ঘরের মাঠে রেকর্ড ভালো ছিল না ডিন এলগারের, অবশেষে এখানে প্রথম টেস্ট শতরানের দেখা পেলেন ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্তে এসে।
Published : 28 Dec 2023, 09:43 AM
কখনোই খুব একটা খোলামেলা, জাঁকালো কিংবা ঝলমলে চরিত্রের নন ডিন এলগার। মাইলফলক উদযাপনেও কেমন খ্যাপাটে তাকে তেমন একটা দেখা যায়নি। সেই এলগারই এবার সেঞ্চুরি ছোঁয়ার পর লাফিয়ে যেন ছুঁতে চাইলেন আকাশ। মুষ্ঠিবদ্ধ হাত ছুড়লেন বাতাসে, ফেটে পড়লেন চিৎকারে। অন্য সময়ের চেয়ে কিছুটা দীর্ঘায়িতও হলো উদযাপন। সব মিলিয়ে তিনি যেন বাঁধনহারা।
ক্যারিয়ারের শেষের শুরুতে সেঞ্চুরি, সেটি তো একটি কারণ বটেই। যেভাবে খেলেছেন তিনি, দাপুটে ব্যাটিংয়ে দুর্দান্ত সব স্ট্রোক খেলেছেন, সেটিও একটি কারণ হতে পারে। তবে শেষ নয় এখানেই। ক্যারিয়ারের শেষে এসে আপন আঙিনায় সেঞ্চুরি, সেটিও একটি কারণ।
ভারতের বিপক্ষে এই সিরিজ দিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাচ্ছেন এলগার। সেঞ্চুরিয়নে শেষ টেস্ট এটিই। তার বেড়ে ওঠা ও ক্রিকেট শুরু ব্লুমফন্টেইনে হলেও পরে থিতু হয়েছেন নর্দান ট্রান্সভালে। সেঞ্চুরিয়নের সুপারস্পোর্ট পার্ক তাই তার ঘরের মাঠ। অথচ দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যান্য মাঠে তার টেস্ট সেঞ্চুরি থাকলেও ছিল না এখানেই!
এটা এতটাই অবিশ্বাস্য যে, তার সতীর্থদের অনেকের জন্যও এটা ছিল বিস্ময়। সেঞ্চুরির পর দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে এলগার শোনালেন টেস্ট শুরুর আগের একটি গল্প। শেষ ম্যাচে এসে নিজ আঙিনায় সেঞ্চুরি খরার আক্ষেপ ঘোচাতে পেরে দারুণ তৃপ্তির সুর ফুটে উঠল তার কণ্ঠে।
“সেদিন ওদের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। ছেলেরা বলছিল, ‘আমরা তো ভেবেছি এখানে (সেঞ্চুরিয়নে) তোমার সেঞ্চুরি আছে।’ আমি তখন বলেছি, ‘নাহ! আমি এখানে ‘রাবিশ!’ তবে হয়তো অতটাও ‘রাবিশ’ নই।”
“আমার জন্য এটা স্পেশাল এক ম্যাচ। সেঞ্চুরিয়নে সেঞ্চুরি ছিল না আমার- ক্যারিয়ারজুড়ে এটা বারবারই দূরে সরে গেছে। এবার এখানে আমার পরিবার, বন্ধুরা সবাই আছে, এই মাঠে আমার শেষ টেস্ট বলে সবাই এসেছে। অবশেষে সুপারস্পোর্ট পার্কের অনার্স বোর্ডে নাম লেখাতে পেরে আমি খুশি। দক্ষিণ আফ্রিকার সব টেস্ট ভেন্যুর (যেগুলোতে তিনি খেলেছেন) অনার্স বোর্ডে আমার নাম আছে, দারুণ ব্যাপার এটি।”
খ্যাপাটে উদযাপনের কারণ চাইলে খুঁজে বের করা যায় আরও। অবসরের ঘোষণা দিলেও তার নিজের তো ইচ্ছা ছিল আরও কিছুদিন চালিয়ে যাওয়ার। কিন্তু কোচ কনরাড শুক্রির দীর্ঘমেয়াদের পরিকল্পনায় তাকে রাখা হচ্ছে না জানতে পেরেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এই সিরিজেই থেমে যাওয়ার। বছরের শুরুর দিকে টেস্ট অধিনায়কত্ব হারিয়েও বেশ অসন্তুষ্ট ছিলেন তিনি। উদযাপনটি তাই জবাব হতে পারে অনেক কিছুর।
তিনি নিজে অবশ্য এসবের গভীরে যেতে চান না। সিরিজ শুরুর আগে বলেছিলেন, শেষ সিরিজেও তিনি ভূমিকা রাখতে চান দলে, দাগ কেটে যেতে চান। সেঞ্চুরির পরও বললেন একই কথা।
“আমার মনে হয় না, কিছু প্রমাণের আছে আমার। আমি স্রেফ এখনও দলে অবদান রাখতে চাই। দারুণভাবে বিদায় নিতে চাই, এই টেস্ট ম্যাচ ও সিরিজ জিততে চাই। হারানোর কিছু নেই আমার। আমি সফল হই বা ব্যর্থ, এই সিরিজ তো এমনিতেই আমার শেষ! এই মুহূর্তে চাই দলে অবদান রাখতে, দলকে ভালো অবস্থানে নিয়ে যেতে এবং যতটা সম্ভব প্রভাব ফেলতে।”