বিশ্বকাপ দলের প্রশ্নে আফিফ বললেন, ‘বর্তমানে থাকতে চাই’

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে দুর্দান্ত পারফর্ম করা তরুণ ব্যাটসম্যান কথা বলতে নারাজ ব্যাটিং অর্ডার বিতর্ক নিয়ে, কিছু বলতে চান না তিনি বিশ্বকাপ দলে জায়গা করে নেওয়ার সম্ভাবনা নিয়েও।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 May 2023, 02:06 PM
Updated : 13 May 2023, 02:06 PM

আফিফ হোসেনকে নিয়ে তখন কাড়াকাড়ি। কেউ সেলফি তুলতে টানছেন, তো কেউ হাত মেলাতে চাচ্ছেন। কেউ পিঠ চাপড় দিচ্ছেন। দলীয় ফটোসেশন তো আছেই। ফাইনালে রূপ নেওয়া ম্যাচে দলকে জিতিয়ে চ্যাম্পিয়ন করার নায়ক তিনি। ম্যাচ শেষে তাকে নিয়ে এমন টানাটানি তো পড়বেই!

তবে শুধু এই দিনের ম্যাচ সেরা বলেই নয়, আফিফকে নিয়ে সংবাদমাধ্যমের আগ্রহের আরেকটি বড় কারণ তার জাতীয় দলে জায়গা হারানোও। সেটি নিয়ে বিতর্কও হয়েছে অনেক। দল থেকে বাদ পড়ার পরই ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে তার পারফরম্যান্স দুর্দান্ত। কয়েক মাস পরই বিশ্বকাপ। সব মিলিয়ে তার কাছ থেকে শোনার ছিল অনেক কিছুই। কিন্তু সব কৌতূহল তিনি জিইয়েই রাখলেন। ব্যাটিং অর্ডার বিতর্ক কিংবা বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাওয়ার আশা, কিছুতেই তিনি বললেন না কিছু।

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে শনিবার আবাহনী লিমিটেড ও শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের ম্যাচটি ছিল অঘোষিত ফাইনাল। গত দুই আসরের চ্যাম্পিয়ন দুই দলের সামনে হাতছানি, এই ম্যাচ জিতলেই চ্যাম্পিয়ন। শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সেই ম্যাচে ২৮৩ রান তাড়ায় অর্ধেকের বেশি পথ শুরুর জুটিতেই পাড়ি দেয় আবাহনী। এনামুল হক ও মোহাম্মদ নাঈম শেখ গড়েন ১৪৫ রানের জুটি।

তবে সেখান থেকে দুইশ ছুঁতেই তারা হারায় চার উইকেট। কিন্তু হাল ধরে পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে শেষ ওভারের সমাপ্তিতে আবাহনীকে জয় এনে দেন আফিফ। ৫৩ বলে ৬০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে তিনিই ম্যাচের সেরা।

আফিফের মুখায়ব বা শরীরী ভাষা দেখে অবশ্য উচ্ছ্বাস খুঁজে পাওয়া কঠিন। তবে তৃপ্তিটুকু উঠে এলো তার কণ্ঠে। এই ম্যাচের মতো গোটা টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত ছিলেন তাদের দুই ওপেনার। লিগের সর্বোচ্চ ৯৩২ রান আসে নাঈম শেখের ব্যাট থেকে, এনামুল করেন ৮৩৪ রান। তাদের দুজনের কথা আলাদা করেই বললেন আফিফ।

“চ্যাম্পিয়ন হতে তো সবারই ভালো লাগে। টুর্নামেন্টের শুরু থেকে আমাদের সবারই লক্ষ্য ছিল চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য খেলব। আমাদের ওপেনার দুইজন পুরো টুর্নামেন্ট ভালো শুরু এনে দিয়েছে। যে জন্য আমাদের কাজটা সহজ হয়ে গিয়েছে। আর মিডল অর্ডারে আমাদের মোটামুটি সব ব্যাটসম্যানই খুব ভালো টাচে ছিল বলে আমাদের জেতা সম্ভব হয়েছে।”

“ভালো খেলতে পেরেছি। দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আমার অবদানও ছিল। অবশ্যই খুশি আমি।”

আফিফ নিজে করেছেন ১৩ ইনিংসে ৫৫০ রান। গড় ৫৫. স্ট্রাইক রেট ১১০.৬৬। লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির দেখাও পান তিনি এবারের লিগে। তবে আবাহনীর জয়ে তার অবদান ফুটে ওঠে শুধু এই সংখ্যাগুলোতেই নয়, ম্যাচের পরিস্থিতিতেও। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে যেমন তিনি চাপের মধ্যে দলে হাল ধরেছেন, তেমনি আগেও কয়েকটি ম্যাচে জরুরি প্রয়োজনে আস্থা জুগিয়েছেন দলকে।

কদিন আগে প্রাইম ব্যাংকের বিপক্ষে দল যখন নড়বড়ে, তার ব্যাট থেকে আসে ১০১ বলে ১১১ রানের অপরাজিত ইনিংস। লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জের বিপক্ষে ২৮৭ রান তাড়ায় দলকে জিতিয়েছিলেন ৬২ বলে অপরাজিত ৮০ রান করে। প্রাইম ব্যাংকের বিপক্ষে আরেক ম্যাচে দুই ওপেনারের ভালো শুরুর পর তাকে তিনে নামানো হয় দ্রুত তোলার দায়িত্ব দিয়ে। তিনি খেলেন ৪৭ বলে ৫৩ রানের ইনিংস।

চাপের মধ্যে তার ইনিংসগুলি দলের কাজে লেগেছে দারুণভাবে। আফিফও বললেন, কঠিন দায়িত্বই তিনি উপভোগ করেছেন বেশি।

“চাপের মধ্যে যে ব্যাটিং করেছি… চ্যাম্পিয়ন হতে হলে এমন চাপের মধ্যে সব ব্যাটসম্যানদেরই ব্যাটিং করতে হবে। সেই জিনিসটা উপভোগ করার চেষ্টা করেছি।”

আবাহনীর হয়ে লিগে এবার তিনি এতগুলি ম্যাচ খেলতে পারলেন জাতীয় দলের জায়গা হারানোর কারণেই। কিছুদিন আগেও রঙিন পোশাকের দুই সংস্করণেই তিনি ছিলেন বাংলাদেশ দলের নিয়মিত মুখ। এখন তিনি দুটি থেকেই বাইরে।

তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে নাকি বিশ্রাম, এই নিয়েও তখন বিতর্ক হয়েছে বেশ। নির্বাচকরা শুরুতে বলেছিলেন তাকে বিরতি দেওয়ার কথা। তবে কোচ চান্দিকা হাথুরুসিংহে পরে বলেন, ‘চেহারা দেখে বাদ দেওয়া হয়নি আফিফকে।’ যেটির মানে, পারফরম্যান্সের কারণেই বাদ দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা লিগে তাই তার ভেতরে বাড়তি কোনো জেদ বা দেখিয়ে দেওয়ার তাড়না কাজ করাটা অস্বাভাবিক নয়। তবে তিনি এসবের গভীরেই যেতে চাইলেন না।

“আমি আসলে কোনো সময় এত বেশি চিন্তা করতে পছন্দ করি না। আমি স্রেফ আমার খেলাটা খেলতে এসেছি। চিন্তা করেছি যেন ভালো খেলতে পারি।”

জাতীয় দল থেকে তার বাদ পড়ার প্রেক্ষাপটে আলোচনায় এসেছে ব্যাটিং অর্ডার বিতর্কও। লোয়ার অর্ডারে খেলতে আপত্তি করেছেন বা ওপরে খেলার অনুরোধ কিংবা দাবি তিনি জানিয়েছেন কোচ চান্দিকা হাথুরুসিংহের কাছে, এমন খবরও এসেছে কিছু সংবাদমাধ্যমে। এই প্রসঙ্গে লম্বা একটি প্রশ্ন হলো তার কাছে। কিন্তু আফিফের ছোট্ট উত্তর, “এটা নিয়ে আমি কিছু বলতে চাচ্ছি না।”

আবাহনীর হয়ে লিগে তিনি ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছেন তিন-চার-পাঁচ নম্বরে। সফলও হয়েছেন। জাতীয় দলের ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে কিছু বলতে না চাইলেও নিজের পছন্দটা জানিয়ে রাখলেন তিনি, “আমি সবসময় পছন্দ করি ওপরে ব্যাটিং করতে।”

ঢাকা লিগে ব্যাটিং অর্ডার বা খেলার ধরন নিয়ে জাতীয় দলে টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে কোনো বার্তা তাকে দেওয়া হয়নি বলে নিশ্চিত করলেন আফিফ। এবার লিগে তার পারফরম্যান্সে জাতীয় দলের দুয়ার খুলবে কি না, সেই উত্তরটিও দিলেন তিনি ছোট্ট করে, “সেটা তো আমার হাতে নেই।”

জাতীয় দল থেকে তার বাদ পড়া কিংবা ফেরার দাবি জানানো নিয়ে এত আলোচনা এটি বিশ্বকাপের বছর বলেই। বিশ্ব সেরার মঞ্চে খেলার স্বপ্ন কার না থাকে! তবে বিশ্বকাপ দলে থাকার সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলতেও খুব একটা আগ্রহী মনে হলো না আফিফকে।

“আমি কখনোই প্রত্যাশা রাখি না। আমি সবসময় বর্তমানে থাকতে পছন্দ করি। এখানে (ঢাকা লিগে) খেলাগুলোতে আমি ফোকাস করেছি। সামনে যে খেলাগুলো আছে, সেগুলোয় ফোকাস করব।”

“আমি স্রেফ বর্তমানে থাকতে পছন্দ করি। সামনে কী হবে, এটা আমার দেখার বিষয় নয়।”

জাতীয় দলের ব্যাটিং অর্ডার বিতর্ক নিয়ে আরেকটি প্রশ্নেও তিনি অটল রইলেন নিজের অবস্থানে, “আমি এটা নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না।”

এর মধ্যে অবশ্য তার ক্যারিয়ারে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় এসেছে। জাতীয় দলের ক্ষেত্রে তাকে কখনও টেস্ট দলে বিবেচনা করা না হলেও এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দলের বিপক্ষে তিন ম্যাচের আনঅফিসিয়াল টেস্ট সিরিজের প্রথম দুটিতে তাকে রাখা হয়েছে অধিনায়ক করে। তার প্রতি নির্বাচকদের দৃষ্টিভঙ্গিতে গুরুত্বপূর্ণ বদল বলা যায় এটিকে।

তিনি নিজে অবশ্য খুব বেশি কিছু ভাবছেন না। এই মঙ্গলবার থেকেই ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে সিরিজ। কিন্তু এটি নিয়েও কথা বলতে খুব একটা আগ্রহী নন তিনি।

“আমি যাই, দুই দিন পর খেলা। তখন দেখা যাবে। এত ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করি না।”