গতিময় পেসার এমনিতে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে নেই একজনও। তেমন কেউ নেই দেশে বসেও। নেই খুব ভালো সুইং বোলারও। নতুন বলে বাংলাদেশের পেসারদের বরাবরের ভরসা নিয়ন্ত্রণ। জুটি বেঁধে বা গ্রুপ হিসেবে বোলিং করা। সম্ভব হলে ছোট ছোট সুইং করানো। এবারের বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত সেই কাজটুকু ঠিকভাবে করতে পারেননি পেসাররা।
বিশ্বকাপের ৬ ম্যাচে বাংলাদেশের পেসাররা এখনও পর্যন্ত নিতে পেরেছেন ২৪ উইকেট। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, নতুন বলে উইকেট এসেছে কেবল একটি! টন্টনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চতুর্থ ওভারে ক্রিস গেইলকে ফিরিয়েছিলেন মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন।
৬ ম্যাচে নতুন বলে ৫টি বোলিং জুটি ব্যবহার করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচটি ছাড়া শুরুর বোলিং জুটি একটি ম্যাচেও দলকে এনে দিতে পারেনি স্বস্তির শুরু।
প্রথম ১০ ওভারে বোলারদের হাত ধরে উইকেট এসেছে আর কেবল একটি ম্যাচেই। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সাকিব আল হাসান নিয়েছিলেন দুটি উইকেট। তবে সাকিব সেদিন আক্রমণে এসেছিলেন চতুর্থ বোলার হিসেবে।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দলকে প্রথম উইকেট এনে দিয়েছিলেন সেদিন নতুন বল হাতে নেওয়া মাশরাফি। তবে কার্ডিফে সেদিন জনি বেয়ারস্টোর উইকেটটি বাংলাদেশ অধিনায়ক নিয়েছিলেন নিজের দ্বিতীয় স্পেলে। ২০তম ওভারে ইংলিশদের রান ততক্ষণে ১২৮।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নটিংহ্যামে দলকে প্রথম উইকেট এনে দিয়েছেন ষষ্ঠ বোলার হিসেবে আক্রমণে আসা সৌম্য সরকার। সবশেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম উইকেট এসেছে চতুর্থ বোলার সাকিবের সৌজন্যে, একাদশ ওভারে।
প্রতিপক্ষের ৩৫ রানের আগে বাংলাদেশ উদ্বোধনী জুটি ভাঙতে পেরেছে কেবল ১টি ম্যাচে। সেই ম্যাচে ৬ রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর দ্বিতীয় জুটিতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ তুলেছিল ১১৬ রান।
সব মিলিয়ে নতুন বলে বাংলাদেশের পারফরম্যান্সের চিত্র করুণ। মূল কারণ, নতুন বলে নেই তেমন কার্যকর বোলার। নেই নতুন বলে বোলিং করতে চাওয়ার মতো পেসার।
ভারতের বিপক্ষে ম্যাচেও বাংলাদেশের মূল চ্যালেঞ্জ হবে টপ অর্ডার। প্রথম তিন ব্যাটসম্যান দুর্দান্ত হলেও ভারতের মিডল অর্ডারের সামর্থ্য এখনও প্রশ্নবিদ্ধ। টপ অর্ডার দ্রুত ভেঙে দিতে পারলে চাপে ফেলা যাবে এই মিডল অর্ডারকে। কিন্তু টপ অর্ডারে ছোবল দেবেন কে?
বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশ বললেন, দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত সবাই।
“আমরা চেষ্টা করি সবাইকে প্রস্তুত রাখতে যেন নতুন বলে যে কেউ বল করতে পারে। এখন আমরা তিন জন পেসার খেলাচ্ছি। রুবেল একটি ম্যাচ খেলেছে। সবাই নতুন বলে বোলিং করতে পারে।”
“কন্ডিশন যদি পক্ষে থাকে, বাতাসে একটু সু্ইং মেলে, ফিজের (মুস্তাফিজ) চেয়ে সাইফ হয়ত তখন একটু বেশি সুইং পায়। ফিজ সবসময়ই একটু শেপ পায়। ম্যাশ তো সবসময়ই সুইং করাতে পারে। এত বিকল্প থাকা সবসময়ই ভালো।”
বোলিং কোচের কথায় যতটা আশার ছবি, বাস্তব চিত্র ততটাই হতাশার। দল সংশ্লিষ্ট অনেক সূত্র থেকেই জানা যায়, মুস্তাফিজ বা সাইফ, নতুন বল হাতে নিতে স্বতঃস্ফূর্ত নন কেউই।
নতুন বল অবশ্যই দুজনের কারও শক্তির জায়গা নয়। তবে দলের প্রয়োজনে নিজের সীমাবদ্ধতা জয় করার তাড়নাও খুব একটা দেখা যায়না।
তিনটি ম্যাচে নতুন বল হাতে নিয়েছেন মুস্তাফিজ। উইকেট পাওয়া তো বহু দূর, একটিতেও নতুন বলে নিয়ন্ত্রিত বোলিংও করতে পারেনি। লাইন-লেংথ ছিল এলোমেলো, আলগা বল দিয়েছেন বেশ, ধারাবাহিক ছিলেন না একটুও। নতুন বলে তার অনাগ্রহই হতে পারে মূল কারণ। তার চাওয়া থাকে, যত দ্রুত সম্ভব বল হয়ে উঠুক পুরোনো।
সাইফের ক্ষেত্রেও চিত্র অনেকটা একই রকম। তার বেশি পছন্দ মাঝে ও শেষে বোলিং। শেষ দিকে টানা ৫-৬ ওভার করতেও তার আপত্তি নেই। কিন্তু পাওয়ার প্লের ভেতর বোলিংয়ে তার অস্বস্তি বরাবরের।
তুলনামূলক কম গতির বোলার হয়েও তাই পাওয়ার প্লের ভেতর নিয়মিত নতুন বল হাতে নিচ্ছেন মাশরাফি। নিজে কাজ চালাতে পারলেও আরেক পাশের বোলার বাছাইয়ে অধিনায়ককে বিপাকে পড়তে হচ্ছে প্রায়ই।
এছাড়া বাতাসের বিপক্ষে বোলিং করতে না চাওয়ার পুরোনো রোগ তো আছেই। পেসারদের কেউই সেই চ্যালেঞ্জ নিতে এগিয়ে আসেন না নিজে থেকে। ডাকা হলেও দেখান না খুব আগ্রহ। তুলনামূলক কম গতির হয়েও বাতাসের বিপক্ষে বোলিংয়ের কাজটি বেশিরভাগ সময় করতে হয় মাশরাফিকে।
৬ ম্যাচের পাঁচটিতে একাদশের বাইরে থাকা রুবেল হোসেন তো পুরোনো বলে বেশি স্বচ্ছন্দ বরাবরই। বাইরে থাকা আবু জায়েদ চৌধুরী নতুন বলে বেশি কার্যকর। কিন্তু টিম কম্বিনেশনে তিনি তো একাদশের বিবেচনায়ই আসেন না। সব মিলিয়ে নতুন বল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ দলের বড় মাথাব্যথার কারণ।