প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা যদি ভেবে থাকেন, আপনারা গোস্বা করে বসে থাকবেন, অফিস-আদালতে কাজ করবেন না, তাহলে ভুল ভাবছেন।”
Published : 08 Sep 2024, 10:07 PM
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, তারা অন্তবর্তীকালীন সরকারের মধ্যে দিয়ে পরিবর্তন দেখতে চান এবং সেই পরিবর্তন যখন আসবে, তখন নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব তুলে দেওয়া হবে।
রোববার বিকালে চট্টগ্রামের লালদিঘী মাঠে এক সমাবেশে অন্তবর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ নিয়ে বলতে গিয়ে তার এ মন্তব্য আসে।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “সাংবাদিক ভাইয়েরা আমাদের প্রশ্ন করেন, এ অন্তবর্তীকালীন সরকার কতদিন থাকবে। আমরা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, যতদিন পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো আইন, বিচার, শাষণ বিভাগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং মানুষ যেখানে মৌলিক অধিকার ভোগ করে, সেখানে আস্থা ফিরে না আসবে, ততদিন পর্যন্ত অন্তবর্তীকালীন সরকারকে আমরা দেখতে চাই।”
তিনি বলেন, “আমরা অন্তবর্তীকালীন সরকারের মধ্যে দিয়ে পরিবর্তন দেখতে চাই। এ পরিবর্তন যখন আসবে, তখন নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব তুলে দেওয়া হবে। আমরা এমন একটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চাই, যেখানে আমাদের প্রেসিডেন্ট যে অবস্থায় চিকিৎসা নেবেন নিঃস্ব ব্যক্তিও একইভাবে চিকিৎসা নেবেন।”
এই সমন্বয়ক বলেন, তাদের বারবার একটি প্রশ্ন করা হয়- ‘বিকল্প কে?’
মাঠে থাকা সমবেত শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতা তখন বলে উঠে- ‘আমরা’।
অন্তবর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতা করতে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের আহ্বান জানিয়ে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “আপনারা যদি ভেবে থাকেন, আপনারা গোস্বা করে বসে থাকবেন, অফিস-আদালতে কাজ করবেন না, তাহলে ভুল ভাবছেন। এ আন্দোলনে কুলি ছিল, কামার ছিল, মুচিও ছিল, ঠিক একইভাবে এ আন্দোলনে শিক্ষিত শ্রেণিও ছিল।”
পুলিশ সদস্যদের কাজে ফেরার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “ছাত্র -পুলিশ ভাইভাই। আমরা আপনাদের বলতে চাই, আপনারা আপনাদের কাজে ফিরে আসুন। আপনাদের মধ্যে কারা খুনি এবং দোসর ছিল- সব কিন্তু আমরা জানি। সব পুলিশ কিন্তু বেনজির না, সব পুলিশ ডিবি হারুন না। আমার বাবা, আমার ভাই, তারাও কিন্তু পুলিশ। সুতরাং পুলিশদের আমরা সহযোগিতা করবো। রাষ্ট্র পুনর্গঠনের কাজে যারা এখন মাঠে রয়েছেন, তাদের প্রতিপক্ষ না ভেবে, সহযোগী ভেবে আমরা রাষ্ট্র পুনর্গঠনের কাজ এগিয়ে নেব।
পুলিশকে কাজে ফেরার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি হুঁশিয়ারি দিয়ে হাসনাত বলেন, “পুলিশদের আমরা একটা বার্তা দিতে চাই। বেনজীর কিন্তু দেশে থাকতে পারে নাই, ডিবি হারুন পারে নাই। সুতরাং আপনারা যদি কর্মমুখী না হন, ক্ষমতামুখী হন, আপনাদের পরিণতিও বেনজীর-হারুনের মত হবে।”
তিনি বলেন, “পুলিশের সাথে কোনো বিভেদ নাই। আপনারা আবার রাস্তায় ফিরে এসে আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। আমরা আপনাদের আশ্বস্ত করছি, রাষ্ট্র পুনঃর্গঠনের কাজে আমরা আপনাদের সহযোগী হিসেবে সবসময় সাথে থাকব।”
শিক্ষার্থীদের ঐক্যে বিভেদ সৃষ্টির শঙ্কা প্রকাশ করে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এ সমন্বয়ক। তিনি বলেন, “সংকটকালে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলাম, এখন রাষ্ট্র পুনর্গঠনের সময় আমাদের একসাথে থাকতে হবে। প্রভু চলে গিয়েছে, কিন্তু প্রভুর দাসরা আমাদের মধ্যে লুকায়িত রয়েছে।
“ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আমরা যেভাবে ক্ষুদ্র স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে বৃহত্তর স্বার্থকে সামনে রেখে আমরা কাজ করেছি। আমরা রাষ্ট্র পুনগর্ঠনের জন্য একসাথে কাজ করব।”
এদিকে সরকার পতনের পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে পুঁজি করে একটি পক্ষের ফায়দা লোটার অভিযোগ করে তিনি বলেন, “আপনারা জানেন, আন্দোলন পরবর্তী সময়ে আমাদের রাস্তাঘাটে কোনো পোস্টার ছিল না। অমুক দল তমুক দল ছিল না। এখন যদি রাস্তায় বের হোন, দেখবেন রাস্তায় পোস্টারে ভরে গেছে, শুধু ছবিগুলোর পরিবর্তন হয়েছে।
“আমাদের আন্দোলন হয়েছিল সেটা হয়েছিল ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে, দুর্নীতি, বৈষ্যম্যের বিরুদ্ধে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। টেন্ডারবাজ, দুর্নীতিবাজ যারা রয়েছে, তাদের সতর্ক করতে চাই- আপনারা ১৬ বছর একটা দলের ছত্রছায়ায় ছিলেন। এখন যদি আরেকটি দলের ছত্রছায়ায় এসে দুর্নীতি করার চেষ্টা করেন ছাত্রজনতা আপনাদেরকে দেখে নেবে।”