‘তাইজুল বনাম নাসুম’ কিংবা ‘তাইজুল ও নাসুম’

বিশ্বকাপের দিকে তাকিয়ে দুই বাঁহাতি স্পিনারকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে খেলিয়ে পরখ করে দেখছে বাংলাদেশ দল।

ক্রীড়া প্রতিবেদকসিলেট থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 March 2023, 02:15 PM
Updated : 19 March 2023, 02:15 PM

এক সিরিজে তাইজুল ইসলাম সুযোগ পাচ্ছেন তো আরেকটিতে নাসুম আহমেদ। পারফর্মও করছেন দুজনই। তাইজুলকে সুযোগ দিলেই লুফে নিচ্ছেন। নাসুমও মাঠে নামলেই ছাপ রাখছেন। যেন ‘কেহ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান।’ বাংলাদেশের দুই বাঁহাতি স্পিনারের লড়াইটা এখন জমজমাট।

প্রশ্ন হতে পারে, লড়াই কেন হবে? দুজন তো সতীর্থ! বাস্তবতাই আসলে দুজনকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। যে দলে সাকিব আল হাসান আছেন, সেখানে আরও দুজন বাঁহাতি স্পিনারকে একসঙ্গে রাখার সুযোগ নেই বললেই চলে। বিশ্বকাপের সম্ভাব্য স্কোয়াডের ছবি আঁকলে সেখানে সাকিবের সঙ্গে বাঁহাতি স্পিনে থাকবেন তাইজুল ও নাসুমের মধ্যে একজন। সেই একজনকে বাছাই করার মহড়াই চলছে এখন।

একটি করে সংস্করণে তারা দুজনই দলের অবিচ্ছেদ্দ্য অংশ। টেস্টে বাংলাদেশের বড় ভরসা তাইজুল, টি-টোয়েন্টি দল এখন নাসুমকে ছাড়া ভাবা কঠিন। তবে ওয়ানডেতে জায়গাটা পাকা নয় দুজনের কারও।

তাইজুলের ওয়ানডে অভিষেক যদিও ছিল স্বপ্নের মতো। ২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১১ রানে ৪ উইকেট নেন তিনি ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচেই। ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে হ্যাটট্রিকের প্রথম কীর্তি ছিল সেটি। তবে নানা বাস্তবতা মিলিয়ে এই সংস্করণে কখনও পারেননি তিনি থিতু হতে।

নাসুমের ওয়ানডে অভিষেক মাত্রই গত বছর। ওয়েস্ট ইন্ডিজে সেই সিরিজে বেশ ভালো ছিল তার পারফরম্যান্স। তবে ওয়ানডে দলে জায়গা পাকা করার চ্যালেঞ্জের উত্তাপ অনুভব করছেন তিনিও।

বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের এখন যে বাস্তবতা, তাতে সাকিবের সঙ্গে মেহেদী হাসান মিরাজও এখন দলের অবিচ্ছেদ্দ্য অংশ। লড়াইটা এখন মূলত বাড়তি আরেকজন স্পিনারের। সামনে বিশ্বকাপ যেহেতু ভারতে, স্কোয়াডে বাড়তি স্পিনার লাগবেই। হুট করে কেউ চোটাঘাত পেলে বিকল্পও লাগবে। তাইজুল ও নাসুমের পরীক্ষা চলছে সেখানেই। আপাতদৃষ্টিতে তাই লড়াইটা ‘তাইজুল বনাম নাসুম’ মনে হলেও বৃহত্তর ছবিটা ভাবতে গেলে এটিই হয়ে উঠবে আসলে ‘তাইজুল ও নাসুম।’ কে জানে, বিশ্বকাপে প্রয়োজন হতে পারে তো দুজনকেই!

লড়াইটা জমিয়ে তোলায় ভুমিকা রাখছেন তারা দুজনই। গত বছর যে সফরে নাসুমের ওয়ানডে অভিষেক, সাকিব আল হাসানের ছুটি থাকায় সেই সিরিজের দলে ছিলেন তাইজুল-নাসুম দুজনই। মাঠে নামার সুযোগটি আগে পান নাসুম। অভিষেকে উইকেট না পেলেও ৮ ওভারে ৩ মেইডেন নিয়ে রান দেন মোটে ১৬। পরের ম্যাচে দেখা পান ৩টি শিকারের, ১০ ওভারের ৪টিই মেইডেন নিয়ে রান দেন স্রেফ ১৯।

ওই সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে একসঙ্গেই একাদশে ঠাঁই পান দুজন। নাসুম ধারাবাহিকতা ধরে রেখে ২ উইকেট নেন ৩৯ রানে। কিন্তু সেদিন আলো কেড়ে নেন তাইজুল। প্রায় আড়াই বছর পর ওয়ানডে খেলতে নেমেই ২৮ রানে নেন ৫ উইকেট!

তাতে লড়াইয়ে এগিয়ে যান তাইজুল। পরের মাসে জিম্বাবুয়ে সফরে প্রথম ওয়ানডেতে একাদশে জায়গা হয়নি কারও। পরের ২ ম্যাচে সুযোগ পান শুধু তাইজুল। উইকেট নেন ৩টি।

অগাস্টে ওই সফরের পর বাংলাদেশ আবার ওয়ানডে খেলতে নামে ডিসেম্বরের শুরুতে ভারতের বিপক্ষে। এবার স্কোয়াডেই জায়গা পাননি তাইজুল। কিন্তু টিকে যান নাসুম। ম্যাচ খেলতে অবশ্য তাকে অপেক্ষা করতে হয় শেষ ওয়ানডে পর্যন্ত। সেই ম্যাচে তিনি খুব একটা ভালো করেননি। ১০ ওভারে ৫৪ রান দিয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য।

এরপর মার্চে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দল থেকে ছিটকে পড়েন নাসুম, ফেরানো হয় তাইজুলকে। সিরিজের সব ম্যাচেই খেলানো হয় তাকে। ৩ ম্যাচে তার প্রাপ্তি ৬ উইকেট। একটু যদিও খরুচে ছিলেন, তবে গুরুত্বপূর্ণ উইকেট এনে দেন প্রতি ম্যাচেই।

অমন পারফরম্যান্সের পরও চলতি আয়ারল্যান্ড সিরিজের দলে থাকতে পারেননি তাইজুল। কারণ, এবার যে নাসুমকে পরখ করার পালা! সুযোগ পেয়ে কাজে লাগাতে ভুল করেননি তিনিও। আইরিশদের বিপক্ষে শনিবার তার প্রাপ্তি ৪৩ রানে ৩ উইকেট।

দুজনই বাঁহাতি স্পিনার হলেও ঘরানা আলাদা। তাইজুল অনেকটাই প্রথাগত বাঁহাতি স্পিনার। সীমিত ওভারে সাম্প্রতিক সময়ে কিছু বৈচিত্রও তিনি যোগ করেছেন বোলিংয়ে। নাসুম অনেকটাই আধুনিক যুগের বাঁহাতি স্পিনারদের মতো। তার মূল শক্তি ব্যাটসম্যানদের উইকেটে আটকে রাখা। দলও তাকে সেই ভূমিকাতেই ভাবছে। তাইজুলকে যেমন উইকেট শিকারি বোলার হিসেবে দেখছে দল, একটু আক্রমণাত্মক। কিছুটা খরুচে হলেও যিনি উইকেট এনে দেবেন দলকে। ইংল্যান্ড সিরিজের আগে অধিনায়ক তামিম ইকবালও তা ব্যাখ্যা করেছিলেন।

বিশ্বকাপের জন্য দল কোন ভুমিকাকে প্রাধান্য দেবে, সেটিই হয়তো শেষ পর্যন্ত নির্ধারণ করে দেবে তাদের বিশ্বকাপ ভাগ্য। তবে তার আগ পর্যন্ত মহড়া চলবে, সেখানে নিজেদের সামর্থ্যের সীমানা বাড়ানোর সুযোগও তাদের থাকবে।

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডের আগের দিন রোববার সিলেটে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সেই বার্তাই দিয়ে রাখলেন স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ।

“সে (নাসুম) ভালো বল করেছে। ৩ উইকেট নিয়েছে। এই ছেলেরা কন্ডিশনের সঙ্গে খুব ভালোভাবে মানিয়ে নিচ্ছে, এটা দেখতে পাওয়াটা দারুণ।”

“(তাইজুল ও নাসুম) দুজনই পরিকল্পনায় আছে। সবশেষ সিরিজে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাইজুল খুব ভালো করেছে। এখন আমরা নাসুমকে সুযোগ দিচ্ছি। বিশ্বকাপের আগে আরও বেশ কিছু সুযোগ আছে আমাদের। আমরা সেই সুযোগগুলো কাজে লাগিয়ে আমাদের স্কোয়াডের বিকল্প বাড়াতে চাই।”