তিন ছক্কায় মুম্বাইকে জিতিয়ে ডেভিড বললেন, ‘এমন কিছুই করতে চাইছিলাম’

আইপিএলের হাজারতম ম্যাচে যাশাসবি জয়সওয়ালের দুর্দান্ত সেঞ্চুরি ছাপিয়ে মুম্বাই জিতে যায় সুর্যকুমারের ঝড়ো ফিফটি আর টিম ডেভিডের খুনে ইনিংসে।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 May 2023, 03:53 AM
Updated : 1 May 2023, 03:53 AM

একটা ক্রিকেট ম্যাচের রঙ কতবার বদলাতে পারে! রাজস্থান রয়্যালস আর মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের ম্যাচ যেন সেটির প্রামাণ্য চিত্র। রোমাঞ্চ ও উত্তেজনার নানা রঙের ছটায় শেষ পর্যন্ত সবচেয়ে উজ্জ্বল টিম ডেভিড। খুনে এক ক্যামিও খেলে মুম্বাইকে স্মরণীয় জয় এনে দিলেন অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান। প্রতিপক্ষ অধিনায়ক সাঞ্জু স্যামসন অকপটে বললেন, এই ইনিংসই তাদের জয় কেড়ে নিয়েছে। ডেভিড নিজে শোনালেন, এমন একটি ইনিংস খেলার আশায় ছিলেন তিনি বেশ কিছু দিন ধরেই।

নানা আনুষ্ঠানিকতায় শুরু হওয়া আইপিএলের হাজারতম ম্যাচ নাটকীয়তার জন্ম দেয় মাঠের ক্রিকেটেও। শেষ পর্যন্ত শেষ ওভারে টিম ডেভিডের টানা তিন ছক্কা মুম্বাইকে জিতিয়ে দেয় ৬ উইকেটে।

২৭ হাজার দর্শকে ঠাসা মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের গ্যালারি এ দিন রূপ নিয়েছিল যেন নীল সমুদ্রে। প্রায় সবার গায়েই ছিল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের জার্সি। সেই সমুদ্র উত্তাল হয়ে ওঠে ডেভিডের শেষের ব্যাটিং বীরত্বে।

ম্যাচের প্রথম ভাগটি ছিল শুধুই যাশাসবি জয়সওয়ালের। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা রাজস্থানকে একরকম একাই টানেন ২১ বছর বয়সী ওপেনার। শুরু থেকেই দারুণ ব্যাটিংয়ে তিনি উপহার দেন দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি।

ইনিংস শুরু করতে নেমে যখন শেষ ওভারে তিনি আউট হন, বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের নামের পাশে তখন ১৬ চার ও ৮ ছক্কায় জ্বলজ্বল করছে ৬২ বলে ১২৪! টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তার আগের সর্বোচ্চ ছিল ৭৭।

অবিশ্বাস্যভাবে, রাজস্থানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইনিংসটি আরেক ওপেনার জস বাটলারের ১৯ বলে ১৮। এছাড়া আর কোনো ব্যাটসম্যান ১৫ ছুঁতেও পারেননি। জয়সওয়ালের অসাধারণ ইনিংসে তবু ২০ ওভারে ২১২ রান তোলে রাজস্থান।

রান তাড়ায় মুম্বাই দ্বিতীয় ওভারে হারায় অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে। আরেক ওপেনার ইশান কিষান ২৮ রান করেন ২৩ বলে। তবে তিনে নামা ক্যামেরন গ্রিনের ২৬ বলে ৪৪ রানের ইনিংস রানের গতি কিছুটা বাড়ায়। যদিও জয়ের সম্ভাবনা তখনও তাদের ছিল না তেমন একটা।

শেষ ৮ ওভারে তাদের প্রয়োজন পড়ে ১০৯ রানের। চিত্র বদলাতে শুরু করে সূর্যকুমারের ঝড়ে। কুলদিপ সেনের এক ওভারে তিন চার ও এক ছক্কায় নেন তিনি ২০ রান। তবে তিনিও দলকে কাছাকাছি নিতে পারেননি। তার ২৯ বলে ৫৫ রানের ইনিংস থামে ট্রেন্ট বোল্টের বলে সন্দিপ শর্মার অসাধারণ এক ক্যাচে।

মুম্বাইয়ের সম্ভাবনা ওখানেই শেষ বলে ধরে নেওয়ার লোকের অভাব ছিল না। জয়ের জন্য তখনও প্রয়োজন ৪.২ ওভারে ৬১ রান। কিন্তু ডেভিড যে আশা ছাড়েননি, তা বুঝিয়ে দেন উইকেটে যাওয়ার পর থেকেই। শেষ পর্যন্ত ১৪ বলে ৪৫ রানের খ্যাপাটে ইনিংসে তিনি জিতিয়ে দেন দলকে।

শেষ ২ ওভারে যখন প্রয়োজন ৩২ রান, সন্দিপের বলে ছক্কা ও চার মেরে দলকে লড়াইয়ে রাখেন ডেভিড। শেষ ওভারে প্রয়োজন পড়ে ১৭ রানের। রাউন্ড দা উইকেট বোলিংয়ে জেসন হোল্ডার টানা তিন বলে করে বসেন ফুল টস। তিনটিই গ্যালারিতে আছড়ে ফেলে উদযাপনে মেতে ওঠেন ডেভিড। তিন বল আগেই খেলা শেষ!

সূর্যকুমারকে জুটিতে সঙ্গ দেওয়ার পর ডেভিডের সঙ্গেও হাল ধরে থাকা তিলক ভার্মা অপরাজিত থাকেন ২১ বলে ২৯ করে।

তবে নায়ক তো ডেভিড। ম্যাচের পর রাজস্থান অধিনায়ক স্যামসনও বললেন, পার্থক্য গড়ে দিয়েছেন এই অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানই।

“টাইমআউটের সময় (১৪ ওভার শেষে) আমরা আলোচনা করেছিলাম যে, সূর্যকুমার যেভাবে খেলছে, আমাদেরকে লড়াই করতে হবে এবং তাকে ফেরাতে হবে। আমরা তা পেরেছিলামও এবং প্রায় কাছাকাছি (জয়ের) পৌঁছে গিয়েছিলাম। কিন্তু টিম ডেভিড যা করল, তা স্পেশাল।”

১৪ বলের উপস্থিতিতেই ডেভিড গুঁড়িয়ে দিয়েছেন হোল্ডার, বোল্ট, সন্দিপদের। যখনই তারা লেংথে একটু গড়বড় করেছেন, দুর্দান্ত টাইমিং আর পেশির জোরে প্রাপ্য বুঝিয়ে দিয়েছেন ডেভিড। ম্যাচ শেষে তিনি বললেন, বোলার বাছাইয়ে চিন্তা না করে সবাইকেই আক্রমণ করতে চেয়েছিলেন তিনি।

“অসাধারণ অনুভূতি। দর্শকরা আজকে পাগলের মতো সমর্থন দিচ্ছিল আমাদের। আবহ যখন এমন থাকে, তখন ওয়াংখেড়েতে এরকম খেলতে পারার মতো অনুভূতি আর হয় না।”

“সবাইকেই টার্গেট করতে হতো, রান রেটই ছিল অমন। তবে সত্যি বলতে, কন্ডিশন ছিল ব্যাটিং-বান্ধব। বোলারদের জন্য কাজটি তাই ছিল কঠিন। ব্যক্তিগতভাবে আমি এরকম একটি ইনিংস খেলতে চাইছিলাম অনেক দিন ধরে। দলকে এমন একটি জয় এনে দিতে চাইছিলাম। তাই দারুণ লাগছে।”

এবারের আসরে এই ম্যাচের আগেও কিছুটা ঝলক দেখিয়েছেন ডেভিড। ২২ বলে ৩১, ১৩ বলে অপরাজিত ২৪, ১৩ বলে অপরাজিত ২৫ রানের ইনিংস তার আছে। তবে সত্যিকারের তাণ্ডব চালালেন এই ম্যাচেই। ১৬৮ টি-টোয়েন্টির ক্যারিয়ারে তার স্ট্রাইক রেট ১৬৩.০৪। তার কাছে এমন কিছুরই প্রত্যাশা থাকে দলের।

ডেভিডের ব্যাটিংয়ে কাইরন পোলার্ডের ছায়া দেখেন অনেকেই। দুজনের শারীরিক আকৃতিতে যেমন মিল আছে, তেমনি খেলার ধরন, পেশির জোরও একইরকম। সফল আইপিএল ক্যারিয়ারে অবিশ্বাস্য সব ইনিংস খেলে এখন মুম্বাইয়ের ব্যাটিং কোচ পোলার্ড। তার শূন্যতা পূরণেই ডেভিডকে দলে নেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করেন অনেকেই। এমন একটি ইনিংসের পর সেই তুলনা ওঠাও স্বাভাবিক। তবে মুম্বাই অধিনায়ক রোহিত শর্মা তুলনায় না গিয়ে বললেন ডেভিডের সামর্থ্যের কথা।

“দেখুন, পলির (পোলার্ড) শূন্যতা পূরণ করা মানে অনেক বড় ব্যাপার। এতটা সহজ নয়। বছরের পর বছর ধরে পলি এটা করেছেন এবং তার পারফরম্যান্সে আমরা এতবার চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছি। তবে টিম ডেভিডেরও সামর্থ্য আছে, আজকে আমরা যেমন দেখেছি।”

“তার হাতের জোর এত বেশি, ইনিংসের শেষ দিকে যা অবশ্যই কাজে লাগে। এমন পেশি শক্তির একজন ব্যাটসম্যান থাকা মানে বোলারকে সবসময়ই দুর্ভাবনায় থাকতে হয়। এমন একজনকে পাওয়া তাই দারুণ।”