চবিতে ভাংচুর-অবরোধেও ছাত্রলীগের সেই কর্মীরা

হুমকি পাওয়া শিক্ষককে অপসারণের দাবিতে উপাচার্যকে স্মারকলিপি দেওয়ার পরদিনই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাংচুর ও অবরোধ করেছে ছাত্রলীগের একটি অংশ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Nov 2017, 11:06 AM
Updated : 7 Nov 2017, 03:27 PM

মঙ্গলবার উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনা শেষে বেরিয়েই তার কার্যালয়ের সামনে ভাংচুর শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সভাপতি আলমগীর টিপুর অনুসারীরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বেলা ১টার দিকে প্রশাসনিক ভবনের তৃতীয় তলায় তারা উপাচার্যের কার্যালয়ের জানালা ও বারান্দার টবগুলো ভাংচুর করে।

এরপর ওই ভবনে থাকা রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের জানালা ও টব ভাংচুর শেষে তারা নিচ তলায় নেমে শিক্ষকদের গাড়িতেও হামলা চালায়।

এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক বন্ধ করে অবরোধ করে টিপুর ওই অনুসারীরা।

চট্টগ্রামের গৃহকরবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া এক শিক্ষকের অপসারণ দাবির পরদিনই এই ঘটনা ঘটলো।

চট্টগ্রামে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির ‍উদ্দিনের গৃহকর পুনর্মূল্যায়নের বিরোধিতা করে আসছেন তারই দলের নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী।

এদিকে শিক্ষককে ‘অস্ত্র ঠেকিয়ে হুমকি’ এবং হুমকি পাওয়া শিক্ষকের নিয়োগ বিষয়ে ছাত্রলীগের একাংশের করা অভিযোগ তদন্তে দুটি কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

কার্যালয় ভাংচুরের ঘটনায় জড়িতদের বিষয়ে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দাবির বিষয়ে আলোচনা করতে তারা আমার কাছে এসেছিল। তাদের দাবির বিষয়ে আমরা তদন্ত কমিটি করে দিয়েছি।

“দেখা করে যাওয়ার পর বাইরে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। কারা জড়িত, তা এখনই বলতে পারছি না। প্রশাসনিকভাবে আলোচনা করেছি। জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ছাত্রলীগের অংশটি ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ‘তাৎক্ষণিক’ ব্যবস্থা চাইলেও নিয়মের বাইরে যেতে না পারার কথা তাদের বলেন বলে জানান উপাচার্য।

এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে তারা। প্রশাসনিক ভবনে ভাংচুর চালানোর পর মূল ফটক অবরোধ করলেও তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানতে পেরে সেখান থেকে সরে যায় ওই নেতাকর্মীরা।

তারা অবরোধ চলাকালে ছবি তুলতে গেলে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাভিশনের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মো. শাহজাহানকে মারধর করেন।

এ বিষয়ে প্রক্টরের কাছে দেওয়া লিখিত অভিযোগে মো. শাহজাহান বলেন, “ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী কিলঘুষি ও লাথি মারে এবং মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে আমাকে উদ্ধার করে।”

এসব ঘটনার বিষয়ে আলমগীর টিপুর অনুসারী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির উপ-দপ্তর সম্পাদক মিজানুর রহমান বিপুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভিসির কার্যালয়ের সামনে ভাংচুর খুবই ন্যক্কারজনক।”

যারা ভাংচুর করছে তাদের বিরুদ্ধে ‘সাংগঠনিক ব্যবস্থা’ নেওয়ার কথা বলেন তিনি; যদিও তাদের সাংগঠনিক কমিটির কার্যক্রমেই স্থগিত কেন্দ্রের নির্দেশে।

সাংবাদিককে মারধরের বিষয়ে বিপুল বলেন, “এটি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যে ব্যবস্থা নেবে, তা আমরা মেনে নেব।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মো. মিজানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শিক্ষক ও আন্দোলনকারীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দুটি কমিটিকে দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

শিক্ষকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুই সদস্যের এবং ছাত্রদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।

গত রোববার নিজ কার্যালয়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং করদাতা সুরক্ষা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আমির উদ্দিনকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়।

তখন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন তিনি।

উপাচার্যকে স্মারকলিপি দেওয়ার নেতৃত্বে দিয়াজ হত্যা মামলার আসামি আলমগীর টিপু (চশমা পরা); সঙ্গে ছিলেন আরও তিন আসামি আব্দুল মালেক (মেরুন শার্ট পরা), মনসুর আলম (পাঞ্জাবি পরা) ও আবু তোরাব পরশ (ধূসর রঙের ফুলহাতা শার্ট পরা)

পরদিনই শিক্ষক আমির উদ্দিনের নিয়োগ অবৈধ দাবি করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তার অপসারণের দাবি জানিয়ে উপাচার্যকে স্মারকলিপি দেন ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সভাপতি আলমগীর টিপু।

টিপু সিআরবি জোড়া খুন ও ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরী হত্যা মামলার আসামি। টিপুর সঙ্গে দিয়াজ হত্যা মামলার আরও কয়েকজন আসামি ছিলেন। মঙ্গলবার ভাংচুরের সময়ও তাদের দেখা গেছে।

টিপু সিটি মেয়র ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

ছাত্রলীগের অন্য অংশও মাঠে:

এদিকে শিক্ষককে ‘লাঞ্ছিত’ করা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাংচুরে বিচার দাবিতে পাল্টা কর্মসূচি পালন করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বি সুজন ও তার অনুসারীরা।

সুজন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত, যিনি গৃহকরের প্রশ্নে নাছিরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।

বিকাল ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এবং মূল ফটক এলাকায় বিক্ষোভ করে সুজনের অনুসারীরা।

প্রশাসনিক ভবনের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সুজন বলেন, যারা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে লাঞ্ছনায় জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

“বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আমির উদ্দিনকে হুমকি দেওয়ার সময় ব্যবহৃত অবৈধ অস্ত্রের জোগানদাতাদের খুঁজে বের করতে হবে। অবিলম্বে ভাংচুরকারী এবং সাংবাদিককে মারধরকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে হবে।”

এরপর পরে ক্যাম্পাসে মিছিলও করে।