মহিউদ্দিনের কাছে অভিযোগের প্রমাণ চান নাছির

মানুষ খুনের যে অভিযোগ চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী তুলেছেন তার সপক্ষে প্রমাণ চেয়েছেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 April 2017, 01:05 PM
Updated : 11 April 2017, 01:49 PM

মঙ্গলবার নগরভবনে চট্টগ্রাম সাবেক মেয়রের করা অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাছির  বলেন, “উনি বলেছেন আমি ১২টা খুন করেছি। আমি হাসতে হাসতে গুলি করতে পারি। উনার বক্তব্যের সপক্ষে একটা ডকুমেন্টারি বা তথ্য-উপাত্ত দেয়া হোক।

“উনার অভিযোগ আমি ১২টা খুন করেছি। উনি কোথায় দেখেছেন আমি হাসতে হাসতে গুলি করতে পারি। খুনের যে অভিযোগ সেটার তথ্য-উপাত্ত আমি আপনাদের মাধ্যমে তার কাছে দাবি করছি।”

চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগে মহিউদ্দিন-নাছিরের বিরোধ দীর্ঘদিনের। তাদের এক হয়ে কাজ করতে দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নানা সময়ে হুঁশিয়ার করার পর মাঝে কিছু দিন তা চাপা ছিল।

সম্প্রতি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র নিয়ে দুজনের বিরোধ আবার চাঙা হয়;তার মধ্যেই সোমবার লালদীঘির মাঠে সোনালী যান্ত্রিক মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সমাবেশে নাছিরকে আক্রমণ করে বক্তব্য দেন মহিউদ্দিন।

সমাবেশে নাছিরের বিরুদ্ধে ১২ খুনসহ নানা অভিযোগের ফিরিস্তি তুলে ধরেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। তিনি মেয়রকে ‘অথর্ব’ বলেও মন্তব্য করেন।  

মহিউদ্দিনের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় নাছির বলেন, “উনি অভিযোগ করেছেন আমি মনোনয়ন ক্রয় করেছি। মনোনয়ন বোর্ডের প্রধান হলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। মনোনয়ন দেওয়ার সময় ওখানে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতৃবৃন্দ ও চট্টগ্রামের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ছিলেন। ওখানে আলাপ-আলোচনা করে প্রধানমন্ত্রী নিজের মুখে আমাকে মনোনয়নের ঘোষণা দিয়েছেন।”

মনোনয়ন যদি কেনা হয়ে থাকে তাহলে টাকাটা কে নিয়েছে- এমন প্রশ্ন তুলে নাছির বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিজের মুখে মনোনয়নের ঘোষণা সত্ত্বেও কেউ যদি এমন প্রশ্ন তোলে তাহলে সে প্রশ্ন দিয়ে তিনি কি করছেন?

“টাকা দিয়ে যদি কিনি তাহলে উনি কাকে মিন করেছেন? উনার অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাই আমি দাবি করছি, টাকাটা কে কিভাবে নিয়েছে সে বিষয়টি উনি যেন আপনাদের মাধ্যমে যেন খোলাসা করেন।”

সিটি করপোরেশন তালা মেরে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যানের রুমে বসে থাকার অভিযোগকে হাস্যকর অভিহিত করে মেয়র বলেন, “এসব কথার কোনো সত্যতা নাই। আমি কোথায় বসে থাকি সেটা সিসিটিভি ফুটেজ দেখলে পরিষ্কার হয়ে যাবে।”

মহিউদ্দিন চৌধুরী এসব অভিযোগ কেন করছেন তার কোনো সূত্র খুঁজে পাচ্ছেন না বলেও তিনি সংবাদকর্মীদের জানান।

“হতে পারে উনি বয়সের ভারে ন্যুজ্ব হয়ে পড়ে উন্মাদ হয়ে গেছেন। দুষ্টু লোকেরা বলছেন উনি মেয়র হতে চেয়েছেন, হতে পারেননি। এখন বয়স হয়ে গেছে, সামনের ভবিষ্যতও অন্ধকার; তাই হয়ত এসব প্রলাপ বকছেন।”

সোমবার লালদীঘি মাঠে সমাবেশে বক্তব্য দেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী

সোমবার সমাবেশে মহিউদ্দিনের বক্তব্যের পরও তার কথাকে ‘পাগলের প্রলাপ’ বলেছিলেন নাছির।

দিনরাত চট্টগ্রাম মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন দাবি করেন নাছির বলেন, “আমি দিনরাত কাজ করে চলেছি চট্টগ্রামবাসীর জন্য, তাই আমি যেখানে যাই মানুষের ভালোবাসা পাই। মানুষের এ ভালেবাসা কারও কারও জন্য হুমকি হয়ে উঠছে।”

মহিউদ্দিন চৌধুরীর আমলে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হওয়া, নালার উপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য অনেকাংশে জলাবদ্ধতার কারণ বলে অভিযোগ নাছিরের।

“কার আমলে কতটুকু উন্নয়ন হয়েছে সেটা তো সিসিসিতে নথি আছে। উনার আমলে মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন করা হয় নাই, নালার উপর মার্কেটসহ নানা প্রতিষ্ঠান হয়েছে। ফলে জলাবদ্ধতা প্রকট হয়েছে।”

অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প হাতে নিয়ে মহিউদ্দিন চৌধুরী সিসিসির কোটি কোটি টাকা নষ্ট করেছেন বলেও অভিযোগ করেন নাছির।

“চাক্তাই খাল খননের জন্য চীন থেকে নিয়ম না মেনে যন্ত্রপাতি ক্রয় করেছেন। সে যন্ত্রপাতি একদিনের জন্যও ব্যবহার করা হয়নি। বিনা টেন্ডারে অনেক কাজ করেছেন যেগুলো দুর্নীতির পর্যায়ে পড়ে।”

মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর বিলবোর্ড উচ্ছেদ, ফুটপাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সাফল্য দাবি করেন মেয়র।

“আমার বিরুদ্ধে উনার বিষোদগার নতুন কিছু নয়। গত ত্রিশ বছর ধরে উনি এটা করে আসছেন। উনার অভিযোগ চট্টগ্রামবাসী ও আমার দল বিশ্বাস করে না বলে আমি আজকে সাধারণ সম্পাদক ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে মেয়র নির্বাচন করার সুযোগ দিয়েছেন।”

লালদীঘিতে মহিউদ্দিন চৌধুরীর সমাবেশে নাশকতায় সক্রিয় থাকা বিএনপি নেতাদের দেখা গেছে দাবি করে মেয়র বলেন, নগরীর পাঠানটুলি ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মহসিনসহ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন।

এগুলো কিসের আলামত প্রশ্ন রেখে মহিউদ্দিনের অভিযোগকে ‘গোয়েবলসের থিওরির’ সাথেও তুলনা করেন নাছির।

ভবিষ্যতে ঐক্যের বিষয়ে ভবিষ্যতে দেখা যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।