নতুন চ্যাম্পিয়নের অপেক্ষায় ক্রিকেট বিশ্ব

লর্ডসের বিখ্যাত লং রুমের দরজার ঠিক মাঝখানে টেবিলে রাখা ট্রফি। ফাইনালের আগের দুপুরে দুই পাশে দাঁড়িয়ে পোজ দিলেন ওয়েন মর্গ্যান ও কেন উইলিয়ামসন। ফাইনাল শেষে কার হাতে উঠবে ওই সুদৃশ্য সোনালী ট্রফি? দেড় মাস ধরে ৪৭ ম্যাচের দীর্ঘ পথচলা, অনেক উত্থান-পতন ও নাটকীয়তা, সাফল্য-ব্যর্থতার অনেক গল্প শেষে বিশ্বকাপ এখন অপেক্ষায় শেষ রোমাঞ্চের। নতুন চ্যাম্পিয়নকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত ক্রিকেটতীর্থ বলে খ্যাত লর্ডস। অপেক্ষায় পুরো ক্রিকেট বিশ্ব।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিলন্ডন থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 July 2019, 05:52 PM
Updated : 13 July 2019, 06:20 PM

রোববার লর্ডসের ফাইনালে মুখোমুখি হতে যাওয়া ইংল্যান্ড ও নিউ জিল্যান্ড এই শিরোপার স্বাদ পায়নি আগে কখনোই! ক্রিকেটের জন্ম যেখানে, ওয়ানডে ক্রিকেটের জন্মও, সেই ইংল্যান্ড কিংবা ভদ্রলোকের খেলায় বরাবরই এই চেতনার বড় বিজ্ঞাপন মনে করা হয় যাদেরকে, যুগে যুগে যারা মন রাঙিয়েছে বিনোদনদায়ী ক্রিকেটে, সেই নিউ জিল্যান্ড - প্রথমবার কোনো একটি দল পাবে বিশ্বকাপের ট্রফিতে চুমু দেওয়ার অনির্বচনীয় স্বাদ।

বিশ্বকাপের ইতিহাসে একটি জায়গায় দুই দলই এতদিন ছিল প্রায় এক বিন্দুতে। দুই দলেরই পরিচিতি ছিল কাছে গিয়ে পথ হারানো দল হিসেবে।

প্রথম পাঁচ বিশ্বকাপে তিনবার ফাইনাল খেলেছিল ইংল্যান্ড। জিততে পারেনি একবারও। প্রথম ১০ বিশ্বকাপে ৬ বার সেমি-ফাইনাল খেলে নিউ জিল্যান্ড ফাইনালের মুখ দেখেনি একবারও। অবশেষে গত আসরে প্রথমবার পা রাখে ফাইনালে। কিন্তু শেষ চারের বৃত্ত ভাঙলেও শেষটা রাঙানো হয়নি।

এবার কিউইদের টানা দ্বিতীয় ফাইনাল। বলা যায় গত আসরের ধারাবাহিকতা। সেবার আগ্রাসী ও অনুপ্রেরণাদায়ী নেতৃত্বে নজরকাড়া ব্রেন্ডন ম্যাককালাম এবার নেই। তবে সেই দলের মূল চরিত্ররা আছেন প্রায় সবাই। সেবারের সহ-অধিনায়ক উইলিয়ামসন এবার দুর্দান্ত ব্যাটিং ও অসাধারণ নেতৃত্বে নিজেকে নিয়ে গেছেন নতুন উচ্চতায়।

ইংল্যান্ডের ফাইনাল খেলার সাফল্যও গত চার বছরের ধারাবাহিকতায়। তবে সেটির শুরু গত বিশ্বকাপের পর থেকে! সেবার গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেওয়ার পর খোলনলচে বদলে ফেলা হয় ইংল্যান্ডের ওয়ানডে দলের।

ইংলিশ ক্রিকেটের চিরায়ত ব্যর্থ ঘরানাকে ছুঁড়ে ফেলা হয়। ট্রেভর বেলিসের কোচিং ও মর্গ্যানের নেতৃত্বে ইংল্যান্ড খেলতে থাকে দুর্দান্ত আগ্রাসী ক্রিকেট। জন্ম দেয় অত্যাশ্চর্য সব রেকর্ডের। নিজেদের পাশাপাশি ওয়ানডে ক্রিকেটকেও তারা তুলে নেয় নতুন উচ্চতায়।

এই বদলে যাওয়া, এই এগিয়ে চলা, এই যে অসংখ্য রেকর্ডের মালা, সবকিছুর পূর্ণতা দিতে পারে রোববারের ফাইনাল। যদি প্রথমবার ধরা দেয় বিশ্বকাপ শিরোপা। ম্যাচের আগের দিন ইংল্যান্ড অধিনায়ক মর্গ্যানের কণ্ঠে ফুটে উঠল উপলক্ষের বিশালত্ব।

“আমার জন্য, ড্রেসিং রুমের সবার জন্য এই দিনটির অর্থ অনেক। চার বছরের কঠোর পরিশ্রম, অসংখ্য পরিকল্পনার পর সামনে এসেছে বিশ্বকাপ জয়ের চেষ্টা করার সুযোগ। দেশের সবাই যেভাবে আমাদের প্রশ্নাতীত সমর্থন দিয়ে গেছে, দল হিসেবে আমরা যেভাবে এগিয়েছি, এই দলের অংশ হওয়াটা অনেক বড় সৌভাগ্য।”

“শক্তিশালী দুটি দলের জন্য এটি দারুণ মঞ্চ। আশা করি দারুণ একটি খেলা হবে। আমরা ম্যাচটি উপভোগ করব। জয়ের জন্য সম্ভাব্য সব চেষ্টা করব। লড়াইয়ে পিছপা হব না।”

ইংলিশ ক্রিকেটের জন্যও এই ম্যাচ মহাগুরুত্বপূর্ণ। ২০০৫ অ্যাশেজের পর এই প্রথম ইংল্যান্ডে ক্রিকেট দেখা যাবে ‘ফ্রি টু এয়ার’ চ্যানেলে। ১৪ বছর পর আবার সুযোগ এসেছে ক্রিকেটের জোয়ার আসার। ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন হলে নিশ্চিতভাবে নতুন দিনের সূচনা হবে ইংলিশ ক্রিকেটে।

নিউ জিল্যান্ডের জন্যও এই শিরোপা জয় হবে তাদের ক্রিকেটে বড় একটি মাইলফলক। ক্রিকেট সেখানেও জনপ্রিয়তার নিক্তিতে অনেক পেছনে। ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে যৌথ আয়োজনের বিশ্বকাপে ফাইনাল খেলে তারা নাড়া দিতে পেরেছিল বটে। তবে ফাইনাল হারার পর আবার ঝিমিয়ে পড়েছে সেখানকার ক্রিকেটপ্রেম। প্রথম বিশ্বকাপ জয় নিশ্চিতভাবেই কিউই ক্রিকেটে বয়ে আনতে পারে রঙিন দিনের সূচনা।

বিশ্বকাপের ফাইনালে এমনিতে ‘আন্ডারডগ’ বলে কিছু থাকার কথা নয়। তবে শক্তি-সামর্থ্যে ইংল্যান্ড একটু এগিয়ে বলেই হয়ত ম্যাচের আগে কিউই অধিনায়ক উইলিয়ামসনের সংবাদ সম্মেলনে ‘আন্ডারডগ’ প্রসঙ্গটি উঠল।

“কথাটি অনেক সময়ই অনেকে বলেছে এবং আমি মনে করি, ইংল্যান্ড যোগ্য হিসেবেই ফেভারিটের সম্মান পাচ্ছে। টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই তারা ফেভারিট এবং ভালো ক্রিকেট খেলছে।”

 “তবে আমরা যে ‘ডগ’ হই না কেন, আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো মাঠের ক্রিকেটে মনোযোগ দেওয়া। যে ধরনের ক্রিকেট আমরা খেলতে চাই, সেটি করা। আর বছরের পর বছর ধরে আমরা দেখেছি যে ক্রিকেটে যে কোনো দল যে কাউকে হারাতে পারে, তা যে ‘ডগ’ হোক না কেন।”

উইলিয়ামসনের কথাতেই ফুটে উঠছে প্রত্যয়। মর্গ্যান তো জানিয়েই দিয়েছেন নিজেদের উজাড় করে দেওয়ার কথা। দুই দলের প্রথম শিরোপা লড়াই হয়ে উঠতে পারে তাই জমজমাট। শেষ পর্যন্ত ট্রফি যার হতেই উঠুক, সেই দেশের ক্রিকেটেই আসবে নতুন প্রাণের জোয়ার। আখেরে এবারের ফাইনালে জয়টি তাই হতে যাচ্ছে ক্রিকেটেরই!