স্টোকসের যে ডাইভ ইংল্যান্ডকে নিল ট্রফির কাছে
লন্ডন থেকে আরিফুল ইসলাম রনি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 15 Jul 2019 10:53 AM BdST Updated: 15 Jul 2019 03:25 PM BdST
নিজেকে বাঁচাতে মরিয়া চেষ্টা। অন্তত আরেকটি বল টিকে থাকার প্রবল তাড়না। একটি প্রাণপণ ডাইভ! রান আউট থেকে বাঁচতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন বেন স্টোকস। বল তার বাড়ানো ব্যাটে লেগে ফাঁকা জায়গা দিয়ে পার হলো সীমানা। নিউ জিল্যান্ডের স্বপ্নও যেন গেল বেরিয়ে। ইংল্যান্ড এগিয়ে গেল জয়ের ঠিকানার পথে।
ইংল্যান্ডের জন্য যা ছিল ভাগ্যের দারুণ ছোঁয়া, নিউ জিল্যান্ডের জন্য সেটিই দুর্ভাগ্যের প্রবল ছোবল। শেষ ওভারে স্টোকসের ডাইভ থেকে পাওয়া চারটি রান বদলে দিয়েছে খেলার মোড়। হয়তো ম্যাচের চূড়ান্ত ভাগ্যও গড়া হয়ে গেছে সেখানেই।
ম্যাচের শেষ ওভারের সেটি ছিল চতুর্থ বল। আগের বলেই ট্রেন্ট বোল্টকে দুর্দান্ত একটি ছক্কা মেরেছেন স্টোকস। ওভারের প্রথম দুটি বল থেকে আসেনি রান। স্টোকসের ছক্কার পরও তাই এগিয়ে ছিল নিউ জিল্যান্ডই।
বোল্টের করা চতুর্থ বলটি হলো ফুল টস। স্টোকস খেললেন মিড উইকেটে। ইংল্যান্ডকে জিততে হলে তার স্ট্রাইক ধরে রাখার বিকল্প ছিল না। তাই দারুণ দ্রুততায় দ্বিতীয় রানের জন্য ছুটলেন স্টোকস। সীমানা থেকে ফিল্ডার মার্টিন গাপটিলের থ্রো ধেয়ে আসছিল স্টাম্পের দিকে। তখনই স্টোকসের ডাইভ। বল তার বাড়ানো ব্যাটের সঙ্গে লেগে চলে গেল সীমানায়।
ধারাভাষ্য কক্ষে ইয়ান স্মিথ দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন চিত্র, ‘টুর্নামেন্টে কত কত ছক্কাই তো হলো। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ৬ রান এলো মাটি ঘেঁষে!”
বল বাউন্ডারিতে না গেলে বাড়তি কোনো রানই হতো না। কারণ এভাবে থ্রো থেকে ব্যাটসম্যানের শরীর বা ব্যাটে লেগে বল ফাঁকা জায়গায় গেলেও সাধারণত ক্রিকেটের স্পিরিটের প্রতি সম্মান দেখিয়ে রান নেয় না কেউ। স্টোকসও দৌড়ে বাড়তি রান নেওয়ার চেষ্টা করেননি। কিন্তু বাউন্ডারি হলে আম্পায়ার, অধিনায়ক কিংবা কারও কিছু করার থাকে না। নিয়ম অনুসরণ করতেই হবে।
যেখানে স্টোকস রান আউটও হতে পারতেন, কিংবা পেতেন বড়জোর দুই, সেখানেই উপহার মিলল আরও চারটি রান। যে সমীকরণ হওয়ার কথা ২ বলে ৭, সেটি হয়ে গেল ২ বলে ৩!
শেষ পর্যন্ত সেই ম্যাচ টাই হয়েছে, স্কোর সমান হয়েছে সুপার ওভারেও। নিয়ম অনুযায়ী বাউন্ডারি সংখ্যা বেশি হওয়ায় জিতে গেছে ইংল্যান্ড। ওই ডাইভের সৌজন্যে ৪ রান না হলে হয়তো ম্যাচ সুপার ওভারেই গড়াত না!
কিন্তু এই নিয়ম কি থাকা উচিত? ফিল্ডার অবশ্যই চেষ্টা করবেন স্টাম্পে লাগাতে। ব্যাটসম্যানও অবশ্যই চাইবেন যে কোনোভাবে নিজেকে রক্ষা করতে। সেই প্রক্রিয়ায় একটি ভালো থ্রো করে যদি উল্টো খেসারত দিতে হয়, তাহলে এই নিয়ম কতটুকু যৌক্তিক?
ফিল্ডিংয়ের সময় থ্রো শরীরে বা ব্যাটে লাগলে ‘ডেড বল’ করে দেওয়ার আলোচনা আগেও নানা সময়ে টুকটাক শোনা গেছে। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এই নিয়মের প্রসঙ্গ উঠল। কেন উইলিয়ামসন বরাবরই আপাদমস্তক ভদ্রলোক ও প্রচণ্ড বিনয়ী। আইন বদলের কোনো কথাই নেই তার। বরং নিউ জিল্যান্ড অধিনায়কের মতে, এটি ছাড়াও ম্যাচে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ ছিল।
“এই নিয়ম তো অনেক দিন থেকেই আছে। আমার মনে হয় না আমাদের এভাবে ভাবা উঁচিত হবে যে ওখানেই ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে গেছে। ছোট ছোট আরও অনেক কিছুই ছিল গুরুত্বপূর্ণ।”
“ম্যাচ টাই হলে, প্রত্যেকটি আলাদা ডেলিভারি নিয়ে কাঁটাছেড়া করা যায়। হতে পারত তাই অনেক কিছুই। এই হার হজম করা অবশ্যই কঠিন। তবে এটিই বাস্তবতা।”
ইংল্যান্ড অধিনায়ক ওয়েন মর্গ্যান জানালেন, ওই সময়ের পরিস্থিতি বুঝতেই তার বেশ খানিকটা সময় লেগেছে।
“আমি ঠিক নিশ্চিত ছিলাম না, ওই সময় কী হচ্ছিল। বেন ডাইভ দিয়েছেন, চারপাশে ধুলো উড়ছিল। তার সঙ্গে লেগে বল সীমানায় চলে গেল এবং কিউই ক্রিকেটাররা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বলছিল, “এসব কী হচ্ছে!” আমি স্রেফ ওই মুহূর্তে থাকতে চেষ্টা করেছি।”
তবে লর্ডসের ব্যালকনিতে বসে নিজেদের এই সৌভাগ্য দেখেও কোনো উল্লাস বা উদযাপন করেননি ইংল্যান্ড অধিনায়ক।
“আমি উদযাপন করিনি কারণ। কারণ কে জানে, সামনে এমন কিছু আমাদের ক্ষেত্রেও হতে পারে! খুবই সূক্ষ্ম ব্যবধান ছিল আজ। যে কারও ক্ষেত্রে এমনটি হতে পারে। আমরা এসব নিয়েই কথা বলেছি যে এমনকি সূক্ষ্মতম সুযোগও কাজে লাগাবে হবে। এসব ম্যাচে সবসময়ই নিজের খেলার চূড়ায় থাকতে হবে।”
ওই বলে পাওয়া ৬ রান নিয়ে বিতর্কের অবকাশ আছে আরও। নিয়ম অনুযায়ী, এভাবে ওভারথ্রো থেকে বাউন্ডারি এলে সেই চার রানের সঙ্গে দৌড়ে নেওয়া তত রানই যোগ হবে, ফিল্ডার বল ছাড়ার আগে যতবার দুই ব্যাটসম্যান রানিং বিটুইন দা উইকেটে পরস্পরকে অতিক্রম করতে পেরেছেন। এই ম্যাচের ক্ষেত্রে, স্টোকস ও আদিল রশিদ একবার প্রান্ত বদল করলেও পরের রানটির সময় গাপটিল বল থ্রো করার আগে দুই ব্যাটসম্যান পরস্পরকে অতিক্রম করতে পেরেছিলেন কিনা, নিশ্চিত নয়।
গাপটিল থ্রো করার আগে দুই ব্যাটসম্যান পরস্পরকে অতিক্রম না করলে বাউন্ডারির সঙ্গে কেবল ১ রান যোগ হবে। সেক্ষেত্রে ছয়ের জায়গায় হতে পারত পাঁচ রানও। ম্যাচের প্রেক্ষাপটে সেই ১ রান হতে পারত মহামূল্যবান। এটি নিয়েও বেশ চর্চা হতে পারে সামনের দিনগুলোয়।
-
আইসিসির বিশ্বকাপ একাদশে সাকিব
-
অস্ট্রেলিয়ান কোচের হাত ধরে ইংল্যান্ডের বিশ্বজয়
-
ওভারথ্রোয়ে ইংল্যান্ডকে ৬ রান দেওয়ার সিদ্ধান্ত ভুল: টাফেল
-
সতীর্থরা আস্থা রাখায় খুশি আর্চার
-
ওয়ানডে ইতিহাসের সেরা ম্যাচ?
-
আফগানিস্তান ‘এ’ দলের কাছে সিরিজ হারল ইমরুলরা
-
স্টোকসের যে ডাইভ ইংল্যান্ডকে নিল ট্রফির কাছে
-
বাউন্ডারি সংখ্যায় ট্রফির নিষ্পত্তি কতটা যৌক্তিক?
WARNING:
Any unauthorised use or reproduction of bdnews24.com content for commercial purposes is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action.
সর্বাধিক পঠিত
- বোলারদের দাপটে জিতল বাংলাদেশ
- নিজের ফ্ল্যাট থেকে মডেল নাজের লাশ উদ্ধার
- কুষ্টিয়ার এসপিকে হাই কোর্টে তলব, অবমাননার রুল
- মলিন ক্রিকেটের দিনে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক সাকিব
- রুল খারিজ, ঢাকায় শুধু সবুজ রঙা সিএনজি অটোরিকশাই চলতে পারবে
- ২ ম্যাচ নিষিদ্ধ মেসি
- যা করতে এসেছিলাম, করেছি: বিদায়ী ভাষণে ট্রাম্প
- নতুন চেহারার দ. আফ্রিকা টি-টোয়েন্টি দল
- বাংলাদেশ ১১১৫, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১০৫
- করোনাভাইরাস: এক দিনে ৮ মৃত্যু, সাড়ে আট মাসে সবচেয়ে কম