‘নিরাপদ অভিবাসনে প্রশিক্ষণ ছাড়া বিদেশে নয়’

আগামীতে প্রশিক্ষণ ছাড়া বিদেশে যাওয়ার সুযোগ থাকছে না জানিয়ে বৈদেশিক কর্মসংস্থানে প্রশিক্ষণ গ্রহণে মত দিয়েছেন অভিবাসন নিয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের আলোচকরা।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Nov 2018, 04:51 PM
Updated : 20 Nov 2018, 04:51 PM

মঙ্গলবার কারিতাস চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ে আয়োজিত ‘নিরাপদ অভিবাসন: সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে বলা হয়, ২০২১ সালের পর অপ্রশিক্ষিতদের ক্ষেত্রে আর বিদেশ যাওয়ার সুযোগ থাকছে না। 

জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক জহিরুল আলম মজুমদার বলেন, “গত অক্টোবর মাস পর্যন্ত বৈধভাবে বিশ্বের ১৬৫টি দেশে এক কোটি ২০ লাখ বাংলাদেশি কর্মী গেছেন। অবৈধসহ এ সংখ্যা প্রায় দুই কোটি হবে।”

আগামীতে সুশৃঙ্খল, নিরাপদ এবং নিয়মিত অভিবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে বলে মত দেন তিনি।

এই উদ্দেশ্যে সরকার দেশে ৪০০টি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ (টিটিসি)স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে জানিয়ে জহিরুল বলেন, “ছয় মাস থেকে দুই বছর মেয়াদের প্রশিক্ষণ নিয়ে তারপর বিদেশে যেতে হবে।”

প্রয়োজনীয় তথ্য না থাকায় বিদেশে যেতে আগ্রহীরা নানা রকম সঙ্কটে পড়েন উল্লেখ করে তাদের সহযোগীতায় হটলাইন সেবা চালু প্রসঙ্গে তিনি বলেন,  “প্রবাস বন্ধু কল সেন্টার চালু হয়েছে। হটলাইন ৩৩৩ -তেও মাইগ্রেশন যোগ করা হচ্ছে।”

বাংলাদেশ-কোরিয়া কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চট্টগ্রামের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী মো. নজরুল ইসলাম বলেন, “মধ্যপ্রাচ্যে সুযোগ সংকুচিত হচ্ছে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে যদি মধ্যপ্রাচ্য থেকে অন্য দেশের দিকে আমরা না যাই তাহলে বিপদ হবে।”

নজরুল বলেন, “জাপান ও কোরিয়া লোক নিচ্ছে। তবে অবশ্যই দক্ষ ও প্রশিক্ষিত লোক। সরকার বৈদেশিক কর্মসংস্থানে আগ্রহীদের জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু বিদেশ যেতে আগ্রহীরা তা জানেন না এবং জানলেও এতে আগ্রহ কম।”

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক চট্টগ্রামের ব্যবস্থাপক সুমন কান্তি দেব বলেন, “যারা বিদেশে যাচ্ছেন তারা জানেন না তাদের সুরক্ষার জন্য কী সুবিধা আছে, কোথায় পাওয়া যাবে।

অনেকে চড়া সুদে ব্যক্তিগতভাবে ঋণ নিয়ে বিদেশে যান; এটা দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন তিনি। 

“আমাদের ব্যাংক থেকে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের জন্য ঋণ প্রদান এবং বিদেশ ফেরতদের জন্যও ঋণের সুযোগ আছে।”

স্বাস্থ্য পরীক্ষার ফলাফলে অনেকে বিদেশ গমনে বা বিদেশে গিয়ে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন উল্লেখ করে   গামকা চট্টগ্রাম অঞ্চলের জিএম নজরুল ইসলাম মামুন বলেন, “চট্টগ্রামে ১২টি প্রতিষ্ঠান বিদেশ যেতে ইচ্ছুকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার সেবা দিয়ে থাকে। অনেক সময় নানা অভিযোগ আসে, সেগুলো দালালরা করে।

“ক্যালসিফিকেশন (ফুসফুসে দাগ) নিয়ে বেশি অভিযোগ আসে বিদেশযাত্রীদের পক্ষ থেকে। এটা মধ্যপ্রাচ্যে বড় করে দেখে। আমাদের দেশের রোগ নির্ণয় কেন্দ্রে এটাকে রোগ হিসেবে দেখা হয় না। দীর্ঘদিনের ঠাণ্ডা বা ধূমপানের কারণে ক্যালসিফিকেশন হয়ে থাকে।”

তিনি বলেন, সব জেলা থেকেই এ ধরনের অভিযোগ আসছে।

“কেউ স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য গেলে আগে থেকেই এসব নির্দেশনা দেওয়া উচিত, সেটা করা হয় না। প্রাক বর্হিগমন প্রশিক্ষণে আমরা বিষয়গুলো অর্ন্তভূক্ত করতে চাই।”

প্রধান অতিথি চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, “সময়ের সাথে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের ধরনের পরিবর্তন আসছে। তাই প্রশিক্ষণের ওপর অবশ্যই জোর দিতে হবে।

“সরকার প্রশিক্ষিত কর্মী তৈরিতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। বিদেশে যেতে ইচ্ছুকরা প্রশিক্ষণ নিলে প্রবাসে শ্রমের মূল্য পাবেন এবং ভালো থাকবেন। প্রবাসীরা যাতে বিদেশে দূতাবাসগুলোতে গিয়ে ভোগান্তিতে না পড়েন সেজন্যও নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।”

কারিতাসের আঞ্চলিক পরিচালক জেমস গোমেজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কারিতাস চট্টগ্রাম অঞ্চলের চ্যাপলিন ফাদার গর্ডোন ডায়েস, বিভাগীয় কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক মহেন্দ্র চাকমা, প্রবাস ফেরত তৌহিদুল আমিন, জাহাঙ্গীর আলম, কাজী মো. রুহুল আমিন, মামুনুর রশিদ এবং মো. সাইফুদ্দিন।