বিপিএল অধিনায়কদের প্রত্যাশার নানা রঙ

এবারের আসর নিয়ে দেশের ক্রিকেটের নানা বাস্তবতায় নিজেদের প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন বিপিএল দলগুলির অধিনায়ক।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Jan 2024, 02:19 PM
Updated : 18 Jan 2024, 02:19 PM

কেউ বিপিএলের সফল অধিনায়ক, কেউ পোড় খাওয়া একজন, কেউ আবার বিপিএলে নেতৃত্ব দেবেন এবারই প্রথম। তবে সবাই বিপিএল খেলছেন দীর্ঘসময় ধরে। ফ্র্যাঞ্চাইজি এই টুর্নামেন্টের ভেতর-বাহিরের সবকিছু তাদের জানা। নতুন মৌসুম শুরুর আগে সাত দলের অধিনায়করা জানালেন এবারের আসর ঘিরে তাদের প্রত্যাশার কথা।

ক্রিকেটার বা অধিনায়ক হিসেবে টুর্নামেন্টের নানা ঘাটতি, সীমাবদ্ধতা বা অনেক কিছু নিয়েই খোলামেলা কথা বলার বাস্তবতা তাদের নেই। তবে নিজেদের দিক থেকে তারা শুনিয়েছেন তাদের ভাবনা। সেখানে নিজের বা দলের দৃষ্টিভঙ্গি যেমন ফুটে উঠেছে, তেমনি বাংলাদেশ ক্রিকেটে বৃহত্তর প্রত্যাশার ছবিটাও ফুটে উঠেছে। 

লিটন কুমার দাস- কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স

“কুমিল্লা যখন দল করে এত টাকা দিয়ে, একটা ফ্র্যাঞ্চাইজির তো টার্গেটই থাকে…এবারও একই লক্ষ্য (ট্রফি জয়)।”

“কুমিল্লা বরাবরই প্রেশার ফ্রি ক্রিকেটই খেলে। অবশ্যই একটা ট্যাগ যখন লেগে যায়, তখন ওই দায়িত্বটা তো থাকেই যে, দিন শেষে সবাই ট্রফির কথাই চিন্তা করে…। তবে একটা একটা করে ম্যাচ খেলতে হয়। আমি এখন আগামীকালের ম্যাচ নিয়ে চিন্তিত। স্বাভাবিকভাবেই, যে কোনো এক দল তো জিতবে।”

“ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে সবগুলো দলই ভালো। ব্যাটে-বলে যারা ভালো খেলবে, তারাই জিতবে। আমাদের শতভাগ ক্রিকেটই খেলতে হবে। আমি মনে করি, আমাদের দলটা অনেক ভারসাম্যপূর্ণ। যতগুলো ক্রিকেটার আছে, সবাই ম্যাচ জেতানোর মতো। দেখা যাক, কালকে কী হয়!”

মাশরাফি বিন মুর্তজা- সিলেট স্ট্রাইকার্স

“বিপিএল বন্ধ হয়ে গেলে তো লাভ নেই। অনেক নেতিবাচকতার মধ্যেও খেলাটা হচ্ছে অন্তত। টি-টোয়েন্টিতে অন্তত একটা ভালো টুর্নামেন্ট তো দরকার। আমাদের ক্রিকেটাররা তো দু-একজন ছাড়া বিদেশি লিগে চান্স পায় না সেভাবে কেউ। এই টুর্নামেন্ট খেললে তবু ভালো মানের একটা লিগে তারা খেলতে পারে।”

“এই বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সেদিক থেকেও এবারের বিপিএলটা খুব কার্যকর হতে পারে। এজন্য অবশ্য ভালো উইকেটে খেলা হতে হবে। গতবার উইকেট বেশ ভালো ছিল। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট আমরা যত কিছুই বলি, দিন শেষ ব্যাটসম্যানদের খেলা। রান করার অভ্যাসটা ভালো উইকেটেই গড়ে তুলতে হবে।”

“আর্থিক দিক একটা বড় ব্যাপার অবশ্যই। তবে এর বাইরেও তো ক্রিকেটের কথা ভাবতে হবে। আর মাঠের ক্রিকেটের বাইরে অবশ্যই উন্নতির অনেক জায়গা আছে। আয়োজন আরও গুছিয়ে, আরও পরিকল্পনা করে করা যায়। দেশের একটা টুর্নামেন্ট, আমরা চাই আরও বেশি হাইপ, আরও বেশি প্রচার যেন করা হয়। ক্রিকেট বিশ্বে যেন আরও বেশি আলোচনায় আসতে পারে এই টুর্নামেন্ট।”

“ভালো ক্রিকেটার যদি আরও বেশি আসে, তাহলেও ভালো হয়। অবশ্য অনেক তারকা আছে এবারও। এখন লিগও অনেক বেশি হয় একসঙ্গে। তার পরও যদি সম্ভব হয়, তাহলে বড় ক্রিকেটাররা এলে লিগের হাইপ বেশি হয়। আর সব দলের জন্য যতটা সম্ভব লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড যদি করা যায়, কম-বেশি তা থাকবেই, তার পরও বিভিন্ন বাধ্যবাধকতা দিয়ে যদি দলগুলির ব্যবধান যতটা সম্ভব কাছাকাছি রাখা যায়, তাহলে ভালো হয়।”

নুরুল হাসান সোহান-রংপুর রাইডার্স

“রংপুর রাইডার্স সবসময়ই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য দল গড়ে। এবারও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্যই মাঠে নামব আমরা। সেই লক্ষ্য পূরণেই আমরা আমাদের প্রক্রিয়া ধরে এগোচ্ছি। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য যতটা অবদান রাখার প্রয়োজন, আমি চেষ্টা করব।”

“রংপুর দলটা যখন গড়া হয়, ক্রিকেটারদের মধ্যে বন্ধন ও সম্পর্কটাকে গুরুত্ব দেয়। সাকিব ভাই (সাকিব আল হাসান) যে দলে থাকেন, সেই দল এমনিতেই উজ্জীবিত থাকে।”

তামিম ইকবাল- ফরচুন বরিশাল

“এটা ঠিক যে (বিপিএল নিয়ে) অনেক আলোচনা হয়, সমালোচনা হয়। তবে এটা আমরা কেউ অস্বীকার করতে পারব না যে, আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটে, বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি সংস্করণে এটা আমাদের সেরা টুর্নামেন্ট। আর এই টুর্নামেন্টের কারণে অনেক ক্রিকেটারের আর্থিক দিক থেকে অনেক সহায়তা হয়। যে মানের ক্রিকেট হয়, সেটাও খুব উঁচু মানের। আমরা বিদেশি ক্রিকেটারদের সঙ্গে খেলি।”

“হ্যাঁ, আলোচনা থাকবে, সমালোচনাও থাকবে। তবে আমরা ভালোটা মাঝেমাঝে ভুলে যাই। ভালো জিনিসটা হলো, আমরা খেলতে পারছি, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের সঙ্গে খেলতে পারছি, ফ্র্যাঞ্চাইজিরা খরচও করছে আমাদের ওপর। তো ইতিবাচক দিকও আছে। সব কিছুতেই নেতিবাচক কিছু না কিছু থাকে। তবে মাঝেমাঝে ইতিবাচকটা আমরা তুলে ধরতে ভুলে যাই।"

“(বিপিএল বশ্বের কত নম্বর টুর্নামেন্ট) আমি নাম্বারে না যাই। কারণ যে সময় এই তুলনাটা হতো, তখন বিশ্বে তিন-চারটাই টুর্নামেন্ট ছিল। এখন সাত, আট, নয়টা টুর্নামেন্ট। আমাদেরও অনেক উন্নতির জায়গা আছে, অন্য লিগেরও উন্নতির জায়গা আছে। আমার মনে হয় প্রতিটা বছর যদি আমরা কিছু জিনিস উন্নতি করতে থাকি, ৫ ভাগও উন্নতি করি, তাহলে আমরা নিজেদের একটা অবস্থানে এসে যাব।”

শুভাগত হোম- চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স

“গেল বছর কিন্তু মিরপুরের উইকেটটা বেশ ভালো ছিল । আমরা আশা করব, এবারও ভালো উইকেটই থাকবে। ব্যাটিং-বোলিং…সব মিলিয়ে স্পোর্টিং উইকেট থাকবে। ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগই যেন ভালো করতে পারে, সে রকম স্পোর্টিং উইকেট চাই।”

“(আয়োজনগত অব্যবস্থাপনা) এ নিয়ে আমার মন্তব্য করা ঠিক হবে না। এটা ব্যবস্থাপনার অংশ, বিসিবি, ব্যবস্থাপনা, ফ্র্যাঞ্চাইজিরা যেটা ভালো মনে করবে, সেটাই হবে। এখানে আমার যে ভূমিকা, আমি সেটাই পালন করার চেষ্টা করছি।”

“এ বছর আমাদের যে দল হয়েছে, যে খেলোয়াড় আছে, তাতে সবাই আত্মবিশ্বাসী যে আমাদের প্রথম লক্ষ্য প্লে অফ, আমরা সে লক্ষ্যের দিকেই মনোযোগটা দিচ্ছি। আশা করছি আমরা প্লে অফ খেলতে পারব।”

মোসাদ্দেক হোসেন-দুর্দান্ত ঢাকা

“চার-ছক্কা কতটা হবে, তা নির্ভর করছে আবহাওয়ার ওপর। আমরা জানি যে, মিরপুরের উইকেট একটু কঠিন থাকে। আবহাওয়া তো আজকে ভালো। এরকম থাকলে চার-ছক্কা হবে আশা করি।”

“আমরা মিডিয়া অনুসরণ করি, গোটা বিশ্ব ক্রিকেট যখন দেখি, সব দেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ থেকে আমরা দেখি যে, সবসময়ই তিন-চার-পাঁচজন নতুন ক্রিকেটার উঠে আসছে। আমাদের দেশেও আমাদের চাওয়া থাকবে যেন, কয়েকজন ক্রিকেটার নতুন করে জাতীয় দলে আসতে পারে। সামনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আছে, কিছু ক্রিকেটার উঠে এসে যেন দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে, এই আশা থাকবে।”

“বিপিএল যখন চলছে, ঢাকা দল থাকা মানেই ঢাকার জন্য রোমাঞ্চকর ব্যাপার। তার পরও অনেক দেশের লিগ চলছে, তারা কীভাবে চালাচ্ছে বা সফলভাবে একটা টুর্নামেন্ট শেষ করে… আমাদের বিপিএলে আমরা কিন্তু চাইলেই সব ক্রিকেটার পাচ্ছি না। শুধু ঢাকা নয়, সব দলের খেলায় ওভাবে দর্শক আমরা পাচ্ছি না। আশা করি, বিসিবি ব্যাপারটি দেখবে এবং আশা করি, এবার দর্শকরা মাঠে এসে খেলা দেখবে।”