শরণার্থীর প্রবাহ চাপ ফেলছে বাংলাদেশের সম্পদে: শ্রিংলা

মিয়ানমারে রাখাইনে সহিংসতায় ভারত ‘গভীরভাবে বিচলিত’ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে দেশটির রাষ্ট্রদূত হর্ষবর্ধন শ্রিংলা।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Sept 2017, 11:34 AM
Updated : 28 Sept 2017, 11:35 AM

বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম বন্দরে রোহিঙ্গাদের জন্য আসা ৭০০ টন ভারতীয় ত্রাণ হস্তান্তর করে একথা বলেন তিনি।

শ্রিংলা বলেন, “মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতায় ভারত গভীরভাবে বিচলিত। আমরা অনুভব করি যে, সহিংসতার সমাপ্তি ঘটা এবং স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসা জরুরি।

“আমাদের প্রত্যাশা শান্তি, ন্যায় বিচার, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের মতো নীতি, যার প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল তা সমুন্নত রাখা হবে। সব দিক বিবেচনায় যে পরিস্থিতির এখন মোকাবেলা করা হচ্ছে, তাতে এসব নীতি যথাযথভাবে পালন খুব গুরুত্বপূর্ণ।”

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা বিষয়ে আলোচনার নির্ধারিত দিনে এই ত্রাণ হস্তান্তর অনুষ্ঠানে শ্রিংলা বলেন, “আমরা অবশ্যই স্বীকার করি যে, বাংলাদেশে খুব বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে।

“বিপুল সংখ্যক শরণার্থীর প্রবাহ… যে সংখ্যা চার লাখ ছাড়িয়েছে, এটা এই দেশের সম্পদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। যা পৃথিবীর অন্য যে কোনো দেশের জন্যও একই হত।”

ফাইল ছবি

এ পরিস্থিতিতে ভারত বাংলাদেশের ‘বন্ধু, প্রতিবেশী ও সহযোগী’ হিসেবে সাড়া দিয়েছে মন্তব্য করে আগের দুটি বিমানে করে ১০৭ টন জরুরি ত্রাণ সহায়তা পাঠানোর কথা তুলে ধরেন তিনি।

দীর্ঘদিন ধরে চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর ভার বহন করে আসা বাংলাদেশ এ দফায় আরও প্রায় পাঁচ লাখ শরণার্থী আসার পর সঙ্কট সমাধানে আন্তর্জাতিক মহলে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

তবে দীর্ঘদিন ধরে জাতিগত নিপীড়নের শিকার রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমন-পীড়ন চলার মধ্যে দেশটি সফর করে তাদের ওপর সমর্থন চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলেন প্রতিবেশী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

যদিও পরে ১৪ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গা সঙ্কটে ভারত বাংলাদেশেরও পাশে আছে বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টেলিফোনে জানান ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। একইসঙ্গে রোহিঙ্গাদের সহায়তায় ত্রাণ পাঠানোও শুরু করে তারা।

ভারতীয় রাষ্ট্রদূত শ্রিংলা বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়... যেমন জাতিসংঘ ও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থাগুলো এ সমস্যার একটি সমাধান নির্ধারণে গভীরভাবে সম্পৃক্ত।

“এসব কিছুর পরও আমাদের স্বীকার করতে হবে যে, বাংলাদেশ একটি বহুমাত্রিক সমস্যার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। মানবিক সঙ্কট যেমন আছে, পাশাপাশি তাদের কূটনৈতিকভাবেও তা মোকাবেলা করতে হচ্ছে।”

তিনি বলেন, “এই ইস্যু নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন ফোরামে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিকভাবে আলোচনা চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ছিলেন এবং সেখানে এ বিষয়ে কথা বলেছেন।

“এই ইস্যুটি খুব গুরুত্বসহকারে এবং কূটনৈতিকভাবে গ্রহণ করা হয়েছে। নিরাপত্তার বিষয়টিও এখানে আছে….”

ভারতীয় ত্রাণ সামগ্রির দ্বিতীয় চালানটি চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছে বৃহস্পতিবার ভোরে। এর আগে ভারতীয় ত্রাণ সামগ্রীর প্রথম চালান বিমানযোগে গত ১৪ ও ১৫ সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে আসে।

১৪ সেপ্টেম্বর বিমানবন্দরে ত্রাণ হস্তান্তর অনুষ্ঠানে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মানবিক বিবেচনায় ভারত বাংলাদেশের পাশে আছে বলে মন্তব্য করেছিলেন শ্রিংলা। ভারত রোহিঙ্গাদের জন্য মোট সাত হাজার টন ত্রাণ পাঠাবে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।