“রাফি কার্যালয়ে এসে মাসউদকে প্রশ্ন করেন, আজকের কর্মসূচির কথা আমাদের জানিয়েছেন? জবাবে মাসউদ বলেন, হু আর ইউ? ঠিক তখনই আমাদের অবরুদ্ধ করে ফেলে”, দাবি করেন সমন্বয়ক রাসেল।
Published : 11 Jan 2025, 11:55 PM
চট্টগ্রামে সাংগঠনিক কর্মসূচি পালন করতে আসা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদ ও এক সমন্বয়ককে অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনাকে ঘিরে দুই পক্ষের মধ্যে মারমারির ঘটনাও ঘটেছে।
এজন্য একে অপরকে দোষারোপ করেছে সংগঠনের চট্টগ্রামের দুই সমন্বয়ক ও তার অনুসারীরা। আর এক সমন্বয়ক অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
নগরীর দামপাড়া এলাকায় ওসায়ার মোড়ে সংগঠনের কার্যালয়ে মুখ্য সংগঠক হান্নান মাসউদ ও রাসেল আহমেদকে অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনা ঘটে। এটিকে কেন্দ্র করে সেখানে দুই পক্ষ মারামারিতে জড়ায়। এতে কয়েকজন আহত হওয়ার দাবি করা হয়েছে।
এ হামলার জন্য একটি পক্ষ সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি ও তার ঘনিষ্টদের এবং অপর পক্ষ রাসেল ও তার পক্ষের লোকজনকে দায়ি করেছেন।
সন্ধ্যায় মারামারিতে দুই পক্ষই লাঠিসোটা নিয়ে পরষ্পরের ওপর হামলার করেছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন এবং পরে দুই পক্ষই সাংবাদিকদের সামনে এসে একই অভিযোগ করেছেন।
শনিবার বিকাল ৪টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর ২ নম্বর গেট এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে ‘জুলাই ঘোষণাপত্রের’ পক্ষে জনসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ শুরু হয়।
কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছিল।
বিপ্লব উদ্যান থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় লিফলেট বিতরণ শেষে জিইসি মোড় সংলগ্ন পেনিনসুলা হোটেলের সামনে গিয়ে কর্মসূচি শেষ হয়। এরপর সবাই নগরীর ওয়াসার মোড়ে সংগঠনের্ যান।
অভিযোগ উঠেছে, সেখানে তাদের কার্যালয়ের ভেতর তাদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। তখন ওই কার্যালয়ে ছিলেন আবদুল হান্নান মাসউদ ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমদ। প্রায় এক ঘণ্টা পর তারা সেখান বের হন।
অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রামের সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফির অনুসারীদের অভিযোগ, জিইসি মোড়ে তাদের ওপর হামলা হয়। এরপর তারা এ বিষয়ে জানতে ওয়াসার মোড়ের ওই কার্যালয়ে গিয়েছিলেন।
এসব ঘটনায় দুই পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে বলে দাবি করেছে উভয় পক্ষ।
সার্বিক বিষয় জানাতে রাতে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে আসেন সমন্বয়ক রাসেল আহমদ ও তার অনুসারীরা। সংবাদ সম্মেলন চলাকালে সেখানে হাজির হন রাফি। সেখানে গিয়ে তিনি ‘বিরোধীপক্ষের’ কয়েকজনের তোপের মুখে পড়েন।
এরপর রাফিও সংবাদকর্মীদের উদ্দেশ্যে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন। তারপর চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে দুই পক্ষকে পাল্টাপাল্টি স্লোগান দিতে দেখা গেছে। সেখানে পুলিশও ছিল।
সংবাদ সম্মেলনে রাসেল আহমেদ দাবি করেন, “জিইসি মোড়ে তাদের কর্মসূচির শেষ বক্তা ছিলেন রাফি। সেখানে কর্মসূচি শেষ করে সংগঠনের পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে আমরা ‘আরটিএফপি’ নামের একটি অফিসে বসি।
“সেখান থেকে রাফিকে বারবার ফোন দিয়েও পাচ্ছিলাম না। প্রায় ৩০ মিনিট পর সে দলবল নিয়ে আসে। কিছুদিন আগে ১০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠে যে রিজাউর রহমানের বিরুদ্ধে, সেসহ তার ‘ডট গ্যাং’ চলে আসে।”
রাসেল আহমেদের ভাষ্য, “কার্যালয়ে এসে মাসউদকে সে প্রশ্ন করে, ‘আজ যে কর্মসূচি দিয়েছেন, তা আমাদের জানিয়েছেন?’ জবাবে মাসউদ বলেন, ‘হু আর ইউ?’ ঠিক তখন ডট গ্যাংয়ের লিডার সাদিক আরমান, নিজাম উদ্দিনসহ উদ্যত ছেলেমেয়েরা আমাদের অবরুদ্ধ করে ফেলে। আমরা এক ঘণ্টায় সেখান থেকে বের হতে পারিনি।”
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে রাসেল বলেন, “তারা বারবার সেখানে স্লোগান দেয় এবং ভাঙচুর চালায়। সেখানে সিসিটিভি ফুটেজ আছে। দেখলে জানতে পারবেন কী ঘটেছে।
“এটা ধৃষ্টতা ও ঔদ্ধত্য। আমাদের সাত সহযোদ্ধার ওপর হামলা চালায়। তারা কিছুটা আঘাতপ্রাপ্ত হন। পরবর্তী সময়ে আমরা ছাত্রদলের সহযোদ্ধাদের সহযোগিতায় সেখান থেকে বের হয়ে যাই।”
সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক নেতা ওমর ফারুক সাগর বলেন, “হান্নান মাসউদ ও সমন্বয়ক রাসেল আহমদ অবরুদ্ধ শুনে আমি সেখানে গিয়েছিলাম। সেখানে স্বৈরাচারের দোসর ছাত্রলীগ কর্মীদের নেতৃত্বে আমিসহ অন্যরা হামলা শিকার হই।
“আমি সাময়িক চিকিৎসা নিয়ে এখানে এসেছি। রিজাউর রহমান, সাদাফ, সাদিক আরমান- এদের নেতৃত্বে হামলা হয়েছে।”
সংবাদ সম্মেলনের শেষ পর্যায়ে সেখানে হাজির হন রাফি। তিনি বক্তব্য দিতে চাইলে আয়োজকরা সংবাদ সম্মেলন শেষ করে দেয়।
একপর্যায়ে আয়োজক পক্ষের অনুসারীদের একজন রাফির দিকে উত্তেজিত হয়ে এগিয়ে যান। তখন অন্যরা তাকে সরিয়ে নেন।
এরপর রাফি তার আহত এক অনুসারীসহ তিনজনকে নিয়ে নিজের বক্তব্য তুলে ধরার চেষ্টা করেন। কিন্তু অন্যপক্ষের অনুসারীরা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন।
রাফি বক্তব্যের শুরুতে বলেন, “জানি না এর আগে এখানে কী বলা হয়েছে। আজ আমাদের পূর্বঘোষিত কোনো কর্মসূচি ছিল না। হান্নান ভাই (আবদুল হান্নান মাসউদ) গতকাল কল করে বলেন ‘আমি চট্টগ্রামে আসতেছি।’ আজ যে লিফলেট বিতরণ ছিল সেটা।
“বিকাল ৩টায় কর্মসূচি ছিল। আমি যেহেতু ক্যাম্পাসে থাকি। আমার সেখানে যেতে দেরি হয়।”
বাধার মুখে বক্তব্য মাঝপথে থামানোর কিছুক্ষণ পর রাফি আবার বলেন, “এই হামলায় যে বা যারা জড়িত থাকুক, প্রত্যেককে বিচারের আওতায় আনতে হবে।”
তখন উপস্থিত কয়েকজন বলেন, “হামলাকারীরা আপনার সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছেন।”
রাসেলের অনুসারীরা তখন নানা স্লোগান দিতে থাকেন। এরপর রাফি বলেন, “যারাই জড়িত থাকুক বিচার করতে হবে। আমি যদি জড়িত থাকি আমারও বিচার করতে হবে।”
ওয়াসার মোড়ের ঘটনা নিয়ে রাসেলের বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে রাফি সাংবাদিকদের বলেন, “আলোচনার সময় আমাদের মধ্যে বিতণ্ডা হয়েছে। এর বেশি কিছু হয়নি। কাউকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়নি।”