ইংল্যান্ড: অপেক্ষার অবসানের আশায়

২০১৫ বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পর আমূল বদলে গেছে ইংল্যান্ডের ওয়ানডে ক্রিকেট। ওয়েন মর্গ্যানদের ভয়ডরহীন ক্রিকেট যেন এক সময়ের অজেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর অপ্রতিরোধ্য অস্ট্রেলিয়ার ইংলিশ সংস্করণ। আগের ছয় আসরে কোয়ার্টার-ফাইনালের বাধা পেরুতে না পারা দলটি স্বপ্ন দেখছে বিশ্ব জয়ের।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 May 2019, 10:20 AM
Updated : 25 May 2019, 11:48 AM

প্রথম পাঁচ আসরে অন্তত সেমি-ফাইনালে খেলেছিল ইংল্যান্ড। এর মধ্যে তিনবার ফাইনালে উঠলেও পায়নি শিরোপার স্বাদ। এরপর আর শেষ চারেই যেতে পারেনি তারা। দেশের মাটিতে ১৯৯৯ বিশ্বকাপ যেন ছিল দুঃস্বপ্ন। বিদায় নিতে হয় গ্রুপ পর্ব থেকে, টুর্নামেন্টের তখনও বাকি ছিল ২১ দিন।

অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জিল্যান্ডে হওয়া গত বিশ্বকাপটাও কেটেছে খুব বাজে। হারতে হয়েছে টেস্ট খেলুড়ে সব প্রতিপক্ষের কাছে। শুধু স্কটল্যান্ড ও আফগানিস্তানকে হারানো দলটি বিদায় নেয় গ্রুপ পর্ব থেকে।

এরপর থেকে নিজেদের খেলার ধরন পুরো বদলে ফেলেছে ইংল্যান্ড। সুফলও পেয়েছে তাতে। ওই আসরের পর থেকে এবারের বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত খেলা ৮৮ ম্যাচের ৫৮টিতে জিতেছে ইংল্যান্ড। হেরেছে ২৩টিতে, একটি টাই, পরিত্যক্ত হয়েছে ছয়টি ম্যাচ। বিশ্বকাপের দলগুলোর মধ্যে জয় পরাজয়ের অনুপাতে সবচেয়ে এগিয়ে মর্গ্যানের দল।

বিশ্বকাপের পর ফল হওয়া নিজেদের প্রথম ম্যাচে রানার্সআপ নিউ জিল্যান্ডকে ২১০ রানে উড়িয়ে নতুন করে শুরু করে ইংল্যান্ড। দুই বিশ্বকাপের মাঝে তারা তিনশ বা তার বেশি রান করেছে ৩৮ বার। নয়বার জিতেছে তিনশ বা তার বেশি রান তাড়া করে। দুইবার ভেঙেছে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। ২০১৬ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩ উইকেটে করেছিল ৪৪৪ রান। দুই বছর পর সেই নটিংহ্যামেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৬ উইকেটে করে ৪৮১।

আসছে বিশ্বকাপের আগে অ্যালেক্স হেলসকে হারিয়ে বড় এক ধাক্কা খেয়েছে দলটি। দ্বিতীয়বার মাদক পরীক্ষায় উতরাতে ব্যর্থ হওয়া ওপেনারকে দল থেকে সরিয়ে নিয়েছে ইসিবি। একাদশে তার থাকা অবশ্য নিশ্চিত ছিল না। জনি বেয়ারস্টো ও জেসন রয় ওপেনিংয়ে স্বাগতিকদের প্রথম পছন্দ। তাদের খুনে ব্যাটিংয়ের পর দলকে স্থিতি দিতে আছে জো রুট ও মর্গ্যান। ইংল্যান্ডের ঘুরে দাঁড়ানোয় দারুণ অবদান রুটের। দলের ইনিংস গড়ে ওঠে তাকে ঘিরেই। গত বিশ্বকাপের পর থেকে ৭৪ ইনিংসে ৫৮.৩০ গড়ে করেছেন ৩ হাজার ৪৯৮ রান। এই সময়ে তার চেয়ে বেশি রান করেছেন কেবল ভারতের বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মা।

মর্গ্যান দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সামনে থেকে। ৭৫ ইনিংসে করেছেন তিন হাজার ৩৯ রান। মিডল অর্ডারে জস বাটলার, বেন স্টোকসদের সামর্থ্য আছে রানটা ধরা ছোঁয়ার বাইরে নিয়ে যাওয়ার। কিপার-ব্যাটসম্যান বাটলার আট সেঞ্চুরির ছয়টিতে তিন অঙ্ক ছুঁয়েছেন ৭৫ বলের নিচে। ইংল্যান্ডের সবচেয়ে বড় শক্তি অলরাউন্ডাররা। ব্যাটিং গভীরতা যে কোনো দলের চেয়ে বেশি, চাইলে এগারো পর্যন্ত ব্যাটসম্যান খেলানো সম্ভব।

ইংল্যান্ডে মাঝে মধ্যে এমন কন্ডিশন থাকে যেখানে কখনও কখনও দ্রুত চার/পাঁচ উইকেট হারিয়ে ফেলা বিরল কিছু নয়। তেমন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার সামর্থ্য পরের ব্যাটসম্যানদের আছে। মইন আলি, ক্রিস ওকস, আদিল রশিদ, টম কারানের সামর্থ্য আছে দলকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দেওয়ার।

গত বিশ্বকাপের পর থেকে এখন পর্যন্ত ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি উইকেট রশিদের - ২৯.৬৮ গড়ে নিয়েছেন ১২৯ উইকেট। ঘরের মাঠে ইংলিশ এই লেগ স্পিনার হতে পারেন দারুণ কার্যকর। সঙ্গে আছেন বাঁহাতি স্পিনিং অলরাউন্ডার লিয়াম ডসন। অফ স্পিনে আছেন মইন, কিছু ওভার করতে পারেন রুটও।

পেস আক্রমণ যথেষ্ট শক্তিশালী। চিরচেনা কন্ডিশনে গুঁড়িয়ে দিতে পারে যে কোনো দলকে। গতিময় পেসার জফরা আর্চার ও লিয়াম প্লানকেটের সঙ্গে আছেন মার্ক উড, ওকস, কারান, স্টোকস। যথেষ্ট বৈচিত্র্যপূর্ণ বোলিং আক্রমণ নিয়ে বিশ্বকাপ খেলবে ইংল্যান্ড।

গুরুত্বপূর্ণ যিনি: বেন স্টোকস

অলরাউন্ডারদের ভিড়ে সবচেয়ে উজ্জ্বল স্টোকসই। ব্যাটিংয়ে মেটাতে পারেন সময়ের দাবি। আগেভাগে নামলে দলকে টানা কিংবা শেষটায় ঝড় তোলা - দুটোতেই সমান পারদর্শী তিনি। সুইং করাতে পারেন দুই দিকেই, রিভার্স সুইংও আছে তার অস্ত্র ভান্ডারে। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ফাইনালের শেষ ওভারে তার খরুচে বোলিংয়ে স্বপ্ন ভেঙেছিল ইংল্যান্ডের। এবার নিশ্চয়ই সেটি পুষিয়ে দিতে চাইবেন তিনি।     

কোচ: ট্রেভর বেলিস

৫৬ বছর বয়সী এই কোচ অভিজ্ঞতায় পূর্ণ। সাফল্যও আছে বিস্তর। ২০০৭ থেকে ২০১১ পর্যন্ত ছিলেন শ্রীলঙ্কার কোচ। ২০১১ বিশ্বকাপে লঙ্কানরা হয়েছিল রানার্সআপ। বেলিসের কোচিংয়ে দুইবার বিগব্যাশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সিডনি সিক্সার্স, একবার জিতেছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টি-টোয়েন্টি। কলকাতা নাইট রাইডার্সকে আইপিএল শিরোপা জিতিয়েছেন দুইবার। তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন দলকে, শিষ্যদের দিয়েছেন নিজের মতো খেলার স্বাধীনতা। ইংল্যান্ডের মতো এবার তারও অপেক্ষার অবসানের পালা।

ইংল্যান্ড: ওয়েন মর্গ্যান (অধিনায়ক), মইন আলি, জনি বেয়ারস্টো, জস বাটলার, টম কারান, লিয়াম ডসন, লিয়াম প্লানকেট, আদিল রশিদ, জো রুট, জেসন রয়, বেন স্টোকস, জেমস ভিন্স, জফরা আর্চার, ক্রিস ওকস, মার্ক উড।  

বিশ্বকাপ রেকর্ড:

১৯৭৫: সেমি-ফাইনাল

১৯৭৯: রানার্সআপ

১৯৮৩: সেমি-ফাইনাল

১৯৮৭: রানার্সআপ

১৯৯২: রানার্সআপ

১৯৯৬: কোয়ার্টার-ফাইনাল

১৯৯৯: গ্রুপ পর্ব

২০০৩: গ্রুপ পর্ব

২০০৭: সুপার এইট

২০১১: কোয়ার্টার-ফাইনাল

২০১৫: গ্রুপ পর্ব

বিশ্বকাপ সূচি:

তারিখ, বার

বাংলাদেশ সময়

প্রতিপক্ষ

ভেন্যু

৩০ মে, বৃহস্পতিবার

বেলা সাড়ে তিনটা

দক্ষিণ আফ্রিকা

দা ওভাল, লন্ডন

০৩ জুন, সোমবার

বেলা সাড়ে তিনটা

পাকিস্তান

ট্রেন্ট ব্রিজ, নটিংহ্যাম

০৮ জুন, শনিবার

বেলা সাড়ে তিনটা

বাংলাদেশ

কার্ডিফ ওয়েলস স্টেডিয়াম, কার্ডিফ

১৪ জুন, শুক্রবার

বেলা সাড়ে তিনটা

ওয়েস্ট ইন্ডিজ

হ্যাম্পশায়ার বৌল, সাউথ্যাম্পটন

১৮ জুন, মঙ্গলবার

বেলা সাড়ে তিনটা

আফগানিস্তান

ওল্ড ট্র্যাফোর্ড, ম্যানচেস্টার

২১ জুন, শুক্রবার

বেলা সাড়ে তিনটা

শ্রীলঙ্কা

হেডিংলি, লিডস

২৫ জুন, মঙ্গলবার

বেলা সাড়ে তিনটা

অস্ট্রেলিয়া

লর্ডস, লন্ডন

৩০ জুন, রোববার

বেলা সাড়ে তিনটা

ভারত

এজবাস্টন, বার্মিংহ্যাম

০৩ জুলাই, বুধবার

বেলা সাড়ে তিনটা

নিউ জিল্যান্ড

দা রিভারসাইড ডারহাম, চেস্টার-লি-স্ট্রিট