আইনজীবী কফির উদ্দিন বলেন, “আমরা আবারো জামিনের আবেদন করব। প্রয়োজনে উচ্চ আদালতে জামিন আবেদন করা হবে।”
Published : 18 Aug 2024, 09:32 PM
স্ত্রী মিতু হত্যা মামলায় সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
রোববার চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিনের আদালত এই আদেশ দেন।
গত ১৪ অগাস্ট বাবুল আক্তারের পক্ষে করা জামিন আবেদনের ওপর শুনানির পর রোববার আদেশের জন্য রেখেছিল আদালত।
বাবুল আক্তারের আইনজীবী মো. কফিল উদ্দিন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আদালত জামিন নামঞ্জুর করে বলেছেন, মামলায় ইতিমধ্যে ৫২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। আসামির বিরুদ্ধে দাম্পত্য কলহের জেরে স্ত্রীকে হত্যার গুরুতর অভিযোগ আছে, তাই জামিন নামঞ্জুর করা হলো।”
এর আগে ১৪ অগাস্ট জামিন আবেদনের শুনানিতে কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করেন বাবুলের আইনজীবীরা।
আইনজীবী কফিল উদ্দিন বলেন, “আবেদেনে আমরা বলেছিলাম, বাবুল তিন বছর তিন মাস ধরে জেলে আছেন। এছাড়া পিবিআই প্রধানের সাথে অহি-নকুল সম্পর্কের কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে ঘটনার সাড়ে পাঁচ বছর পর বাবুলের শ্বশুরকে দিয়ে পারিবারিক কলহের অভিযোগ করান। অথচ বাবুলের শ্বশুর ঘটনার পরের সাড়ে পাঁচ বছরে সবসময় বলেছেন বাবুল ও মিতুর পারিবারিক সম্পর্ক ভালো।
“এছাড়া মামলাটি তদন্তকালে পিবিআই প্রধানের কাছে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও আইনের ব্যত্যয় ঘটেছে। পিবিআইতে প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. মাঈনুদ্দিন দেড় বছর তদন্ত শেষে যে অগ্রগতি প্রতিবেদন দেন তাতে আসামি হিসেবে ৯ জনের নাম ছিল। এদের মধ্যে বাবুল আক্তারের নাম ছিল না।”
আইনজীবী মো. কফিল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “মো. মাঈনুদ্দিন অবসরে গেলে সন্তোষ কুমার চাকমাকে তদন্তকারী কর্মকর্তা করা হয়। তিনি হাই কোর্টে দেয়া অগ্রগতি প্রতিবেদনেও ৯ জনের সম্পৃক্ততার কথা বলে অনুমতি পেলে অভিযোগপত্র জমা দেবেন বলে জানান।
“অথচ ২০২১ সালের ৬ মে পিবিআই প্রধানের সাথে বৈঠক শেষে চট্টগ্রামে ফিরে অভিযোগপত্র জমা দেয়ার কথা বলে মামলার বাদি হিসেবে বাবুল আক্তারকে ডেকে পাঠান তদন্তকারী কর্মকর্তা। তারপর বাবুলকে পিবিআই কার্যালয়ে আটকে রেখে বাবুলের শ্বশুরসহ তিনজন সাক্ষীকে ঢাকা থেকে আনা হয়। এরপরই বাবুলের শ্বশুর বাবুলের বিরুদ্ধে মামলা করেন।”
এই আইনজীবী বলেন, “আমরা আদালতে বলেছি, বাবুল ও পিবিআই প্রধান একে অন্যের বিরুদ্ধে মোট তিনটি মামলা করেছেন। তাদের সম্পর্ক খুব খারাপ। কিন্তু জামিন আবেদন বিবেচনার ক্ষেত্রে এসব বিষয় বিবেচনায় নেয়া হয়নি।
“আমরা আবারো জামিনের আবেদন করব। প্রয়োজনে উচ্চ আদালতে জামিন আবেদন করা হবে।”
মিতু হত্যা মামলায় মোট ৫২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে আদালতে। এই মামলায় মোট সাক্ষী ৯৭ জন।
গত বছরের ৯ এপ্রিল মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেনের সাক্ষ্যের মধ্যে দিয়ে মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। ইতিমধ্যে মিতুর মা শাহেদা মোশাররফসহ বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন।
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় সে সময়কার চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতুকে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
এসপি বাবুল ওই ঘটনার কিছুদিন আগেই চট্টগ্রাম থেকে বদলি হন। তিনি ঢাকায় কর্মস্থলে যোগ দিতে যাওয়ার পরপরই চট্টগ্রামে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।
সাড়ে তিন বছর তদন্ত করেও ডিবি পুলিশ কোনো কূলকিনারা করতে না পারার পর ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আদালতের নির্দেশে মামলার তদন্তভার পায় পিবিআই।
এরপর ২০২১ সালের মে মাসে পিবিআই জানায়, স্ত্রী মিতুকে হত্যা করা হয়েছিল বাবুল আক্তারের ‘পরিকল্পনায়’। আর এজন্য খুনিদের ‘লোক মারফত তিন লাখ টাকাও দিয়েছিলেন’বাবুল।
পরে বাবুলের মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার পর মিতুর বাবা আরেকটি মামলা করেন। তবে সেই মামলা আদালতে না টেকার পর বাবুলের মামলাটিই পুনরুজ্জীবিত হয়।
২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সেই মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পিবিআই। তাতে বাবুলসহ সাতজনকে আসামি করা হয়। এরপর ওই বছরের ১০ অক্টোবর সেই অভিযোগপত্র গ্রহণ করে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত।