ফের বিবাদে মহিউদ্দিন-নাছির

হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে বাদানুবাদের পর এবার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র স্থানান্তর নিয়ে কথার লড়াইয়ে জড়িয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের দুই শীর্ষ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আ জ ম নাছির উদ্দিন।

মিঠুন চৌধুরীমিঠুন চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 April 2017, 06:48 AM
Updated : 9 April 2017, 09:32 AM

ফেব্রুয়ারিতে অবতরণ কেন্দ্রটি পাথরঘাটা থেকে রাজাখালে সরিয়ে নেন মেয়র নাছির; গত মাসে সেটি আগের স্থানে নিয়ে আসেন সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন। তখন থেকেই এ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র নিয়ে দুই নেতার বিবাদ প্রকাশ্য।

পাথরঘাটা থেকে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র সরানোর ‘ষড়যন্ত্রের’ প্রতিবাদে এরই মধ্যে মহিউদ্দিন অনুসারী সোনালী মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি সোমবার লালদীঘি মাঠে সমাবেশ ডেকেছে।

নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন বলছেন, সমাবেশে তিনি চট্টগ্রামের স্বার্থ পরিপন্থি সব কাজের প্রতিবাদ জানাবেন।  

শনিবার চশমা হিলে নিজের বাসভবনে পারিবারিক মেজবানে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “চট্টগ্রামের স্বার্থের পরিপন্থি কাজ যেই করুক, আমি তার প্রতিবাদ করব। আমার ছেলে হোক বা আমার বন্ধু হোক... আমার পিতা হোক। চট্টগ্রামের স্বার্থের পরিপন্থি কাজ আমার জীবন থাকতে আমি করতে দেব না।”

সমাবেশ থেকে হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধিরও প্রতিবাদ করা হবে বলে জানান আওয়ামী লীগের এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ।

“আপনারা অনুরোধ করছেন কথা বলার জন্য। গর্হিত কথা বলা বলা পছন্দ করি না। যখন যা প্রয়োজন হয় তা বলি।

“দীর্ঘদিন ধরে আমি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগকে তৈরি করেছি। চট্টগ্রামে রাজনীতির ক্ষেত্র তৈরি করেছি। আজ যে যা ইচ্ছা তাই করে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার চক্রান্ত করছে। আমি বঙ্গবন্ধুর কর্মী। অন্যায়কে জীবনে প্রশ্রয় দিই নাই। আগামীতেও যারা অন্যায় করছে, দলের ক্ষতি করেছে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই রুখে দাঁড়াব।”

লালদীঘিতে সমাবেশের আয়োজনের বিষয়ে মহিউদ্দিন বলেন, সভা তিনিই ডেকেছেন। কথা একটাই- ‘অযোগ্য-অথর্ব’ লোক চট্টগ্রামবাসী চায় না।

“জীবনে নরম কথা বলি নাই। কারও কাছে মাথা নত করি নাই। ১০ তারিখে লালদীঘিতে আসুন। সেখানে গরম কথা বলব।… সমস্ত কিছু নোট করেছি। সেগুলো লালদীঘির ময়দানে ঘোষণা করব। অনুগ্রহ করে আপনাদের মিডিয়ার মাধ্যমে আমার বক্তব্যগুলো তুলে ধরবেন।”

চট্টগ্রাম বন্দর ঘিরে ‘লুটপাট’ চলছে অভিযোগ করে মহিউদ্দিন এর জন্য মেয়র নাছিরকে দায়ী করেন।

“চট্টগ্রাম অর্থনীতির একটা শ্রেষ্ঠ কেন্দ্র। এটা বিভিন্নভাবে অবহেলিত হচ্ছে। বন্দরকে নিয়ে লুটপাট করা হচ্ছে। চারজন নেতা... একজন নাছির সাহেব। আর কইতান ন পানলার (আর বলতে পারছি না)।”

মেয়র হওয়ার পর আ জ ম নাছিরের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, তাদের এমন ছবি এখন কমই দেখা যায় না

নগর আওয়ামী লীগ সভাপতির এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সাধারণ সম্পাদক নাছির।

তার ভাষ্য, ‘নিজের স্বার্থ কিংবা চিন্তার বিরুদ্ধে গেলেই’ মহিউদ্দিন চৌধুরী এমন কথা বলা শুরু করেন।

“এ পর্যন্ত কতজনকে তিনি বহিষ্কার করেছেন আবার সঙ্গে নিয়ে ভাতও খেয়েছেন। সমালোচনা করেছেন আবার হিরোও বানিয়েছেন। এর রহস্য কেবল তিনি জানেন আর জানেন মহান রাব্বুল আল আমিন।

“তার স্বার্থের বা চিন্তার বিরুদ্ধে গেলে তখন বলা শুরু করেন। বন্দর নিয়েও তিনি সবসময় বলেন। তিনি মনে করেন, তিনি যা করেন, সবই যৌক্তিক,” বলেন মেয়র।

এর আগে গত বছরের মার্চে দুই নেতা হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে বাদানুবাদে জড়ান।

মেয়র নির্বাচনের আগে হোল্ডিং ট্যাক্সের বিরোধিতা করলেও গত বছর নগরজুড়ে জমি ও স্থাপনার হোল্ডিং ট্যাক্স পুনঃনির্ধারণের ঘোষণা দেন নাছির।  

পরদিন থেকেই প্রকাশ্যে এর বিরোধিতায় নামেন মহিউদ্দিন।

এ প্রসঙ্গে নাছিরের ভাষ্য, সিটি করপোরেশন কেবল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের গেজেট অনুসরণ করে।

“সিটি করপোরেশন আদায়ের এখতিয়ার রাখে, হোল্ডিং ট্যাক্স ধার্য করে না। আমাদের আয়ের একমাত্র উৎস রাজস্ব। হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় না হলে করপোরেশন চলবে না। উন্নয়ন চলবে না। উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের জন্য তিনি (মহিউদ্দিন চৌধুরী) বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন।”

চলতি বছরের মার্চে চট্টগ্রাম সফরে এসে বিমানবন্দর সড়কের বেহাল দশা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। মহিউদ্দিনের মেয়াদেই চট্টগ্রামের রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এরপর থেকেই নগরীর রাজনীতিতে নানা ইস্যুতে আবার সরব হয়ে ওঠেন বর্ষীয়ান মহিউদ্দিন।

সবশেষ ২ এপ্রিল সিটি করপোরেশনের এক সভায় নাছির অভিযোগ করেন, তাকে ‘ব্যর্থ ও অজনপ্রিয়’ করতে একটি পক্ষ চেষ্টা চালাচ্ছে।

দলীয় সভাপতির ‘প্রশংসা’কে কাজে লাগিয়ে মহিউদ্দিন মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র রাজঘাট থেকে পুনরায় পাথরঘাটায় নিয়ে আসাসহ নানা ধরনের তৎপরতা ‘বাড়িয়ে দিয়েছেন’ বলে নাছিরের অভিযোগ। তার ভাষায়, লালদিঘীর সমাবেশও তেমনি একটি কর্মসূচি।

“তিনি একজন দায়িত্বশীল প্রবীণ জননেতা। সরকারি দলের নগর কমিটির সভাপতি, তিনবার মেয়র ছিলেন। সরকারি সিদ্ধান্ত, বিধি-বিধান সবই তিনি জানেন। তিনি এত বড় নেতা, যে কোনো স্থানে কথা বলতে পারেন। মিটিং করে বিভ্রান্তি ছড়ানোর প্রয়োজন নেই,” বলেন নাছির।