বন্দরে লস্কর পদে নিয়োগ বাতিলের দাবি

চট্টগ্রাম বন্দরে লস্কর পদে নিয়োগে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে ওই নিয়োগ অবিলম্বে বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Nov 2017, 01:47 PM
Updated : 20 Nov 2017, 01:47 PM

সোমবার দুপুরে ‘আমরা চট্টলবাসী’র ব্যানারে আয়োজিত সমাবেশ থেকে এ দাবি জানানো হয়।

সমাবেশে অংশগ্রহণকারী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা মূলত নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী। গত কয়েক দশকে বন্দরের নানা ইস্যুতে সোচ্চার ছিলেন মহিউদ্দিন।

চট্টগ্রাম বন্দরে সম্প্রতি লস্কর পদে মাদারীপুরের বেশি চাকরিপ্রার্থী নিয়োগ পেয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা ওঠে। ফেসবুকে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় চট্টগ্রামের বাসিন্দারা। ফেসবুকের মাধ্যমে সংগঠিত হয়েই সোমবারের বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয় বলে দাবি আয়োজকদের।

এর আগে রোববার নৌমন্ত্রী শাজাহান খান মাদারীপুরের চাকরিপ্রার্থীদের প্রতি পক্ষপাতের অভিযোগ নাকচ করে বলেন, মেধার ভিত্তিতেই তার জেলার প্রার্থীরা ওই পদে চাকরি পেয়েছেন।

সোমবারের সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসান মনসুর বলেন, “রাজনীতির অর্থ হচ্ছে জনকল্যাণে কাজ করা। মানুষের সেবা করা। মানুষের সুখে-দুঃখে কাজে লাগা। মানুষের বিপদে আপদে সাহায্য করা। মানুষের অন্ন সংস্থান করা।

“রাজনীতির অর্থ এটা হতে পারে না- টাকা দিয়ে চাকরি আরেকজনকে দিলাম। আঞ্চলিকতা করলাম, সাম্প্রদায়িকতা করলাম- এগুলো হবে না। স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা সমঅধিকারে বিশ্বাসী।”

হাসান মনসুর বলেন, “এখন ইলেকট্রনিক মিডিয়ার যুগ। সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলতে হবে। লুকানোর কোনো সুযোগ নেই। সেজন্য বলি- বন্দরের চাকরিতে সকল প্রকার দুর্নীতি পরিহার করুন।

“চট্টগ্রামের সন্তানদের, শুধু চাঁটগাইয়াদের বলছি না- চট্টগ্রামে বসবাসরত নাগরিকদের চাকরিতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে। অন্য যারা পাক অসুবিধা নাই। মাদারিপুরের যদি সাত জন পায় চট্টগ্রামে আমরা ৭৭ জন পাব। ১১টি জেলায় আমরা পেয়েছি মাত্র চারটি।”

লস্কর পদে নিয়োগ পাওয়া ৯২ জনের মধ্যে ৯০ জনই মাদারীপুরের এমন অভিযোগ ওঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আলোচনায়।

এ বিষয়ে রোববার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নৌমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, মাদারীপুরের ছয়-সাতজন আছে। পোষ্য কোটাসহ চট্টগ্রামের ৪৫ জনের চাকরি হয়েছে।

তখন মন্ত্রীর সঙ্গে থাকা বন্দর চেয়ারম্যান খালেদ ইকবাল বলেছিলেন, “কারও সুপারিশে এখানে চাকরি হয় না।”

সোমবারের সমাবেশে হাসান মনসুর বলেন, “কালকে মাননীয় সংসদ সদস্য মাঈনুদ্দিন খান বাদল ও জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, তারা আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নন। তারপরও চট্টগ্রামের সন্তানদের জন্য তারা সংসদে বক্তব্য রেখেছেন।

“জিয়াউদ্দিন বাবলু বলেছেন- আমরা বন্দরের চাকরিতে সুপারিশ করলেও কেন জানি চাকরিটা হয় না। একজন এমপির সুপারিশেও কেন চট্টগ্রামের ছেলের চাকরি হয় না? ”

হাসান মনসুর বলেন, “এই এলাকার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের ছেলের বিএ পাস করেও লস্করের চাকরি হয় না। মহানগর ছাত্রলীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের একজন ছেলে লিখিত পরীক্ষায় টেকার পরও তাদেরকে বন্দরে চাকরি দেওয়া হয় নাই। কিন্তু পরে দেখি জামায়াত-বিএনপি পরিবারের সন্তানের কাছে চাকরি চলে আসে। আমাদের মূল্যায়নের প্রয়োজন নেই, ন্যায় বিচার করুন।”

লস্কর পদে নিয়োগ পরীক্ষা অবিলম্বে বাতিল এবং চট্টগ্রাম বন্দরের সব নিয়োগ পরীক্ষা চট্টগ্রামে অনুষ্ঠানের দাবিও জানানো হয় সমাবেশ থেকে।

হাসান মনসুর বলেন, “নৌমন্ত্রী ও বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে এই আবেদন। আগামী সাতদিনের মধ্যে যদি কোনো ফল না পাই পুনরায় কর্মসূচি দেব।”

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন নগর আওয়ামী লীগ নেতা হাজী জহুর আহমদ, নগর আওয়ামী লীগের শ্রম সম্পাদক আব্দুল আহাদ, নগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান এটলী, চকবাজার থানা আওয়ামী লীগ নেতা শাহবুদ্দীন আহমেদ, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মো. হাসান, নগর ছাত্ররীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বি সুজন, নারী কাউন্সিলর ফেরদৌসি আকবর, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা আজিজুর রহমান প্রমুখ।