মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের হিসেবে দাবি করা সংগঠনটির নেতাদের কয়েকজন সরকার সমর্থক ছাত্রলীগের স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
সংগঠনটির সভাপতি পদে রয়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাবেক কার্যকরী সদস্য আব্দুর রহিম শামীম। আর নগর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক রাহুল দাশ সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক।
মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজ সংলগ্ন জিয়া স্মৃতি জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচির ডাক ছাত্র ফোরাম।
সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে চট্টগ্রাম-৯ আসনের সাংসদ মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল জিয়া স্মৃতি জাদুঘরের নাম পাল্টে ‘মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর’ করার প্রস্তাব করেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
নওফেলের প্রস্তাবের পক্ষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বৈঠকে বক্তব্য রাখেন এবং প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাবে নীতিগত সমর্থন দেন বলে গণমাধ্যমের খবর।
ওই প্রস্তাবের একদিন পরই জাদুঘরের নামফলক থেকে জিয়ার নাম মুছে দেওয়া হল।
ছাত্র ফোরামের সভাপতি আব্দুর রহিম শামীম মানববন্ধন চলাকালে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন।
সমাবেশ সঞ্চালনা করেন নগর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক রাহুল দাশ। বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মহানগরের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফফর আহমদ। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কমান্ড এবং দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।
জাদুঘরের নামফলক থেকে জিয়ার নাম মুছে ফেলার বিষয়ে রাহুল দাশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখানে জিয়ার নাম থাকুক তা আমরা চাই না। কালি দিয়ে তাই নামফলক থেকে নামটা মুছে দিয়েছি।
রাহুল দাশ বলেন, জিয়াউর রহমান ইতিহাসের একজন বির্তকিত ব্যক্তি। এখানে উনার তেমন কোনো স্মৃতি নেই। ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে এখানেই (তৎকালীন চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজ প্রাঙ্গন) প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।
“মুক্তিযুদ্ধের সময় এখানে অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে আটকে রেখে নির্যাতন করা হত। চট্টগ্রামের এই পুরনো সার্কিট হাউজ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের স্মৃতি বিজড়িত। তাই এর নাম মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর হওয়াই যুক্তিযুক্ত।”
শতবর্ষী চট্টগ্রামের প্রথম সার্কিট হাউজে অবস্থানকালে ১৯৮১ সালের ৩০ মে রাতে একদল সেনা সদস্যের হাতে নিহত হন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। ১৯৯১ সালে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি ক্ষমতা আসার পর ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর এখানে জিয়া স্মৃতি জাদুঘর উদ্বোধন করা হয়।
জাদুঘরে জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন নমুনা, তার ব্যক্তিগত ব্যবহারের সামগ্রী, কিছু চিত্রকর্ম এবং মুক্তিযুদ্ধের সময়ে কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রের ট্রান্সমিশন যন্ত্রটি সংরক্ষিত আছে।
পরে এর পাশেই বর্তমান সার্কিট হাউজটি নির্মাণ করা হয়। নতুন সার্কিট হাউজ ভবনটি এখন বিভিন্ন সরকারি ও দাপ্তরিক কাজে ব্যবহৃত হয়।
মঙ্গলবারের সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধের সন্তান কমান্ডের সারোয়ার জাহান মনি, কামরুল হুদা পাভেল ও সরোয়ার জাহান, নগর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি একরামুল হক রাসেল ও মোসরাফুল হক পাভেল, দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী সুমন এবং সাংগঠনিক সম্পাদক শাহদাত হোসেন মানিক।