কেউ শনাক্ত হলে তাকে আলাদাভাবে রেখে ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) রেখে চিকিৎসা দেওয়া হবে।
Published : 18 Aug 2024, 08:29 PM
বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক তৈরি করা এমপক্স ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থার্মাল স্ক্যানার চালু করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে তিন সদস্যের মেডিকেল টিম। সর্তক করা হয়েছে সবগুলো এয়ারলাইন্সকে।
লক্ষণ আছে এমন কাউকে শনাক্ত করা হলে তাদের পৃথক করে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।
এদিকে চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগও এই ভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। এমপক্স রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে চিকিৎসক, স্বাস্থ্য সহকারী এবং সেবা সংশ্লিষ্টদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেও বলা হয়েছে।
চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তাসলিম আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিমানবন্দরে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। শনিবার রাত সাড়ে ৯টা থেকে আমাদের টিম কাজ করছে।
“আজ পুরোদমে থার্মাল স্ক্যানিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে। বিদেশ থাকা আসা সব যাত্রীদের স্ক্যানিং করা হচ্ছে। চিকিৎসকসহ আমাদের তিন সদস্যের টিম কাজ করছে। সবগুলো এয়ারলাইন্সকে আমরা চিঠি দিয়ে সতর্ক করেছি।”
রোববার রাত পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে কোনো এমপক্স আক্রান্ত রোগী বা সন্দেহভাজন কেউ শনাক্ত হয়নি জানিয়ে গ্রুপ ক্যাপ্টেন তাসলিম আহমেদ বলেন, “তাপমাত্রা ও ইচিং বা এমপক্স এর লক্ষণ আছে এমন কেউ শনাক্ত হলে তাকে বিমানেই রেখে আমাদের জানাতে এয়ারলাইন্সগুলোকে বলা হয়েছে।
“কেউ শনাক্ত হলে তাকে আলাদাভাবে রেখে ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) রেখে চিকিৎসা দেওয়া হবে। সংক্রামক রোগের জন্য সেখানে ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে।”
বিমানবন্দরে এমপক্স সর্তকতা বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মো. ইলিয়াছ চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিমানবন্দরে কোভিডের সময় আমরা পৃথক ডেস্ক চালু করেছিলাম। সেটা এখনো আছে। তবে লোকবল কমানো হয়েছিল। এখন বিভিন্ন উপজেলা থেকে ডাক্তার ও টেকনোলজিস্ট এনে ডেস্কের জনবল আবার বাড়ানো হবে।
“বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে আমরা জনবল দিয়ে সহযোগিতা করব।”
জেলায় এমপক্স ঠেকাতে করণীয় নির্ধারণ বিষয়ে জানতে চাইলে সিভিল সার্জন বলেন, “প্রস্তুতির জন্য ডিজি হেলথ থেকে নির্দেশনা এলে আমরা সেই মোতাবেক প্রস্তুতি নিব।
“এমপক্স গুটি বসন্তের মত এক ধরনের পক্স। এটি ছোঁয়াচে, মানে ভাইরাল ডিজিজ। তাই কোথাও কোনো রোগী শনাক্ত হলে যারা সেই রোগীকে সেবা দিবেন সেই ডাক্তার, নার্সসহ অন্যদের ঝুঁকি বেশি। তাই রোগীর সংস্পর্শে যারা আসবেন তারা অবশ্যই সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধোবেন এবং মাস্ক পরিধান করবেন।”
শিশু, বয়স্ক, সন্তান সম্ভবা এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এই চার ধরনের মানুষ এমপক্স ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তাদের ঝুঁকি বেশি থাকবে বলেও জানান সিভিল সার্জন।
বিদেশ থেকে আসার ২১ দিনের মধ্যে এমপক্সের উপসর্গ দেখা দিলে ১০৬৫৫ নম্বরে কল করতে অনুরোধ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, জ্বর, মাথাব্যথা, পেশী ব্যথা, পিঠে ব্যথা, দুর্বলতা, ফোলা লসিকা গ্রন্থি ও ত্বকের ফুসকুড়ি বা ক্ষত এমপক্স তথা মাঙ্কিপক্সের সাধারণ উপসর্গ।
কোভিড মহামারীর ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই দেশে দেশে যুদ্ধবিগ্রহে বিপর্যস্ত বিশ্বে এবার উদ্বেগ ছড়িয়েছে এমপক্স।
এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলে এমপক্স কোভিডের মতো অতিমারী হয়ে উঠবে কি না, তার নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-ডব্লিউএইচও। এরই মধ্যে বিশ্বকে সতর্ক করেছে সংস্থাটি।
আফ্রিকার কয়েকটি দেশে এমপক্সের প্রাদুর্ভাবকে ‘বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ তৈরি করার মতো জরুরি স্বাস্থ্য অবস্থা’ ঘোষণা করেছে ডব্লিউএইচও।
বিবিসি লিখেছে, এবার ভাইরাসজনিত অতিসংক্রামক রোগটি ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর (ডিআরসি) পর প্রতিবেশী দেশগুলোতেও ছড়িয়েছে। আগে এমপক্স হিসেবে পরিচিত অত্যন্ত সংক্রামক এই রোগের প্রাথমিক প্রাদুর্ভাব চলাকালে ডিআর কঙ্গোতে অন্তত ৪৫০ জনের মৃত্যু হয়।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, এই রোগটি এখন মধ্য ও পূর্ব আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এই রোগের নতুন একটি ধরণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকায় ও এর উচ্চ মৃত্যু হারের কারণে বিজ্ঞানীরা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন।
এমপক্স ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ যেমন যৌন সম্পর্ক, গায়ে গা লাগা ও অন্য জনের খুব কাছে গিয়ে কথা বলা বা নিঃশ্বাস নেওয়ার মাধ্যমে ছড়ায়।
এই রোগের সংক্রমণে জ্বরের মতো লক্ষণ দেখা দেয়, চামড়ায় ক্ষত তৈরি হয় আর এটি প্রাণঘাতী হতে পারে; এই রোগে আক্রান্ত প্রতি ১০০ জনের মধ্যে অন্তত চারজনের মৃত্যু হয়।
এমপক্সের দুটি ধরন আছে- ক্লেইড-১ ও ক্লেইড-২।
এর আগে ২০২২ সালে ক্লেইড-২ এর তুলনামূলক মৃদু সংক্রমণ চলাকালে জনস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু এবার অধিক প্রাণঘাতী ক্লেইড-১ এর প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে।