মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে একাট্টা চট্টগ্রামের কাউন্সিলররা

কাউন্সিলরদের জড়িয়ে সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বক্তব্যের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলনে এসে তার আমলসহ নানা সময়ে নালা-নর্দমা দখল করে গড়ে তোলা স্থাপনা অপসারণের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলররা।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 April 2017, 10:44 AM
Updated : 13 April 2017, 11:14 AM

বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান সিসিসির প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, সিসিসিকে পাগলের আড্ডাখানা বলায় সম্মানিত ভোটারদের মধ্যে নানা সংশয় তৈরি হয়েছে, সেটি দূর করতেই এই সংবাদ সম্মেলন।

তিনি বলেন, “এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ১৭ বছর মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন। তার আমলে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে অসংখ্য আত্মীয়স্বজনকে তিনি নিয়োগ দিয়েছিলেন, আইন অমান্য করে অনেক পদের নিয়োগকে স্থায়ী করেছেন।

“এছাড়াও সিসিসির নিজস্ব জায়গায় অপরিকল্পিতভাবে নানা স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে, যা থেকে আবাসিক বা বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে কোনো সুফল আসেনি। এগুলোর কারণে জলাবদ্ধতা প্রকট হয়েছে।”

এসব অপরিকল্পিত ভবন ভেঙ্গে ফেলা হবে কিনা এমন প্রশ্নে হাসান মাহমুদ বলেন, সিসিসি নির্বাচিত পরিষদের বার্ষিক সাধারণ সভায় এ অপরিকল্পিত ভবনগুলো ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

“মহিউদ্দিন চৌধুরীর আমলসহ নানা সময়ে নির্মিত এসব ভবন আমরা অপসারণ করব। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। খুব শিগগির আমরা এ কাজে হাত দেব।”

আইনের মধ্যে থেকে এটা করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “ভবন অপসারণের আগে মালিকদের আমরা অন্য জায়গায় স্থানান্তরের সুযোগ দিব। পর্যায়ক্রমে এটা করা হবে।”

সাবেক মেয়র ও চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরীর আমলে নগরীর মুরাদপুরে আগ্রাবাদ এক্সেস রোডে নির্মিত এরকম অবৈধ স্থাপনা ফখরুদ্দিন সরকারের সময় অপসারণ করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগে এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের বিরোধ দীঘদিনের। তাদের এক হয়ে কাজ করতে দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নানা সময়ে হুঁশিয়ার করার পর মাঝে কিছুদিন তা চাপা ছিল। সম্প্রতি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র নিয়ে দুজনের বিরোধ আবার চাঙা হয়ে উঠে। তার মধ্যে গত সোমবার লালদিঘীর মাঠে সোনালী যান্ত্রিক মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সমাবেশে নাছিরকে আক্রমণ করে বক্তব্য দেন মহিউদ্দিন।

তিনি সিটি করপোরেশনের সমালোচনার পাশাপাশি চাক্তাই এ নতুন মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র,সিটি করপোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানো এবং নগরীর আউটার স্টেডিয়ামে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার (সিজেকেএস) সুইমিং পুল নির্মাণের বিরোধিতা করে বক্তব্য দেন।

নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাছিরের বিরুদ্ধে ১২টি খুনের অভিযোগও করেন সভাপতি মহিউদ্দিন।

পাল্টা বক্তব্যে মহিউদ্দিন চৌধুরী বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে ‘পাগলের প্রলাপ’ বকছেন বলে মন্তব্য করেন নাছির।

খুনের অভিযোগ নিয়েও পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দেন দুইজন। নাছির তার বিরুদ্ধে আনা খুনের অভিযোগের তথ্য-উপাত্ত চাইলে জবাবে মহিউদ্দিন জানান, তার কাছে সব প্রমাণ আছে, প্রয়োজন হলেই তিনি জানাবেন।   

হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে নগরবাসীকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে প্যানেল মেয়র হাসনি বলেন, “১৯৮৫ সন থেকেই ১৭ শতাংশ ট্যাক্স আদায় করা হচ্ছে। পৌরকর ধার্য করে সরকার, সিসিসির কোনো এখতিয়ার নেই এটা করার।”

মেয়রের বিরুদ্ধে ১২ খুনের যে অভিযোগ তার প্রমাণও চেয়েছেন সিসিসির এ প্যানেল মেয়র।

সংবাদ সম্মেলনে সিসিসি সাধারণ ও সংরক্ষিত আসনের ৫৫ কাউন্সিলরদের মধ্যে ৫৩ জন উপস্থিত ছিলেন।