিহত এজাহারকে পথরোধ করে তাদের বাসা থেকে ‘কেন মোবাইল চুরি করেছে’ জানতে চান এবং এজাহার তা অস্বীকার করায় তাকে চড়-থাপ্পর দেন। এ সময় পারভেজ এজাহারকে তার মা-বাবাকে খবর দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে তার কাছে যেতে বলেন।

এরপর এজাহারের শ্বশুর, শাশুড়ি এসআই পাভেজের জিম্মায় তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে এজাহারকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান। 

সোমবার সন্ধ্যায় এজাহারের শ্বশুর, শাশুড়ি স্থানীয় এক গ্রাম পুলিশ সদস্যকে নিয়ে এসআই পাভেজের বাসায় তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র ফেরত আনতে যান। এ সময় মিজানুর রহমান এসআই পারভেজ বাসায় নেই জানালে তারা তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র ফেরত পেতে চান। তখন মিজান এসআই পারভেজের সাথে যোগাযোগ করে রাতে তাদের বাসায় যেতে বলেন।

“রাত ২টার দিকে এজাহারকে নিয়ে তার শ্বশুর, শাশুড়ি ও খালা শ্বশুর পারভেজের কাছে গেলে তিনি এজাহারের হাতে হ্যান্ডকাপ লাগিয়ে উঠানে আমগাছের সাথে রঁশি দিয়ে বেঁধে মারধর করেন।

“শ্বশুর, শাশুড়ির সামনেই এসআই পারভেজ ও তার ছোট ভাই ইমতিয়াজ আরমান এজাহারকে লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকেন এবং গেইটে মিজানুর রহমান পাহারায় থাকেন। সারা রাত মারধর করে ভোর ৬টার দিকে এসআই পারভেজ তার ব্যক্তিগত গাড়িতে করে এজাহারকে তার শ্বশুর, শাশুড়ি ও খালাশ্বশুরকে নিয়ে ভাটিয়ারি-হাটহাজারি লিঙ্ক রোডে রেল লাইনের পাশে নামিয়ে দিয়ে রিকশা ডেকে বাড়িতে দিয়ে যেতে বলেন।”

এরপর এজাহারকে স্থানীয় বিএসবিএ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।

এদিকে বুধবার বিকালে এসআই পারভেজ রায়হান ও মিজানুর রহমানকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ।

জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জয়ন্তী রানী রায় তাদের কারাগারে পাঠিয়ে বৃহস্পতিবার রিমান্ড শুনানির দিন রেখেছেন বলে আদালত পুলিশের পরিদর্শক আব্দুল খালেক জানান।