যত কথাই বলি, বিশ্বকাপে ব্যর্থ হয়েছি: তামিম
লন্ডন থেকে আরিফুল ইসলাম রনি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 06 Jul 2019 03:03 PM BdST Updated: 06 Jul 2019 03:06 PM BdST
গত বিশ্বকাপের পর থেকে এই বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত আড়াই হাজারের বেশি ওয়ানডে রান করেছেন ৫৭.০৬ গড়ে। ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও ছিলেন সফল। কিন্তু বিশ্বকাপ আসতেই আবার বিবর্ণ তামিম ইকবাল। ৮ ইনিংসে কেবল ১ ফিফটিতে ২৯.৩৭ গড়ে করেছেন ২৩৭ রান। প্রত্যাশা একটুও পূরণ করতে পারেননি, বলছেন নিজেই। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপচারিতায় নিজের পারফরম্যান্সের ব্যবচ্ছেদে মনস্তাত্ত্বিক সমস্যাকেই ব্যর্থতার মূল কারণ বললেন এই ওপেনার। শোনালেন ফেরার প্রত্যয়।
এবারের বিশ্বকাপে নিজের পারফরম্যান্সকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
তামিম ইকবাল: ব্যর্থ হয়েছি। সরাসরি বলি বা যেভাবেই বলি, আমি ব্যর্থ হয়েছি। দলের বা নিজের কাছে নিজের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি।
সবচেয়ে দুঃখজনক হলো যে, আমি খারাপ ব্যাটিং করিনি। ব্যাটিং মোটামুটি করেছি। কিন্তু বড় স্কোর পাইনি। শেষ ম্যাচটিতেই কেবল সিঙ্গেল ডিজিটে আউটে হয়েছি। তার আগের চারটি স্কোর ৪৮, ৬২, ৩৬, ২২... এমন নয় যে ম্যাচের পর ম্যাচ ১, ২, ৫, ১০ রানে আউট হয়েছি। যতক্ষণ উইকেটে ছিলাম, নিয়ন্ত্রণ হারানি কখনোই। কিন্তু হুট করেই আউট হয়ে গেছি। এমন সব আউট হয়েছি, যেগুলো বেশিরভাগ সময় আমার নিয়ন্ত্রণে ছিল না।
অবশ্যই আমি নিজের যে মান ধরে রাখতে চাই, এতদিন ধরে যে মান ধরে রেখেছি, সেই বিচারে অবশ্যই ব্যর্থ টুর্নামেন্ট আমার জন্য। এটা মেনে নিতেই হবে। যত কথা বলি বা ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করি, এটা মানতেই হবে আমাকে যে ব্যর্থ হয়েছি। এখন আমাকে পথ খুঁজতে হবে কিভাবে এখান থেকে বের হতে পারি। আগেও সেটি করতে পেরেছি। আবার না পারার কারণ নেই।
না পারার কারণটি কি ব্যাটিং টেকনিকের কোনো সমস্যা?
তামিম: যখন একজন ব্যাটসম্যান রানে থাকে না, তখন এসব প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। আমার নিজের মনেও প্রশ্ন জেগেছিল যে কোথাও ভুল করছি নাকি। তখন ব্যাটিং কোচের সঙ্গে কথা বলেছি। নিল (ম্যাকেঞ্জি) বলেছেন, ‘সত্যিই যদি তোমার টেকনিক্যাল সমস্যা থাকত, তাহলে তোমাকে বলতে পারতাম, কাজ করতে পারতাম!”
কম-বেশি যারা ক্রিকেট বোঝে, তার সবাই অন্তত এটা বুঝতে পারবে, যে আউটগুলো আমি হয়েছি, এসবে টেকনিকের কোনো ভূমিকা নেই। এই টেকনিকেই ১২ বছর খেলছি। গত ৫ বছর খেলছি, প্রচুর রান করেছি। ইনসাইড এজ হয়ে কেউ তিনবার আউট হয়ে গেলে টেকনিকের কোনো ব্যাপার নেই।
আরেকটা ব্যাপার হলো, ক্রিকেটে বাজে ফর্ম আসেই। কিছু অফ ফর্মের সময় দেখা যায় ব্যাটে-বলেই হচ্ছে না ঠিকমতো। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে তা ছিল না। বেশিরভাগ ইনিংসে ভালো খেলছিলাম। কিন্তু বড় হয়নি। আমি অবশ্যই ব্যর্থ হয়েছি। তবে ব্যর্থ টুর্নামেন্টেও ৩০ গড় খারাপ নয়।

তামিম: হ্যাঁ ছিল। এটাই ছিল বড় কারণ। বিশেষ করে প্রথম তিন ম্যাচে আমি নিজের ওপর অনেক চাপ নিয়ে ফেলেছিলাম। আমার শুধু মনে হচ্ছিল, ২০১৫ বিশ্বকাপের সময় যে অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে, সেটি যেন ফিরে না আসে। কিন্তু আদতে সেটিই হয়ে গেছে।
বিশ্বকাপের ঠিক আগে হঠাৎ করেই নিজেকে গুটিয়ে ফেলেছিলেন বলে মনে হচ্ছিল। মনস্ত্বাত্ত্বিক সমস্যাটি কি আচমকাই হয়েছিল?
তামিম: দেখুন, আমি যদি কারও সঙ্গে আলোচনা করি, তারা নানারকম পরামর্শ দেবে যে এটা করো, ওটা করো। কিন্তু কেবল আমিই জানি, ২০১৫ সালে কিসের ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে।
আমি যদিও শিক্ষা নিয়েছি। এবারের সোশ্যাল মিডিয়া ট্রল বা সমালোচনা, জানি অনেক কিছুই হচ্ছে। তবে সেসবের তেমন কোনো প্রভাব আমার ওপর পড়েনি। মনে হয়, ভালোই সামেলেছি। কিন্তু আমি শুধু একটি ব্যাপার নিয়েই ভয় পাচ্ছিলাম, পরিবার। পরিবারকে যেন হেনস্থা না হতে হয়। আমি নিজে এখন সামলাতে শিখেছি। কিন্তু চাইনি আমার এই সোশ্যাল মিডিয়া ট্রলিং বা এসবে যেন আমার পরিবারকে টেনে আনা হয়। এটাও হচ্ছে। ২০১৫ সালে যখন এসব চলছিল, আমি নিজেই ঠিকভাবে সামলাতে পারিনি। এবার সেরকম হয়নি।
আমি প্রত্যাশ পূরণ করতে পারিনি অনেক কারণে। হয়ত শট নির্বাচন কয়েকটি ম্যাচে ভালো ছিল না। হতো ভাগ্য পাশে ছিল না। ভাগ্যকে আমি অবশ্যই অজুহাত দেব না। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে, সত্যিই এটি একটি কারণ ছিল।

তামিম: খুব কঠিন। গত বিশ্বকাপের পাকিস্তান সিরিজটি আমার অসাধারণ কেটেছিল। এবার সামনে শ্রীলঙ্কা সিরিজ আছে। আমার চেষ্টা থাকবে এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা। কখনও সফল হব, নাও হব না। কিন্তু চেষ্টা করব।
আরেকটা ব্যাপার হলো, নানা লোকের নানা মত থাকবেই। আমাকে আমার মতোই চেষ্টা করতে হবে। তিন-চারটি ম্যাচ রান না পেলেই অনেক কাছে এসে বলে, ‘উইকেটে গিয়েই শট খেলো’, বা ‘এটা করো, ওটা করো।’ অনেক কিছু বলবে। কিন্তু গত ১২-১৩ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে আমি শিখেছি, আমি নিজের খেলা বদলে ফেলে, সেটি হতো আমার সবচেয়ে বাজে সিদ্ধান্ত। কারণ আমি এভাবে খেলেই গত চার বছরে সাফল্য পেয়েছি। আমি প্রথম থেকে শেষ ম্যাচ পর্যন্ত, ঠিক একইভাবে শুরু করেছি। এমন নয় যে আমার খেলায় কোনো পার্থক্য ছিল। আজকে আমি অন্যরকমভাবে আউট হয়েছি, আরেকদিন বেশি আক্রমণাত্মক খেলতে গিয়ে আউট হয়েছি, পরের ম্যাচে বেশি রক্ষণাত্মক...এরকম হয়নি। আমার রুটিন প্রতি ম্যাচেই ছিল এক। যেটি আমার মতে এবং আমাদের কোচদের মতে, খুব ভালো দিক।
যখন রান পেয়েছি, তখন অনুশীলনে যা যা করেছি, এবারও সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছি। কিছুই বদলাইনি। এটা স্রেফ ক্রিকেটের নিয়মেই আসা একটি সফর, একটি টুর্নামেন্ট যেখানে ভালো করতে পারিনি। দুর্ভাগ্যজনক হলো, বিশ্বকাপেই সেটি এলো। বিশ্বকাপেই এলো...। আমি নিজেও ভালো করতে চেয়েছিলাম প্রবল, এজন্যই কষ্ট অনেক বেশি।

তামিম: কঠিন, অনেক কঠিন। এটা হজম করতে, কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে। জানি না, বাড়ি ফেরার পর কী হবে। তবে নিজেকে আমি চিনি বলেই জানি, পালিয়ে যাব না।
বিশ্বকাপের পরপরই শ্রীলঙ্কায় তিন ওয়ানডে সফর হতে পারে। তার আগে পরিকল্পনা কি?
তামিম: সেবার বিশ্বকাপের পর পাকিস্তান সিরিজের আগে বেশি সময় ছিল। এক-দেড় মাসের মতো সময় ছিল। এবার সময় একটু কম। সত্যি বলতে, আমি দেশে ফেরার পর বুঝতে পারব কী করা উচিত।
দু-একটি বিকল্প আছে। এমন হতে পারে ট্রেনিং করার জন্য দেশের বাইরে চলে গেলাম। হতে পারে দেশেই করলাম। সিদ্ধান্ত নেইনি। আমার পরিবারকে অনেকদিন ধরে দেখি না। দেশে গিয়ে ওদের সঙ্গে একটু সময় কাটিয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেব। তবে এটা নিশ্চিত, যখনই হোক, এখান থেকে আমি বেরিয়ে আসব।

তামিম: আমার এসব প্রভাব ফেলে না। পাকিস্তানের সঙ্গে ম্যাচেও যদি আমি আবার ক্যাচ মিস করতাম, তার পরদিনই আরেকটা খেলা থাকত, ওই বোলার আমাকেই ফিল্ডিংয়ে চাইবে ওই পজিশনে। সেই আত্মবিশ্বাস আমার আছে।
মুস্তাফিজের বলে আমি রোহিতের ক্যাচটি ছেড়েছিলাম। হেঁটে যাওয়ার সময় মুস্তাফিজ আমাকে বলেছিল, “ভাই, আপনি আমার বোলিংয়ে এত দারুণ সব ক্যাচ নিয়েছেন, আপনি মিস করলে আমার কষ্ট লাগে নাই।”
আমি জানি, ওই ক্যাচ মিসের কারণে অনেক ধরনের অনেক কিছু হয়েছে। এরপর চাইলে পাকিস্তানের বিপক্ষে আমি সহজেই নিরাপদ একটি ফিল্ডিং পজিশন বেছে নিতে পারতাম। কারও কিছু বলার ছিল না। কিন্তু আমি একটি ব্যাপার মনে করেছি, আমি যদি ওই পজিশন থেকে সরে যাই, তাহলে আর কখনও ওই পজিশনে দাঁড়াতে পারব না। মনে ভয় ঢুকে যাবে। পাকিস্তানের বিপক্ষেও আমি একই পজিশনে ছিলাম। মাঠের একপ্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্তে দৌড়ে ক্যাচিং পজিশনেই ছিলাম।
ফিল্ডিংয়ের একটা ব্যাপার হলো, কোচ, অধিনায়ক যখন আস্থা রাখে যে ওই পজিশনের জন্য আমি উপযুক্ত, তাহলে আমি নিজের ওপর কেন রাখব না! আমি আগেও ক্যাচ ছেড়েছি, দারুণ ক্যাচও নিয়েছি। সামনেও ভালো ক্যাচ হবে, মিসও হবে। পৃথিবীতে এমন কোনো ফিল্ডার নেই ক্যাচ ছাড়েনি।
তামিম: এখানে অনেক উন্নতি করতে হবে, কোনো সন্দেহ নেই। এই দলে বেশ কজন ভালো ফিল্ডার আছে। তবে ভালো ফিল্ডারদের প্রায় সবারই কিছু না কিছু চোট সমস্যা ছিল। তাদেরকে আড়াল করার জন্য সবাইকে অনেক কিছু করতে হয়েছে। ভালো ফিল্ডাররা ফিট থাকলে হয়তো আরেকটু ভালো হতো ফিল্ডিং।
তবে কোনো সন্দেহ নেই, আমাদের পুরো দলকে ফিল্ডিংয়ে উন্নতি করতে হবে। এই বিশ্বকাপেই ফিল্ডিংটা ভালো হলে ফল অন্যরকম হতে পারত।
সেই কিশোর বয়স থেকে সাকিবকে দেখছেন, একসঙ্গে বেড়ে উঠেছে বয়সিভিত্তিক ক্রিকেট থেকে জাতীয় দলে। এবার তার বিশ্বকাপ পারফরম্যান্স কেমন দেখলেন?
তামিম: সাকিবকে আমি গত ১৩-১৪ বছর বা তার বেশি সময় ধরে দেখছি। এবার ওর যতটা নিবেদন দেখা গেছে... এমন নয় যে নিবেদন দেখালে বা পরিশ্রম করলেই পারফরম্যান্স হবে। তবে ওর মধ্যে অনেক পরিবর্তন দেখেছি। এতটা কঠোর পরিশ্রম করতে দেখেছি যে আমি বলছিলাম, ও যেন ভালো করে।
এই বিশ্বকাপে ওর যা পারফরম্যান্স, যা অর্জন, এক কথায় তা ‘ফেনোমেনাল’। কোনো কিছুর সঙ্গেই এই পারফরম্যান্সের তুলনা চলে না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এ রকম ধরনের পারফরম্যান্সের পর তার দলের সেমিতে খেলার কথা। এটিই হতাশার যে আমরা পারিনি। আমার খারাপ লাগছে যে আমি অবদান রাখতে পারলে হয়তো সেমি-ফাইনাল সম্ভব হতো। দলের জন্য, তার জন্য। যাই হোক, সে যা অর্জন করেছে, কেউ তা কেড়ে নিতে পারবে না। আশা করি সে এভাবেই চালিয়ে যাবে।
-
আইসিসির বিশ্বকাপ একাদশে সাকিব
-
অস্ট্রেলিয়ান কোচের হাত ধরে ইংল্যান্ডের বিশ্বজয়
-
ওভারথ্রোয়ে ইংল্যান্ডকে ৬ রান দেওয়ার সিদ্ধান্ত ভুল: টাফেল
-
সতীর্থরা আস্থা রাখায় খুশি আর্চার
-
ওয়ানডে ইতিহাসের সেরা ম্যাচ?
-
আফগানিস্তান ‘এ’ দলের কাছে সিরিজ হারল ইমরুলরা
-
স্টোকসের যে ডাইভ ইংল্যান্ডকে নিল ট্রফির কাছে
-
বাউন্ডারি সংখ্যায় ট্রফির নিষ্পত্তি কতটা যৌক্তিক?
WARNING:
Any unauthorised use or reproduction of bdnews24.com content for commercial purposes is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action.
সর্বাধিক পঠিত
- রিজার্ভ আবার ৪২ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল
- শেষদিনের রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি
- সাকিবের কোম্পানিকে বিএসইসির নোটিস
- পিএসজির গোল উৎসবে এমবাপের হ্যাটট্রিক
- মাঙ্কিপক্স: দেশের সব বন্দরে সতর্কতা
- আমাকে ‘বুড়া’ ডেকেছিল: ঢাবির পঞ্চাশোর্ধ্ব ভর্তি পরীক্ষার্থী বেলায়েত
- ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি দলে ফিরলেন মোসাদ্দেক-এনামুল-সাইফ
- জামিন নয়, নর্থ সাউথের চার ট্রাস্টিকে পুলিশে দিল হাই কোর্ট
- আইনপ্রণেতা হাজি সেলিম দণ্ড নিয়ে কারাগারে
- থানায় অভিযোগ করেছিল তরুণ, জেল থেকে বেরিয়ে খুন করল সন্ত্রাসীরা