ফাইনালের ফয়সালা হতে পারে শুরুর লড়াইয়ে

ভারতের টপ অর্ডারের সঙ্গে লড়াইয়ে ধরা দিয়েছে অভাবনীয় সাফল্য। যেটি পরে রূপ নিয়েছে সেমি-ফাইনাল জয়ের আনন্দে। নিউ জিল্যান্ডের পেস আক্রমণের লড়াই এবার ইংল্যান্ডের টপ অর্ডারের সঙ্গে। ট্রেন্ট বোল্ট ও ম্যাট হেনরি জুটির সঙ্গে জনি বেয়ারস্টো ও জেসন রয় জুটির লড়াইয়ের ফল নির্ধারণ করে দিতে পারে ফাইনালের ভাগ্য।

ক্রীড়া প্রতিবেদক লন্ডন থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 July 2019, 07:05 PM
Updated : 13 July 2019, 07:05 PM

ক্রিকেট মাঠে লড়াইয়ের ভেতর থাকে অনেক লড়াই। ছোট ছোট সেসব লড়াইয়ের ওপরই অনেক সময় নির্ভর করে ম্যাচের ফল। ফাইনালের মতো ম্যাচে যখন দুই দলের ব্যবধান একদমই সামান্য, এইসব ছোট ছোট ধাপ বা পর্যায় তখন হয়ে ওঠে আরও গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংলিশ টপ অর্ডারের সঙ্গে কিউই পেস আক্রমণের লড়াই হতে যাচ্ছে তেমনই মহাগুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ।
 
বিশ্বকাপে এবার দল হিসেবে সামগ্রিক রান রেটে সবার ওপরে ইংল্যান্ড, ওভারপ্রতি তুলেছে ৬.৪৩ রান। নিউ জিল্যান্ড সেরা বোলিংয়ে। ওভারপ্রতি রান দিয়েছে তারা ৫.০১, বোলিং গড় ২৭.১২। বলার অপেক্ষা রাখে না, লড়াইটা টুর্নামেন্টের সেরা বোলিংয়ের সঙ্গে সেরা ব্যাটিংয়ের। 
 
বোলিং আর ব্যাটিংয়ে দুই দলের পারফরম্যান্সকে এত সমৃদ্ধ করেছে দুই দলের শুরুর জুটি। ম্যাচের পর ম্যাচ ইংল্যান্ডকে দারুণ শুরু এনে দিয়েছে রয় ও বেয়ারস্টোর জুটি। প্রাথমিক পর্বের শেষ দুই ম্যাচে যখন জয়টা ইংল্যান্ডের জন্য প্রায় আবশ্যিক, ভারতের বিপক্ষে এই জুটির রান ছিল ১৬০, নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ১২৩।
 
সেমি-ফাইনালে লক্ষ্য মাঝারি হলেও অস্ট্রেলিয়ার পেস আক্রমণের সামনে শুরুটা নড়বড়ে হলে ডেকে আনতে পারত বিপদ। কিন্তু বেয়ারস্টো ও রয় উল্টো ১২৪ রানের জুটিতে ম্যাচ থেকেই একদম ছিটকে দেন বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের। 
 
এই তিন ম্যাচের আগে চোটের কারণে বাইরে ছিলেন রয়। বেয়ারস্টোর সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন জেমস ভিন্স। তিন ম্যাচে এই জুটির রান ছিল ৪৪, ১ ও ০। চোটে পড়ার আগে রয় ও বেয়ারস্টোর সবশেষ জুটিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে এসেছিল ১২৮ রান। দুজনের একসঙ্গে ব্যাট করা ও জুটির মাহাত্ম্য ফুটে উঠছে সংখ্যাতেই।

এবার যে সাতটি ম্যাচে পাওয়ার প্লেতে একটির বেশি উইকেট হারায়নি ইংল্যান্ড, তারা জিতেছে সেই সবকটি ম্যাচ। যে তিনটি ম্যাচে পাওয়ার প্লেতে একাধিক উইকেট হারিয়েছে, তারা হেরেছে তিনটিই। ভালো শুরুর গুরুত্ব ফুটে উঠছে এই তথ্যেই।
 
সব মিলিয়ে ১০ ইনিংসে ৯৫.৭৫ স্ট্রাইক রেটে ৪৯৬ রান করেছেন বেয়ারস্টো। রয় ছিলেন আরও বিধ্বংসী, ৬ ইনিংসে তার ৪২৬ রান এসেছে ১১৭.০৩ স্ট্রাইক রেটে। তবে স্রেফ পরিসংখ্যানই সবকিছু নয়। দুজনের ব্যাটিংয়ের ধরণ, আগ্রাসী শরীরী ভাষা, এসব অনেক সময়ই গুঁড়িয়ে দেয় প্রতিপক্ষের মনোবল। 
 
ইংলিশদের সবচেয়ে বড় শক্তি যেখানে এই টপ অর্ডার, কিউইদের বড় শক্তি পেস আক্রমণ। তাদের হয়ে সর্বোচ্চ ১৮ উইকেট নিয়েছেন ফার্গুসন। তবে এই গতিতারকা আক্রমণে আসেন মূলত মাঝে আর শেষ দিকে। নতুন বলে স্কিলের কারুকার্যে দলকে বরাবর ভালো শুরু এনে দিয়েছেন বোল্ট ও হেনরি। ৯ ইনিংসে ১৭ উইকেট নিয়েছেন বোল্ট, ৮ ইনিংসে ১৩টি হেনরি।
 
সেমি-ফাইনালে এই দুজন মিলেই ধসিয়ে দিয়েছিলেন ভারতের শক্তিশালী টপ অর্ডার। রোহিত শর্মা, লোকেশ রাহুল ও বিরাট কোহলি - তিনজনই ফিরেছিলেন কেবল ১ রান করে। তিনটি উইকেটেই বাজে শটের চেয়ে বড় ভূমিকা ছিল বোল্ট-হেনরির স্কিলের। ফাইনালে রয় ও বেয়ারস্টোর পরীক্ষা নিতেও তারা প্রস্তুত।
 
মহারণে এই লড়াই যে গুরুত্বপূর্ণ, সেটি তুলে ধরলেন কেন উইলিয়ামসনও। তবে অধিনায়ককে ভাবতে হয় সবদিক নিয়েই। একদিকে বেশি মনোযোগ দিতে গিয়ে যাতে অন্যদিকে ভাবনা নড়বড়ে না হয়, সেটিও মনে করিয়ে দিলেন নিউ জিল্যান্ড অধিনায়ক। 
 
“ওই দুজন (রয়-বেয়ারস্টো) টুর্নামেন্ট জুড়েই অসাধারণ খেলেছে। এর আগেও ভালো খেলেছে। তবে ফাইনালের মতো ম্যাচে আরও অনেক কিছুই গুরুত্বপূর্ণ হবে। তাদের দলে যতজন ম্যাচ উইনার আছে, তাদের প্রতি আমাদের পূর্ণ শ্রদ্ধা আছে। টপ অর্ডারকেও সেই তালিকায় রাখতে হবে।” 
 
রয়-বেয়ারস্টো ব্যর্থ হলে অবশ্যই ইংল্যান্ডের সম্ভাবনা শেষ নয়। বোল্ট-হেনরি উইকেট না নিলেও যেমন কিউই বোলিং আক্রমণের সামর্থ্য আছে ঘুরে দাঁড়ানোর। তবে শুরুর ছন্দ বা সুর বেঁধে দেওয়া, দুটিই নির্ধারণ করে দেবে এই লড়াইয়ের ফল।