এইচএসসির ফলে বিজ্ঞানে পিছিয়ে চট্টগ্রাম

পাসের হার কিছুটা বাড়লেও চট্টগ্রাম বোর্ডে এবার এইচএসসিতে কমেছে বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার, যা অতীতে কখনও ঘটেনি বলে জানিয়েছেন বোর্ড কর্মকর্তারা।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 July 2018, 06:27 PM
Updated : 19 July 2018, 06:27 PM

বৃহস্পতিবার দুপুরে ফলাফল ঘোষণার পর চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাহবুব হাসান সাংবাদিকদের বলেন,  “চট্টগ্রামে বোর্ডে আগে বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার এত কমেনি।

“প্রতি বছর বিজ্ঞান বিভাগের পাসের হার না বাড়লেও স্থিতিশীল থাকত। কিন্তু এবার তা কমে গেছে তিন শতাংশের বেশি।”

গত বছর বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ছিল ৭৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ, এবছর ৭৩ দশমিক ১১।

পাসের হার কমার জন্য বোর্ড কর্মকর্তারা পদার্থ ও রসায়ন বিদ্যার খারাপ ফলাফলকে দায়ী করছেন। 

মাহবুব হাসান জানান, পদার্থবিদ্যা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রে গত বছর পাসের হার ছিল যথাক্রমে ৬৪ দশমিক ৭৩ ও ৯০ দশমিক ৯৩। এবছর তা হয়েছে ৭২ দশমিক ৩৬ ও ৭৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

রসায়নে গত বছর পাসের হার ছিল ৯২ দশমিক ৬৪ ও ৮৬ দশমিক ১৪; যা এবছর হয়েছে ৮৬ দশমিক ১২ ও ৮৫ শতাংশ।

গত এপ্রিল ও মে মাসে অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষায় রসায়ন ও পদার্থবিদ্যা পরীক্ষার প্রশ্ন নিয়ে অনেক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করলেও এ দুটি বিষয়ে পরীক্ষার্থীদের ‘কম’ প্রস্তুতি  থাকায় ফলাফল খারাপ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাহবুব।

তিনি বলেন, “অনেকেই বলেছেন পদার্থ ও রসায়ন পরীক্ষার প্রশ্ন কঠিন হয়েছে। তবে আমি বলব পরীক্ষার প্রশ্ন যে কোনো রকম হতে পারে।”

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন,  “আগের বছরগুলোতে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ইংরেজি ও আইসিটি বিষয়ে ভালো করলেও ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিষয় দুটিতে খারাপ করত।

“তবে এবছর তারা এই দুই বিষয়ে ভালো ফলাফল করায় পাসের হার বেড়েছে ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিকে।”

 ইংরেজি বিষয়ে গত বছর মানবিকে পাসের হার ছিল ৪৭ দশমিক ৬৪, এবছর ৬৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ। ব্যবসায় শিক্ষায় ছিল ৬৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ, যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৪ দশমিক ৫৫ এবং বিজ্ঞান বিভাগে তা ৯৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

সন্তুষ্ট নয় বোর্ড কর্তৃপক্ষ

সারাদেশে সার্বিকভাবে এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হার কমলেও চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের গতবারের চেয়ে বেড়েছে।

চট্টগ্রাম বোর্ডে এবছর পাসের হার ৬২ দশমিক ৭৩ শতাংশ, যা আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে পঞ্চম। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে মোট এক হাজার ৬১৩ জন শিক্ষার্থী।

গত বছরের তুলনায় পাসের হার এবং জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে।

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাহবুব হাসান বলেন,  “এই ফলাফল চট্টগ্রাম মহানগরকেন্দ্রিক। চট্টগ্রাম বোর্ডে জিপিএ-৫ পাওয়া এক হাজার ৬১৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরের এক হাজার ৪২০ জন।”

এই ফলাফল মোট জিপিএ-৫ এর ৮০ শতাংশ বলে জানান তিনি।

এদিকে চট্টগ্রাম জেলা, রাঙামাটি, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলায় পাসের হার বাড়লেও কমে গেছে খাগড়াছড়িতে।

পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে পাসের হার কমেছে গত বারের চেয়ে প্রায় আট শতাংশ। গত বছর এ জেলা থেকে ৪৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ পাশ করলেও এবছর তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ দশমিক ৫১ শতাংশ।

এ নিয়ে মাহবুব বলেন,  “গত বছর ফলাফল ঘোষণার পর আমরা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষদের সাথে বৈঠক করেছিলাম। সেখানে বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। যার কারণে খাগড়াছড়ি ছাড়া অন্যান্য জেলাগুলোতে পাসের হার বেড়েছে।”

এবছর মহানগর বাদে চট্টগ্রাম জেলায় পাসের হার ৬৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ৫৫ দশমিক ৮১ শতাংশ। আর কক্সবাজারে পাসের হার ৬১ দশমিক ৬৬ শতাংশ যা গত বছর ছিল ৫৫ দশমিক ৩২ শতাংশ।

রাঙামটিতে পাসের হার গত বছর ছিল ৪৫ দশমিক ৯৯ শতাংশ আর এবছর তা বেড়ে হয়েছে ৪৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ।

সবচেয়ে বেশি পাসের হার বেড়েছে বান্দরবানে। গত বছর এ জেলা থেকে ৫৫ দশমিক ২২ শতাংশ পাস করলেও এবছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬২ দশমিক ৩১ শতাংশ। 

সর্বোচ্চ জিপিএ-৫ পাওয়া ১০ কলেজ

এবছর চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে সর্বোচ্চ সংখ্যক জিপিএ-৫ পেয়েছে সরকারি চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষার্থীরা।

বন্দরনগরীর এ কলেজের ৮৮৯ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ৮৬৭ জন। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৯৯ জন।

হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ থেকে পেয়েছে ৩২৯ জন, সরকারি কমার্স কলেজ থেকে পেয়েছে ১৫৫ জন।

সরকারি সিটি কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭৯ জন, ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ থেকে ৭৮, সরকারি মহিলা কলেজ থেকে ৭৭, ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ৫৭ জন, ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ থেকে ৫১, ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ৩৪ জন ও কক্সবাজার সরকারি কলেজ থেকে ৩২ জন শিক্ষার্থী।

শতভাগ পাস করা ৫ কলেজ

হালিশহর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল অ্যান্ড কলেজ ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ থেকে, গুলশাখালি বর্ডার গার্ড মডেল কলেজ থেকে শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে।

চট্টগ্রাম বোর্ডের অধীনে ২৫৩টি কলেজের পরীক্ষার্থীরা এবার ১০০টি কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নেয়।

আরও খবর