র‌্যাব পরিচয়ে বিএনপি নেতাকে হুমকি, যুবক গ্রেপ্তার

বিএনপি নেতার অভিযোগে তদন্তে নেমে এক পুলিশ কর্মকর্তার পারিবারিক এই গাড়িচালককে আটক করে র‌্যাব।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 March 2023, 12:12 PM
Updated : 11 March 2023, 12:12 PM

এক গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তার পারিবারিক গাড়িচালক হিসেবে কাজ করতেন। কিন্তু নিজের পরিচয় দিতেন পুলিশ, র‌্যাব ও সেনা কর্মকর্তা হিসেবে। সবশেষ র‌্যাব পরিচয়ে এক বিএনপি নেতার সঙ্গে প্রতারণা করতে গিয়ে র‌্যাবের হাতেই ধরা পড়েছেন।

চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও থানার হাজীরপুল এলাকা থেকে শুক্রবার রিয়াদ বিন সেলিম (২৪) নামে ওই যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়।

র‌্যাব-৭ এর চান্দগাঁও ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর মেহেদী হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, র‌্যাবের সরকারি নম্বরের সিরিয়ালের একটি মোবাইল নম্বর জোগাড় করে রিয়াদ বিভিন্ন জনের সঙ্গে মামলা এবং ওয়ারেন্টের ভয় দেখিয়ে প্রতারণা করতেন।

“গত ৯ মার্চ রিয়াদ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানকে মামলা ও গ্রেপ্তারের হুমকি দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েছিলেন। বিষয়টি নিয়ে আবু সুফিয়ান টেলিফোনে র‌্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমরা তাকে বিষয়টি ভুয়া বলে জানাই। এরপর তিনি র‌্যাবের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেন।”

মেহেদী আরও জানান, আবু সুফিয়ানের অভিযোগের পর যে নম্বর থেকে বার্তা পাঠানো হয়েছে সেটিতে যোগাযোগ করার পর তা বন্ধ পাওয়া যায়। পরে বিভিন্ন তথ্যে চান্দগাঁও হাজীর পুলিশ এলাকায় রিয়াদের অবস্থান শনাক্ত করে শুক্রবার তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

র‌্যাবের ভাষ্য, গাড়িচালক হলেও রিয়াদের মূল কাজ ছিল সরকারি কিংবা শীর্ষ কোনো প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করা। পুলিশ কর্মকর্তার পারিবারিক গাড়িচালক হওয়ায় কাজ করে দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে টাকা গ্রহণ করতেন। এক পর্যায়ে সেটাকে ‘পেশা’ হিসেবে বেছে নেন।

এদিকে শনিবার র‌্যাবের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পুলিশ কর্মকর্তার গাড়িচালক হওয়ায় রিয়াদ বিভিন্ন থানা ও সংস্থার কার্যালয়ে আসা যাওয়া করায় প্রতারণামূলক কথাবার্তা রপ্ত করেন এবং গোয়েন্দা কর্মকর্তা পরিচয়ে প্রতারণা শুরু করেন।

গ্রেপ্তার রিয়াদের কাছে সেনাবাহিনীর ভুয়া পরিচয়পত্র পাওয়া গেছে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছে থাকার পরও যোগ দিতে না পারে ২০১৯ সালে ক্যাপ্টেন পদবীর একটি ভুয়া পরিচয়পত্র তৈরি করেন রিয়াদ। সেটি দিয়ে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের বিভিন্ন ঠিকাদারের থেকে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করতেন।

পাশাপাশি তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ও এস আলম গ্রুপের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক পরিচয় দিয়েও প্রতারণা করতেন বলে র‌্যাবের ভাষ্য।

মেজর মেহেদী বলেন, পুলিশ-সেনাবাহিনীর পরিচয় দেওয়ার পর রিয়াদ নিজেকে র‌্যাব কর্মকর্তা পরিচয় দেওয়া শুরু করেন। সেজন্য র‌্যাবের সরকারি নম্বরের সিরিয়ালের সঙ্গে মিল রেখে একটি মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করেন।

“মোবাইল নম্বরটি রিয়াদ ‘এডি অপারেশন্স, র‌্যাব এইচকিউ’ লিখে নিজের মোবাইলে সেইভ করেন এবং সেটি দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে আইডি খুলে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ওয়ারেন্ট ও মামলার ভয় দেখিয়ে প্রতারণা শুরু করেন।”

পাশাপাশি র‌্যাব কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন অনলাইন শপ থেকে পণ্য অর্ডার করে সেগুলো বিনামূল্যে নেয়ার চেষ্টাও করতেন রিয়াদ।

এদিকে তাকে গ্রেপ্তারের পর পাঁচলাইশ এলাকায় তার আরও একটি বাসা আছে বলে জানতে পারে র‌্যাব।

র‌্যাব কর্মকর্তা মেহেদী জানান, ওই বাসায় তার প্রথম স্ত্রী, ভাই ও মা থাকতেন। আর হাজীরপুলের বাসায় প্রথম স্ত্রীও পরিবারের কাছে গোপন রেখে দ্বিতীয় বিয়ে করে সে বৌয়ের সঙ্গে থাকতেন রিয়াদ।