এ নিয়ে একাদশবারের মত বাংলাদেশে এসেছে উড়ন্ত এই চক্ষু হাসপাতাল।
Published : 21 Nov 2024, 09:05 PM
বিশ্বের একমাত্র উড়ন্ত চক্ষু হাসপাতাল অরবিস গত ৩৯ বছরে বাংলাদেশে ৭৮ লাখ চক্ষু পরীক্ষা করেছে, ৪৫ লাখ ব্যক্তির চোখের চিকিৎসা দিয়েছে।
এছাড়া ২ লাখ ৫৮ হাজার চক্ষু সার্জারি এবং ৪০ হাজারের বেশি মানুষকে চোখের চিকিৎসার উপর প্রশিক্ষণ দিয়েছে অরবিস।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে অবস্থানরত অরবিস ফ্লাইং আই হসপিটালের সেমিনার কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
এ নিয়ে একাদশবারের মত বাংলাদেশে এসেছে উড়ন্ত এই চক্ষু হাসপাতাল; এর মধ্যে চট্টগ্রাম সফর এ নিয়ে পঞ্চমবারের মত।
সংবাদ সম্মেলনে অরবিস ইন্টারন্যাশনালের ভাইস প্রেসিডেন্ট (গ্লোবাল কমিউনিকেশনস অ্যান্ড মার্কেটিং) ক্রিস্টিন টেইলর বলেন, “বাংলাদেশে অরবিস গত ৩৯ বছর ধরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করছে। গত প্রায় চার দশকে অরবিস শিশুদের চক্ষু চিকিৎসা, মাইক্রোসার্জারি, রেটিনা সার্জারি, কর্নিয়াল রোগ এবং আই ব্যাংকিং, প্রিম্যাচিউর শিশুদের রেটিনোপ্যাথি (আরওপি) এবং ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির ওপর স্থানীয় চিকিৎসকদের দক্ষতা ও জ্ঞান উন্নত করতে সহায়তা করেছে।
তিনি বলেন, অরবিস বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ৪২টি ভিশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছে, যা বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকাগুলোতে চক্ষু সেবা ছড়িয়ে দিয়েছে।
“এর মধ্যে রয়েছে নারী-নেতৃত্বাধীন গ্রিন ভিশন সেন্টার যা নারীদের জন্য প্রচলিত বাধাগুলো দূর করে সেবার সুযোগ বৃদ্ধি করে।
“এছাড়া অরবিস ১৭টি সেকেন্ডারি হাসপাতাল, চারটি টার্শিয়ারি হাসপাতাল, চারটি ট্রেনিং অ্যান্ড রিসোর্স সেন্টার এবং দুটি ডিজিটাল প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করেছে।”
অরবিস ইন্টারন্যাশনালের সহযোগী পরিচালক (গ্লোবাল কমিউনিকেশনস অ্যান্ড মার্কেটিং) জেনা মন্টগোমারি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, অরবিস বাংলাদেশের ৪০০টি কমিউনিটি ক্লিনিককে দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষার সরঞ্জাম দিয়ে সহযোগিতা করেছে। বাংলাদেশে প্রথমবারের মত প্রিম্যাচিউর শিশুদের রেটিনোপ্যাথি নির্ণয় ও ব্যবস্থাপনার জাতীয় গাইডলাইন তৈরি করতে অংশীদার হয়েছে অরবিস।
“এই রোগটি শিশুদের অন্ধত্বের অন্যতম প্রধান কারণ। ২০০০ সালে অরবিস বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদী প্রোগ্রাম চালু করে এবং স্থানীয় চক্ষু হাসপাতাল ও এনজিওদের সাথে মিলে চক্ষু রোগ প্রতিরোধ ও দৃষ্টিশক্তি পুনরুদ্ধারের জন্য কাজ করে। যা দূরবর্তী এলাকায় যেমন কক্সবাজারের রোহিঙ্গা সম্প্রদায় এবং সিলেটের নারী চা শ্রমিকদের মধ্যেও পৌঁছে গেছে।”
জেনা মন্টগোমারি বলেন, অরবিসের মিশনে চার দশকের বেশি সময় ধরে সহায়তা করছে ফেডেক্স; ২২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি অনুদান ও পণ্যসামগ্রী পরিবহনের মাধ্যমে তারা অবদান রেখেছে।
২০২১ সালে ফেডেক্স তাদের দৃষ্টি সুরক্ষা মিশনে অরবিসের প্রতি নতুনভাবে প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করে। যেখানে তারা ৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান দেয়।
“এই অনুদান অরবিসের ফ্লাইং আই হসপিটাল এবং এর প্রকল্পগুলির জন্য আর্থিক, লজিস্টিক এবং অপারেশনাল সহায়তা প্রদান করবে আগামী পাঁচ বছর। এছাড়া ফেডেক্স বিমান যন্ত্রাংশ, রক্ষণাবেক্ষণ এবং পাইলট প্রশিক্ষণ দেবে।”
অরবিস একটি আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থা, যা দৃষ্টিশক্তি সুরক্ষার কার্যক্রম পরিচালনা করে।
অরবিস বিশ্বজুড়ে ২০০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে কাজ করছে, যাতে ব্যক্তি, পরিবার এবং সমাজ উন্নতি করতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী প্রায় ১ বিলিয়ন মানুষ এমন অন্ধত্ব ও দৃষ্টিশক্তি হ্রাসের শিকার যা সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধযোগ্য।
চার দশকের বেশি সময় ধরে অরবিস এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে শক্তিশালী ও টেকসই চক্ষু সেবা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে কাজ করছে।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে এবং অ্যালকন কেয়ারস, অ্যালকন ফাউন্ডেশন ও ফেডেক্স-এর সহায়তায়, অরবিস ফ্লাইং আই হসপিটাল চট্টগ্রামে দুই সপ্তাহব্যাপী চক্ষু প্রশিক্ষণ প্রকল্প শুরু করেছে।
বাংলাদেশে চক্ষু সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসকদের উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য এটি অরবিস ফ্লাইং আই হসপিটালের একাদশতম সফর। প্রথমবার ১৯৮৫ সালে এবং সর্বশেষ ২০১৭ সালে এই প্রশিক্ষণ প্রকল্প হয়েছিল।
প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবস্থিত ফ্লাইং আই হসপিটাল এবং অরবিসের পার্টনার হাসপাতাল চট্টগ্রাম আই ইনফার্মারি এবং ট্রেনিং কমপ্লেক্সে (সিইআইটিসি) হচ্ছে। ১৭ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এ প্রশিক্ষণ চলবে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত।
অরবিস আফ্রিকা, এশিয়া, ক্যারিবিয়ান এবং ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে কর্মসূচি পরিচালনা করে। তারা উদ্ভাবনী প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি বিকাশ করে, যার মধ্যে রয়েছে পুরস্কারপ্রাপ্ত টেলিমেডিসিন এবং ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম সাইবারসাইট।
একটি এমডি-১০ বিমানের ওপর সম্পূর্ণভাবে স্বীকৃত চক্ষু শিক্ষার হাসপাতাল হিসেবে বিশ্বে সমাদৃত অরবিস।