কোহলি-গিলের সেঞ্চুরির পর সিরাজের তোপে ভারতের বিশ্ব রেকর্ড

তিনশ রানের জয় এই প্রথম দেখল ওয়ানডে ক্রিকেট।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Jan 2023, 02:33 PM
Updated : 15 Jan 2023, 02:33 PM

যেন ভিন্ন উইকেটে ব্যাটিং করল দুই দল। ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা দাপট দেখানোর পর মুখ থুবড়ে পড়ল লঙ্কানরা। শুবমান গিল ও বিরাট কোহলির সেঞ্চুরিতে স্বাগতিকরা গড়ল বিশাল পুঁজি। ওই ন্যাড়া পিচেই পরে বল হাতে আগুন ঝরালেন মোহাম্মদ সিরাজ; এক স্পেলে ভেঙে দিলেন প্রতিপক্ষের ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড। বিশ্ব রেকর্ড গড়ে সফরকারীদের হোয়াইটওয়াশ করল রোহিত শর্মার দল।

থিরুভানান্থাপুরামে ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে রোববার শ্রীলঙ্কাকে ৩১৭ রানে হারায় ভারত। এই প্রথম তিনশ রানের জয় দেখল ওয়ানডে ক্রিকেট।

এতদিন রেকর্ডটি ছিল নিউ জিল্যান্ডের। ২০০৮ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ২৯০ রানে জিতেছিল কিউইরা।

ওয়ানডেতে ভারতের সবচেয়ে বড় জয় ছিল ২৫৭ রানের, বারমুডার বিপক্ষে ২০০৭ সালে।

ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে ১১৬ রান করেন গিল। ৯৭ বলের ইনিংসটি ২ ছক্কা ও ১৪ চারে সাজান ভারত ওপেনার। তিনে নেমে ৮ ছক্কা ও ১৩ চারে ১১০ বলে ১৬৬ রানে অপরাজিত থাকেন কোহলি। ৫ উইকেটে ৩৯০ রান তোলে ভারত।

রান তাড়ায় শ্রীলঙ্কার ব্যাটিংয়ে শুরুতেই ধস নামান সিরাজ। ৭ ওভারের প্রথম স্পেলে ২০ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন তিনি। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি লঙ্কানরা। ২২ ওভারে গুটিয়ে যায় স্রেফ ৭৩ রানে।

ওয়ানডেতে ভারতের বিপক্ষে যা শ্রীলঙ্কার সর্বনিম্ন সংগ্রহ। এর আগে ১৯৮৪ ও ২০১৩ সালে দুই দফায় ৯৬ রানে অলআউট হয়েছিল তারা।

১০ ওভার করে ৩২ রানে ৪ উইকেট নেন সিরাজ। ওয়ানডেতে যা তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। আগের সেরা ছিল ২৯ রানে তিনটি। দুটি করে উইকেট নেন মোহাম্মদ শামি ও কুলদিপ যাদব।

শ্রীলঙ্কার এক ব্যাটসম্যান হন রানআউট। ফিল্ডিংয়ের সময় চোট পাওয়া আশেন বান্দারা নামেননি ব্যাটিংয়ে।

গ্রিনফিল্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ভারতকে দারুণ শুরু এনে দেন রোহিত ও গিল। ১৫.২ ওভারে ৯৫ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন দুইজন। ৩ ছক্কা ও ২ চারে ৪২ রান করা ভারত অধিনায়ককে ফেরান চামিকা করুনারত্নে।

এরপর কোহলি ও গিলের ব্যাটে এগোতে থাকে ভারত। ৫২ বলে ফিফটিতে পা রাখেন গিল। কোহলির পঞ্চাশ আসে ৪৮ বলে। তাদের জুটি শতরান স্পর্শ করে ৯০ বলে।

গিল ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরি করেন ৮৯ বলে। এরপর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিনি। তাকে বোল্ড করে ১৩১ রানের জুটি ভাঙেন কাসুন রাজিথা।

ফিফটির পর দ্রুত রান বাড়াতে থাকেন কোহলি। ৮৫ বলে স্পর্শ করেন ৪৬তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। এই সিরিজের প্রথম ম্যাচেও তিন অঙ্কের উষ্ণ ছোঁয়া পেয়েছিলেন তিনি।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এ নিয়ে ১০টি ওয়ানডে সেঞ্চুরি হলো কোহলির। এই সংস্করণে এক দেশের বিপক্ষে যা এককভাবে সবচেয়ে বেশি শতরানের রেকর্ড।

শ্রেয়াস আইয়ারকে (৩২ বলে ৩৮) ফিরিয়ে ১০৮ রানের জুটি ভাঙেন লাহিরু কুমারা। পরের ওভারে এই পেসারের শিকার লোকেশ রাহুল। তেমন কিছু করতে পারেননি দলে ফেরা সূর্যকুমার যাদব।

অন্য প্রান্তে ঝড় তোলেন কোহলি। একশ থেকে দেড়শ পর্যন্ত ছুটে যান স্রেফ ২১ বলেই! শতরানে ছক্কা ছিল ১টি। পরে ছক্কা মারেন আরও ৭টি। ওয়ানডেতে এক ইনিংসে এর আগে এত বেশি ছক্কা (৮টি) মারেননি তিনি।

এই সংস্করণে কোহলির পঞ্চম দেড়শ ছোঁয়া ইনিংসে চারশর কাছাকাছি যায় ভারতের সংগ্রহ। ম্যাচ সেরা ও সিরিজ সেরার পুরস্কার জেতেন তিনিই।

পাহাড় টপকানোর লক্ষ্যে শুরুতেই সিরাজের তোপে এলোমেলো হয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। এই পেসারের বল যেন খেলতেই পারছিলেন না লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা। নিজের প্রথম পাঁচ ওভারে চার উইকেট তুলে নেন তিনি। তার শিকার আভিশকা ফার্নান্দো, কুসল মেন্ডিস, নুয়ানিদু ফার্নান্দো ও ভানিন্দু হাসারাঙ্গা।

আরও তিন ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে শ্রীলঙ্কার রান দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ৫০। দলের অসহায় আত্মসমর্পণের পথে দুই অঙ্কে যেতে পারেন কেবল তিন জন। সর্বোচ্চ ১৯ রান করেন নুয়ানিদু।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত: ৫০ ওভারে ৩৯০/৫ (রোহিত ৪২, গিল ১১৬, কোহলি ১৬৬*, শ্রেয়াস ৩৮, রাহুল ৭, সূর্যকুমার ৪, আকসার ২*; রাজিথা ১০-১-৮১-২, লাহিরু ১০-১-৮৭-২, হাসারাঙ্গা ১০-০-৫৪-০, ভ্যান্ডারসে ৭-০-৫৯-০, করুনারত্নে ৮-০-৫৮-১, শানাকা ৩-০-১৯-০, নুয়ানিদু ২-০-২২-০)

শ্রীলঙ্কা: ২২ ওভারে ৭৩ (আভিশকা ১, নুয়ানিদু ১৯, মেন্ডিস ৪, আসালাঙ্কা ১, শানাকা ১১, হাসারাঙ্গা ১, করুনারত্নে ১, ভেল্লালাগে ৩, রাজিথা ১৩*, লাহিরু ৯, বান্দারা আহত অনুপস্থিত; শামি ৬-২-২০-২, সিরাজ ১০-১-৩২-৪, কুলদিপ ৫-১-১৬-২, শ্রেয়াস ১-০-২-০)

ফল: ভারত ৩১৭ রানে জয়ী

সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজে ৩-০ তে জয়ী ভারত

ম্যান অব দা ম্যাচ: বিরাট কোহলি

ম্যান অব দা সিরিজ: বিরাট কোহলি