নাছির ‘অথর্ব’; ‘প্রলাপ বকছেন’ মহিউদ্দিন

চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ দুই নেতার বিবাদ আবার চরমে উঠেছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 April 2017, 04:33 PM
Updated : 10 April 2017, 05:23 PM

সোমবার লালদীঘি মাঠে এক জনসভায় মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনকে ‘অথর্ব’ বলে তাকে অপসারণে

প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব পাঠানোর কথা বলেছেন নগর সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী।

সাবেক মেয়রের এই কথাকে ‘পাগলের প্রলাপ’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাছির।

চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগে এই দুজনের বিরোধ দীর্ঘকালের। তাদের এক হয়ে কাজ করতে দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নানা সময়ে হুঁশিয়ার করার পর মাঝে কিছু দিন তা চাপা ছিল।

সম্প্রতি মৎস্যঅবতরণ কেন্দ্রনিয়ে দুজনের বিরোধ আবার চাঙা হয়; তার মধ্যেই সোমবার লালদীঘির মাঠে সোনালী যান্ত্রিক মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সমাবেশে নাছিরকে আক্রমণ করে বক্তব্য দেন মহিউদ্দিন।

প্রবীণ এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, “নাছির ভাই- আপনি আমাদের সাধারণ সম্পাদক। আপনাকে নেত্রী মনোনয়ন দিয়েছে তাই আমরা বসিয়েছি। তাই বলে জনগণের সাথে প্রতারণা করতে পারবেন না।

“একজন মেয়রকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হয়। আপনাকে দিচ্ছে না। কারণ আপনি অযোগ্য-অর্থব। আপনার আচরণ অশোভন।”

“আপনার বিরুদ্ধে প্রস্তাব নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে পৌঁছাব। যে আপনি একজন অর্থব লোক, আপনাকে অবশ্যই অপসারণ করতে হবে,” বলেন মহিউদ্দিন, যার ছেলে দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন।

নগরবাসীর সমস্যা সমাধানে নাছির কোনো পরিকল্পিত উদ্যোগ নেননি বলে দাবি করেন চট্টগ্রামের তিন বারের মেয়র মহিউদ্দিন।

“তিনি সিটি করপোরেশনের দরজায় তালা মেরে সার্বক্ষণিক বন্দর চেয়ারম্যানের কক্ষে বসে থাকেন। উনি চারটা স্টিভিডোরশিপ নিয়েছেন। কী কারণে? বাহুবলে? সেটা কি তার দায়িত্ব আদৌ?”

নাছিরের পাশাপাশি দলীয় সংসদ সদস্য এম এ লতিফ ও সামশুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেন মহিউদ্দিন।

“সংসদে কথা না বলে তারা বন্দরেবসে থাকেন। আঁরার বিচ্ছু (সামশুল হক), লতিফ- তারা সংসদে কথা বলে না। বন্দর চেয়ারম্যানের চেম্বারে বসে থাকে তারা। এটা কি তাদের দায়িত্ব? কী করছেন? ব্যবসা করছেন। জাহাজের ব্যবসা, লোহার ব্যবসা, ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার ব্যবসা।”

চাক্তাই এ নতুন মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের বিরোধিতা করে মহিউদ্দিন বলেন, “এমপি-মেয়র মিলে ইয়াবা ব্যবসার পরিকল্পনা করছে। চারিদিকে খাবে। বন্দরও খাবে, ইয়াবাও।”

এই মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণে মাছ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মেয়র নাছির, মৎস্য পরিদর্শক মাসুদ নিজাম ও মৎস্য ব্যবসায়ী বাবুল সরকার ‘টাকা’ নিয়েছেন বলে অভিযোগ তার।

সিটি করপোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোর বিরোধিতা করে সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন বলেন, “চট্টগ্রামের আদি বাসিন্দারা যেন শহর ছেড়ে চলে যায়, এই ইচ্ছা পরিহার ‍করুন। ট্যাক্সের নামে গৃহচ্যুত করবেন বলে হুমকি দিচ্ছেন। মেয়র হয়েছেন বলে আমার বাবার ঘর থেকে গৃহচ্যুত করার অধিকার আপনার নাই। যারা দিতে পারবে না তাদের মাফ করে দেন।”

নগরীর আউটার স্টেডিয়ামে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার (সিজেকেএস) সুইমিং পুল নির্মাণেরও বিরোধিতা করেন মহিউদ্দিন। সিজেকেএস’র সাধারণ সম্পাদক মেয়র নাছির।

মহিউদ্দিন বলেন, “ওখানে বিজয় মেলা হয়। উনি তো বিজয় মেলার পক্ষে নন।

“সুইমিং পুলের নামে আউটার স্টেডিয়ামে দোকান ভাড়া দিতে পারবেন না। অবিলম্বে বন্ধ করুন। ১৫দিন সময় দিলাম। তা না হলে সন্তানরা গিয়ে ভেঙেদেবে।”

নাছিরের সমালোচনায় মহিউদ্দিন বলেন, “সে হুমকি দিয়েই চলেছে। কেউ গেলে ‍হুমকি দেন। আরও বলেন কি- উনি (নাছির) হেসে হেসে লোককে গুলি করতে পারেন। মানুষ উগ্গ্যা (একজনকে) কমিশনার (কাউন্সিলর) লই গিয়ে (সাথে নিয়ে যায়)। বকা ঝকা করেছেন। বলেছেন- জানছ নি কজে, আই হাসি হাসি মানুষ গুলি গরিত পারি। হ্যাঁ করেছেন তো। আপনার তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রামে ১২টা লোককে হত্যা করেছেন।”

“এখানে খুনি, মেয়রের দায়িত্বে বসে আছেন। সংশোধন হয়ে যান না। আপনি হুমকি দিচ্ছেন। তাই আমরা চট্টগ্রামবাসী ক্ষুব্ধ।”

হোল্ডিং ট্যাক্স আগের মতো রাখা, পাথরঘাটায় মৎস্য আড়তবহালসহ চার দফা দাবিতে এ সমাবেশে

শ্রমিক লীগ নেতা মাহবুবুল হক চৌধুরী এটলি, যুবলীগ আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু, মহিলা আওয়ামী লীগ সহসভাপতি মমতাজ খান মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি সামশুল আলম বক্তব্য রাখেন।

‘পাগলের প্রলাপ’

দলীয় নেতা মহিউদ্দিনের কথাকে ‘পাগলের প্রলাপ’ অ্যাখ্যা দিয়ে তার বিরুদ্ধ আনা অভিযোগকে ‘মিথ্যাচার’ বলে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাছির।

তিনি সোমবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উনি যত ইচ্ছা বলুক। যা ইচ্ছে সবই করুক। সময়ে সব জবাব পেয়ে যাবেন।

“একটা বিষয় স্পষ্ট। উনার মুখোশ উন্মোচিত হয়ে গেছে। আমি নির্বাচিত হই সেটা তিনি চেয়েছিলেন কি না, সেটাও এখন পরিষ্কার হয়ে গেছে। অনেকে যা ধারণা করেছিল, সেটাই হয়ত সত্যি।”

আ জ ম নাছির উদ্দিন

মেয়র নাছির বলেন, “উনি অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আমার প্রতি এখন মানুষের আস্থা বাড়ছে দেখে সর্বশেষ চেষ্টা হিসেবে উলঙ্গভাবে সমালোচনায় নেমেছেন।

“উনার এসব কথাবার্তা আমি পাগলের প্রলাপ মনে করি। কারণ কোনো সুস্থ বিবেকবান মানুষ এভাবে লাগামহীন কথা বলতে পারেন না।”

প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব পাঠানোর বিষয়ে নাছির বলেন, “এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিষয়। তিনি যেটা ভালো মনে করবেন সেটাই করবেন। আমি মেয়র নির্বাচন করেছি। অন্য কোনো পদে তো নয়।

“উনার (মহিউদ্দিন) এত মাথাব্যথা কেন? মূলকথা- অন্তর্জালা। হারানো সিংহাসন কীভাবে ফিরে পাবেন তা ভেবে তিনি মরিয়া হয়ে গেছেন। এখন বিএনপির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।”

বন্দর চেয়ারম্যানের কক্ষে ‘বসে থাকা’ নিয়ে মহিউদ্দিনের বক্তব্যকে ‘হাস্যকর’ বলে উড়িয়ে দেন নাছির।

বন্দরে চারটি স্টিভিডোরশিপ নেওয়া বিষয়ে তিনি বলেন, “মিথ্যাচারের একটা সীমা আছে। উনার কথা শুনে মিথ্যাচারও লজ্জা পাবে।

“আমার যা আছে সব বৈধ। আইন মেনে ব্যবসা করি। উনার মত তো চাঁদাবাজি তো করতে পারি না।”

সিটি করপোরেশনে সেবা না বাড়ানোর অভিযোগের বিষয়ে নাছির বলেন, “সেবা বলতে উনি কী বোঝেন? নগরবাসী কী সেবা পাবে সেটা নির্ধারিত।

“উনার আমলে যে বিলবোর্ড উঠিয়েছিলেন সেগুলো আমিই নামিয়েছি। করপোরেশনের কোনো অর্গানোগ্রাম করেননি। মাস্টার প্ল্যান একতিলও বাস্তবায়ন করেননি।”

“আমার মেয়াদে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি প্রমাণ করতে পারেননি। উনার আমলে কর্মচারী-ঠিকাদার সবই তো ছিল তার আত্মীয়স্বজন। আমার কেউ নেই।”

নাছির বলেন, “উনার মনে অনেক কিছু ছিল। ভেবেছিলেন সিটি করপোরেশনে তাদের লোকজনের দৌরাত্ম্য হবে। তা না হওয়ায় তিনি এসব বলছেন।”