শোক মিছিলে শেষবার দলীয় কার্যালয়ে মহিউদ্দিন

চট্টগ্রামের দারুল ফজল মার্কেটে যে কার্যালয় থেকে বন্দরনগরীর নানা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, সেখানেই তাকে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় শেষ বিদায় জানালো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

মিন্টু চৌধুরীও মিঠুন চৌধুরী, চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Dec 2017, 10:48 AM
Updated : 15 Dec 2017, 02:20 PM

শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের পর নগরীর ষোলশহর দুই নম্বর গেইটের চশমা হিলের বাড়ি থেকে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরীর কফিন নিয়ে দারুল ফজল মার্কেটে দলীয় কার্যালয়ের পথে রওনা হয় শোকের মিছিল। 

কফিনবাহী গাড়ি ঘিরে কয়েক হাজার নেতাকর্মী মোটরসাইকেলে করে আর পায়ে হেঁটে প্রায় তিন কিলোমিটার পথ পেরিয়ে দারুল ফজল মার্কেটের সামনে পৌঁছান। সেখানে দলীয় পতাকায় মোড়া প্রয়াত নেতার কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তারা।

মহিউদ্দিন চৌধুরী তার ৭৪ বছরের জীবনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ছিলেন ১৬ বছর। একাত্তরের এই মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যু পর্যন্ত ছিলেন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি।

চট্টগ্রামে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, বন্দর রক্ষা আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া এই রাজনীতিবিদ বেশ কিছুদিন ধরেই হৃদরোগ ও কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন। নগরীর ম্যাক্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

তার মৃত্যুর খবরে ভোরে হাসপাতালে এবং সকালে তার চশমা হিলের বাড়িতে ভিড় করেন বিভিন্ন দলের রাজনীতিবিদ এবং বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। তাদের কারো কাছে তিনি ছিলেন রাজনৈতিক গুরু, কারো সহযোদ্ধা, আবার কারো কাছে ছিলেন অভিভাবকের মত।

প্রবীণ এই নেতার মৃত্যুর খবরে ঢাকা থেকে ছুটে আসেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।রাজনীতির মাঠের প্রতিপক্ষ বিএনপির নেতারাও শেষবার দেখতে আসেন প্রবীণ এই রাজনীতিবিদকে। 

ষাটের দশকের ছাত্রলীগ নেতা মহিউদ্দিন একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পর পালিয়ে প্রায় তিন বছর তাকে কলকাতায় থাকতে হয়।

সাড়ে পাঁচ দশকের রাজনৈতিক জীবনে মহিউদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রামে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও শ্রমিক লীগের শীর্ষ পদে দায়িত্ব পালন করেন। প্রায় দুই যুগ নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থাকার পর ২০০৬ সালে তিনি সভাপতি হন এবং মৃত্যু পর্যন্ত সেই দায়িত্বে ছিলেন।

১৯৯৪ সালে প্রথমবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর টানা তিন মেয়াদে তিনি বন্দরনগরীর অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করেন। চট্টগ্রামে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, বন্দর রক্ষা আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনেও তিনি ছিলেন সামনের কাতারে।

দলীয় কার্যালয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আসরের পর মহিউদ্দিন চৌধুরীর কফিন নিয়ে যাওয়া হয় নগরীর লালদীঘি ময়দানে। সেখানে তার জানাজায় অংশ নেয় হাজারো মানুষ।

সন্ধ্যায় চশমা হিল মসজিদ কবরস্থানে বাবার কবরের পাশে দাফন করা হবে এই রাজনীতিবিদকে।