প্রথম বছরে কোনো ব্যর্থতা দেখছেন না মেয়র নাছির

মেয়র পদে এক বছর দায়িত্ব পালনের পর বিলবোর্ড উচ্ছেদ ও সিটি করপোরেশনে অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ফেরানোকেই প্রধান সাফল্য হিসেবে দেখছেন আ জ ম নাছির উদ্দিন, যার প্রধান নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল জলাবদ্ধতা নিরসন।

মিঠুন চৌধুরীমিঠুন চৌধুরী চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 July 2016, 04:11 AM
Updated : 24 July 2016, 04:11 AM

দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পূর্তির প্রাক্কালে শনিবার রাতে নগর ভবনে নিজ কার্যালয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপচারিতায় নিজের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি, গৃহীত কর্মসূচি ও পরিকল্পনাসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন মেয়র।

পাঁচ বছর মেয়াদে দায়িত্ব নিয়ে সাফল্য-ব্যর্থতা মূল্যায়নের জন্য এক বছর ‘যথেষ্ট সময়’ নয় বলে মনে করেন নাছির। তারপরও তার দাবি, বন্দরনগরীর মেয়র হিসেবে প্রথম বছরে ‘কোনো ব্যর্থতা নেই’ তার।

আগামী দিনে তিনি পরিবর্তন আনতে চান করপোরেশনের বাজেট প্রণয়নে, রাজস্ব আদায় বাড়িয়ে মেটাতে চান অর্থের ঘাটতি আর নতুন ‘অর্গানোগ্রাম’ করে বৃদ্ধি করতে চান জনবল। তার আশা, আগামী দুই বছরের মধ্যে করপোরেশনের দায়-দেনা শোধ করা যাবে।

আর পরিচ্ছন্নতায় গৃহীত উদ্যোগ সফল হলে পরের দুই বছরের মধ্যেই চট্টগ্রামকে ‘গ্রিন সিটি’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা বাস্তব করা যাবে বলে আশা করছেন মেয়র নাছির, যিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও।

এক বছরের কাজের মূল্যায়নে তিনি বলেন, “জনগণের সেবা একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন সময় সাপেক্ষ। তবু বিলবোর্ড উচ্ছেদে সফল হয়েছি। এক বছরের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার করতে পেরেছি। সিটি করপোরেশনে আগে চেইন অব কমান্ড ছিল না। সেটা প্রতিষ্ঠা করেছি।”

করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখন ‘স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার’ মধ্যে কাজ করেন বলে দাবি মেয়র নাছিরের। 

গত বছরের ২৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত এম মনজুর আলমকে এক লাখ ৭০ হাজার ৫২৪ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন আ জ ম নাছির উদ্দিন। ৬ মে শপথ নিলেও বিদায়ী মেয়র ও কাউন্সিলরদের মেয়াদ শেষ না হওয়ায় চট্টগ্রামের মেয়র হিসেবে তিনি আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব নেন ২৬ জুলাই।

এক বছরের ‘সাফল্যের’ খতিয়ান দিতে গিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মান বাড়ানো হয়েছে। স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য চিকিৎসক নিয়োগ, যন্ত্রপাতি ক্রয় ও অবকাঠামো উন্নয়ন করা হয়েছে।

“একটা জেনারেল হাসপাতাল করেছি। সেখানে ডেন্টাল ইউনিট হয়েছে। প্রতিবন্ধী কর্ণার করেছি। বার্ন ও চক্ষু ইউনিটও করা হবে।”

চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনের অগ্রগতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে; বহদ্দারহাটে খাল খনন প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে।

তবে গত অর্থ বছরে বরাদ্দ ‘পর্যাপ্ত ছিল না’ জানিয়ে মেয়র বলেন, “এবার হয়ত সুখবর পাব। তখন জমি অধিগ্রহণে হাত দেব। মাস্টার প্ল্যানে উল্লেখ আছে এমন আরও দুটি নতুন খাল খননের উদ্যোগ নিয়েছি।”

জলাবদ্ধতা নিরসনে মদুনাঘাট থেকে পতেঙ্গা নেভাল এরিয়া পর্যন্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, পানিসম্পদ মন্ত্রীর সঙ্গে ইতোমধ্যে তার কথা হয়েছে। ঠিক হয়েছে, পানি উন্নয়ন বোর্ড ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে।

“বাঁধের ওপর দুমুখী রাস্তা হবে। নগরীর ছোট-বড় ২৬টি খালের মুখে স্লুইস গেট নির্মাণ করা হবে।”

‘জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব’- এমন মন্তব্য করে নাছির বলেন, “আমি আশাবাদী। এসব মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে যেটুকু সময় লাগবে তা তো দিতে হবে।”

অবশ্য নাগরিকদের কাছ থেকে সহযোগিতা না পেলে কোনো উদ্যোগেই সফল হওয়া সম্ভব নয় বলে মনে করিয়ে দেন নাছির।

তিনি বলেন, “আামাদের বাধা হলো সংকীর্ণতা। প্রতিহিংসা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়।

“নাগরিক সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। জনগণের প্রত্যাশা অনেক। কিন্তু নাগরিক দায়িত্ব উনারা ভুলে যান। জনগণের সহযোগিতা না পেলে কোনো পরিকল্পনাই শতভাগ সুফল বয়ে আনবে না।”

বিশ্বের আধুনিক সব নগরের উন্নয়নের নেপথ্যে নাগরিকদের যে দায়িত্বশীল ভূমিকা ছিল, বন্দরনগরীতে সেই সচেতনতা দেখতে পাচ্ছেন না মেয়র।

এ প্রসঙ্গে শহরের সব আবর্জনা রাতে অপসারণের উদ্যোগ ‘শতভাগ’ সফল না হওয়ার কথা তুলে ধরে নাছির বলেন, “এজন্যই পরের ধাপে যাচ্ছি। ডোর টু ডোর আবর্জনা সংগ্রহ করব। আশা করি শতভাগ সফল হব। এরপর পর্যায়ক্রমে যেসব খোলা জায়গায় ময়লা ফেলা হয় এবং ডাম্পিং প্লেস আছে তা সরিয়ে ফেলব।”

সিটি করপোরেশন কিছু এলাকায় সবুজায়নের যে কাজ করছে, আগামী দুই বছরের মধ্যেই পর্যায়ক্রমে তা পুরো শহরে সম্পন্ন করা যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন নাছির।

২০১৫ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) সাড়ে তিনশ কোটি টাকা দেনা থাকার কথা জানিয়েছিলেন নাছির।

এক বছর পর করপোরেশনের আর্থিক পরিস্থিতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কিছু দেনা পরিশোধ করেছি। আর্থিকভাবে একটু চাপে আছি। দেনা শোধে আরও দুই বছর লাগবে।”

নাছির জানান, আগের বছরের তুলনায় রাজস্ব আদায় বাড়লেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। এর ব্যাখ্যাও তিনি দিয়েছেন।

“রাজস্ব আদায়ে অনিয়ম দুর্নীতি ছিল অতীতে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের নিয়েই তো আমাকে কাজ করতে হয়েছে। অনেক পদে লোকও নেই। নতুন করও আরোপ করিনি। তারপরও আদায় বেড়েছে। হোল্ডিং ট্যাক্স পুনঃমূল্যায়নের পর রাজস্ব আদায়ে জোর চেষ্টা চালাব।”

দায়িত্ব নিয়ে চট্টগ্রামের সব সরকারি সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ের জন্য কয়েক দফা সভা করেছিলেন মেয়র।

সে বিষয়ে জানতে চাইলে নাছির বলেন, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পরিপত্র এসেছে। চট্টগ্রামের সব সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান যেন সিসিসি’র সভায় উপস্থিত হয়ে তাদের প্রকল্প অগ্রগতি সম্পর্কে জানায়।

“এখন সত্যিকার অর্থে অভিভাবকত্ব ফিরে পাওয়া গেছে। সবার মধ্যে সমন্বয় খুব ভালো হবে। এতে উন্নয়ন প্রকল্পও গতি পাবে।”

করপোরেশনের আট হাজার জনবল নিয়ে ষাট লাখ মানুষের নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা ‘সম্ভব নয়’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “নতুন অর্গানোগ্রাম প্রণয়ন করছি। প্ল্যানিংসহ কয়েকটি নতুন বিভাগ করা হবে। ঢেলে সাজানো হবে পুরনো বিভাগগুলো। নতুন অর্গানোগ্রাম হলে জনবল অনেক বেড়ে যাবে।”

মেয়র হিসেবে দ্বিতীয়বার বাজেট পেশ করতে যাওয়া নাছির বলেন, “গতানুগতিক বাজেট দিতে চাই না। জুলাইয়ে বাজেট দেওয়ার বাধ্যবাধকতাও নেই। বাজেট দেব অগাস্টে। সব শ্রেণি-পেশা-বয়সের মানুষের জন্য সিসিসি যাতে কিছু করতে পারে সেই পরিকল্পনামত বাজেট দেব।”

লক্ষ্য পূরণের পথে কোনো বাধাই ‘প্রতিবন্ধকতা হতে পারবে না’ বলে আশা করছেন মেয়র নাছির।

“আমার অভিধানে ব্যর্থতা বলতে কোনো শব্দ নেই। যত বাধাই আসুক যে পরিকল্পনা আছে তা বাস্তবায়ন করবই।”