এমবিবিএস ভর্তিতে বাধা-মামলা, ২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ

৪৪ বছর ধরে আইনি লড়াই শেষে নিজেকে ‘সঠিক’ প্রমাণ করতে পেরে খুশি বান্দরবানের সলিল।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 May 2023, 04:55 PM
Updated : 6 May 2023, 04:55 PM

চার দশক আগে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারেননি সলিল চক্রবর্তী। সেসময় সার্টিফিকেট জালিয়াতির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে হয়েছিল মামলাও।

দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে অবশেষে নিজেকে সঠিক প্রমাণ করেছেন বান্দরবানের বাসিন্দা সলিল। দেশের সর্বোচ্চ আদালত তাকে দুই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।

বিচারপতি মো. নুরুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ গত বুধবার রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন খারিজ করে দিয়ে সলিল চক্রবর্তীকে দুই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেন।

৪৪ বছরের আইনি লড়াইয়ে জয়ী হয়ে বর্তমানে প্রায় ৬০ বছর বয়সী সলিল ন্যায়বিচার পেয়েছেন বলে মনে করছেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি যে সঠিক ছিলেন তা প্রমাণিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন।

দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে জয়ী সলিল মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে না পেরে গণিত বিষয়ে পড়ালেখা করেন। বর্তমানে নিজেদের পারিবারিক ব্যবসা দেখাশোনা করছেন।

তার আইনজীবী ইউনূস আলী আখন্দ শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন খারিজ করে সলিল চক্রবর্তীকে দুই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। পূর্ণাঙ্গ রায় পাবার পর বিস্তারিত জানা যাবে।

মামলার নথি ও আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৭৮-৭৯ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন সলিল। সনদ জালিয়াতির অভিযোগ এনে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে দেওয়া হয়নি। এর বিরুদ্ধে তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে আবেদন করেন।

পরে তার বিরুদ্ধে তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরো ফৌজদারি মামলার সুপারিশ করে। এ মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রও দেওয়া হয় এবং মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে যাবার পর সেটি থেকে তিনি ২০০০ সালে বেকসুর খালাসও পান।

আইনজীবী ইউনুস জানান, এরপর সলিল চক্রবর্তী মেডিকেল কলেজে তাকে বঞ্চিত করার বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে থাকেন। এ ঘটনায় হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। এর প্রেক্ষিতে ২০০৭ সালে তার পক্ষে রায় দেয় আদালত।

পরে সে রায় স্থগিত চেয়ে চেম্বার আদালতে আপিল করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। শুনানির পর ওই রায় স্থগিত করা হয়। সবশেষে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আপিল করলে গত বুধবার সেটি খারিজ করে দেওয়া হয়।

ওই আইনজীবী বলেন, “একজন লোকের ৪৪ বছরের জীবন নষ্ট করে দেওয়া হল। দায়টা কে নেবে?  সে সময়ে উচিত ছিল প্রথমে তাকে ভর্তি করানোর। তারপরে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার ভর্তি বাতিল করতে পারত। এটি সংশ্লিষ্টদের ত্রুটি।”

প্রতিক্রিয়ায় সলিল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি লড়াইয়ে জিতেছি। দীর্ঘ আইন প্রক্রিয়ায় আমি কখনও হাল ছাড়িনি। কারণ আমি অন্যায় করিনি। আমার বিরুদ্ধে যে অন্যায় অভিযোগ, সেটা প্রমাণ করতেই দীর্ঘ সময় ধরে এ লড়াই জারি রেখেছি।”

বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি ন্যায়বিচার পেয়েছি। আমার বিরুদ্ধে যারা অন্যায় করেছে, তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই।”

সলিলের আইনজীবী ইউনুস বলেন, “রাষ্ট্রপক্ষ চাইলে এ আদেশের রিভিউ করতে পারে।”