১৩৬ প্রজাতির ফুলের লক্ষাধিক গাছ নিয়ে এবারের উৎসব, থাকবে পানিতে ভাসানো বাগানও।
Published : 03 Jan 2025, 11:48 AM
বিশালাকার সাদা পাখির পিঠ সেজেছে লাল-সাদা-বেগুনি ও গোলাপি ফুলে ফুলে, পাখা আর লেজ বেয়ে তা মিলিয়ে গেছে মাটিতে।
খানিকটা দূরেই ‘সবুজ প্রজাপতিও’ সেজেছে বাহারি ফুলে। মাঠজুড়ে দোল খাচ্ছে থরে থরে সাজানো রঙবেরঙের ফুল। চট্টগ্রামের ডিসি পার্কের এই দৃশ্য দেখে মনে হবে যেন ফুলের রাজ্য, নজর কাড়বে যে কারও।
পার্কের জলাশয়ের পাশে খালি জায়গায় শেডে বসানো হয়েছে ফুল গাছ। কোনোটি লাল, কোনোটি হলুদ, গোলাপি, সাদা কিংবা মেরুণ। জলাশয়ের মাঝেও বসেছে বাঁশের সাঁকো, মাচা। সেখানেও বসবে ফুলসহ গাছ। থাকবে পানিতে ভাসানো বাগানও।
যশোর, রংপুর, ঢাকা, দিনাজপুর, বগুড়াসহ সারা দেশ থেকেই আনা হয়েছে এসব ফুল। শনিবার থেকে মাসব্যাপী চলবে উৎসব।
এ নিয়ে তৃতীয়বারের মত ডিসি পার্কে ফুল উৎসবের আয়োজন করেছে জেলা প্রশাসন। দেশি-বিদেশি ১৩৬ প্রজাতির ফুলের লক্ষাধিক গাছ নিয়ে এবারের আয়োজন।
ফুল উৎসবের সঙ্গে রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, গ্রামীণ মেলা, ঘুড়ি, বই ও পিঠা উৎসব, লেজার লাইট শো, ভিআর গেইম, মুভি শো, ভায়োলিন শো, পুতুল নাচসহ নানা আয়োজন।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে ‘বন্দর-ফৌজদারহাট টোল রোড’। ঝাউগাছ আর জলাশয় পাশ দিয়ে যাওয়া এই সড়কটি যুক্ত হয়েছে মেরিন ড্রাইভ হয়ে আউটার রিং রোডের সঙ্গে। ফৌজদারহাট থেকে এ টোল রোড ধরে কিছুদূর গেলেই ডিসি পার্কে চোখে পড়বে ফুলের সমাহার।
আগের বারের মত এবারও ফুল উৎসবে গাছ সরবরাহের দায়িত্ব পেয়েছে ইফা ল্যান্ডস্ক্যাপ গার্ডেন ডিজাইন অ্যান্ড অ্যাগ্রো ফার্মা।
কোম্পানির স্বত্বাধিকারী কাউসার আল ইমরান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দেড় মাস ধরে ফুল উৎসবের প্রস্তুতি চলেছে। ইতোমধ্যে ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। শুক্রবারের মধ্যেই পুরোপুরি কাজ শেষ হবে।
তিনি বলেন, উৎসবে যেসব ফুল রাখা হয়েছে তার বেশিরভাগই বিদেশি প্রজাতির শীতকালীন ফুল। ২৫ ধরনের গোলাপ, স্টক, গেজানিয়া, ক্যামেলিয়া, হলিহক, স্নোবক, নেসটিয়াম, লিলিয়াম, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকার মত ফুল রয়েছে। গাছগুলোতে তিন মাস ধরে ফুল ফুটে। বর্তমানে যেসব গাছে ফুল রয়েছে, কিছু দিন পর আরও ফুল ফুটবে।
আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে উৎসবে টিউলিপও আনার কথা তুলে ধরে কাউসার বলেন, টিউলিপ শীতপ্রধান এলাকার ফুল। শীত যত বেশি হবে সেখানে টিউলিপ ভালো হয়। ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠান টিউলিপ বাল্ব আমদানি করে। ইতোমধ্যে টিউলিপ বাল্ব দেশে পৌঁছেছে। কয়েকদিনের মধ্যে সেগুলোতে ফুল ফুটবে। তাদের কাছ থেকেই টিউলিপগুলো আনা হবে।
সীতাকুণ্ড উপজেলার উত্তর ছলিমপুর মৌজার বালুচর শ্রেণির এ জায়গাটি দখলে নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছিল ‘শুকতারা’ নামে একটি পর্যটন কেন্দ্র ও রেস্টুরেন্ট। ২০২২ সালে এ জায়গা থেকে দখলদার উচ্ছেদ করে জেলা প্রশাসন সেটিকে পার্কে রূপান্তর করে। নাম দেওয়া হয় ‘ডিসি পার্ক’।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে ফুল উৎসবের বিস্তারিত তুলে ধরে বলেন, শনিবার উৎসবের উদ্বোধন করবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আবদুর রশীদ। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান ও চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. জিয়াউদ্দীনও থাকবেন।
গত বছর ফুল উৎসবে ৯ লাখ দর্শনার্থীর সমাগম হয়েছিল বলে জানান জেলা প্রশাসক। এবার ১২ লাখ দর্শনার্থীর আগমন ঘটবে বলে তার প্রত্যাশা। পার্কের কাউন্টার ছাড়াও দর্শনার্থীরা অনলাইনে টিকিট কেটে ফুল উৎসবে যোগ দিতে পারবেন।