ডাচদের ঐতিহাসিক জয়ে দ.আফ্রিকার স্বপ্নভঙ্গ

বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচ পরিণত হলো ‘কোয়ার্টার-ফাইনালে।’

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Nov 2022, 03:30 AM
Updated : 6 Nov 2022, 03:30 AM

২৯ বলে দক্ষিণ আফ্রিকার চাই ৪৭ রান। হাতে তখনও ৬ উইকেট। ব্র্যান্ডন গ্লভারের শর্ট বল পুল করে আকাশে তুলে দিলেন ডেভিড মিলার। ফাইন লেগ থেকে বাউন্ডারির দিকে উল্টো দৌড়ে চোখধাঁধানো এক ক্যাচ নিলেন রুলফ ফন ডার মেরওয়া। স্রেফ মিলারের ক্যাচ নয়, যেন নেদারল্যান্ডসের জয়ই মুঠোয় জমালেন তিনি। এরপর আর পেরে ওঠেনি প্রোটিয়ারা। ডাচদের ঐতিহাসিক জয়ে ভেঙে চুরমার হয়ে গেল তাদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শেষ চারে ওঠার স্বপ্ন।

অ্যাডিলেইডে রোববার সুপার টুয়েলভ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচটি জিতলেই সেমি-ফাইনালে জায়গা করে নিত দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু ক্রিকেট বিশ্বকে চমকে দিয়ে নেদারল্যান্ডস উপহার দিল ১৩ রানের দারুণ এক জয়। এতে দুই নম্বর গ্রুপ থেকে নক আউট পর্বে খেলা নিশ্চিত হয়ে গেল ভারতের।

আর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের ম্যাচ পরিণত হয়ে গেল ‘কোয়ার্টার-ফাইনালে।’

দুই ওপেনার স্টেফান মাইবার্গ ও মাক্স ও’ডাওডের ব্যাটে শক্ত ভিত পায় টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা নেদারল্যান্ডস। পরে টম কুপার ও কলিন আকারম্যানের ঝড়ো দুটি ইনিংসে ৪ উইকেটে ১৫৮ রান তোলে তারা।

চমৎকার বোলিংয়ে শুরুর থেকেই দক্ষিণ আফ্রিকাকে চাপে রাখে ডাচরা। প্রতিপক্ষের কোনো ব্যাটসম্যানকেই তারা পার হতে দেয়নি ২৫ রানও। শেষ পর্যন্ত প্রোটিয়াদের ১৪৫ রানে আটকে দিয়ে বাঁধনহারা জয়ের উল্লাসে মাতে দলটি।

টি-টোয়েন্টিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এটি ছিল নেদারল্যান্ডসের দ্বিতীয় ম্যাচ। ২০১৪ সালে প্রথম দেখায় চট্টগ্রামে স্রেফ ৬ হারে হেরেছিল ডাচরা। এবার আর সেই ভুল করেনি তারা। উজ্জীবিত ক্রিকেট খেলে অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে তুলে নিল অসাধারণ এক জয়।

শেষের মতো নেদারল্যান্ডসের শুরুটাও ছিল বেশ ভালো। মাইবার্গ ও ও’ডাওডের ব্যাটে পাওয়ার প্লেতে ৪৮ রান পায় দলটি। এই দুইজনের ৫৮ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন এইডেন মারক্রাম। স্লগ সুইপ করে বাউন্ডারিতে ধরা পড়েন ৭ চারে ৩৭ রান করা মাইবার্গ।

এরপর দ্রুত রান তোলেন কুপার। মুখোমুখি হওয়া পঞ্চম বলে ছক্কায় ওড়ান তিনি মারক্রামকে। পরে কেশভ মহারাজকে মারেন আরেকটি।

শুরু থেকে ধুঁকতে থাকা ও’ডাওড লং-অফে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন একটি করে ছক্কা-চারে ৩১ বলে ২৯ রান করে। এক ওভার পর কুপার ফেরেন দুটি করে ছক্কা-চারে ১৯ বলে ৩৫ রান করে। দুইজনই মহারাজের শিকার। বাস ডে লেডেকে বোল্ড করে দ্রুত সাজঘরে ফেরত পাঠান আনরিক নরকিয়া।

শেষ দিকে দারুণ ব্যাটিংয়ে দলের রান দেড়শ পার করেন আকারম্যান ও স্কট এডওয়ার্ডস। ১৯তম ওভারে রাবাদাকে আকারম্যান একটি ও এডওয়ার্ডস মারেন দুই চার। শেষ ওভারে ওয়েইন পার্নেলকে দুই ছক্কায় ওড়ান আকারম্যান।

২ ছক্কা ও ৩ চারে ২৬ বলে ৪১ রানে অপরাজিত থেকে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন আকারম্যানই। ১৭ বলে দুই জনের অবিচ্ছিন্ন ৩৫ রানের জুটিতে এডওয়ার্ডস করেন ২ চারে ১২।

রান তাড়ায় আত্মবিশ্বাসী শুরু করেন কুইন্টন ডি কক। কিন্তু বেশিক্ষণ পারেননি টিকতে। বিদায় নেন তৃতীয় ওভারে, ফ্রেড ক্লাসেনের বলে কট বিহাইন্ড হয়ে।

পাওয়ার প্লেতে টেম্বা বাভুমাকেও হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। পল ফন মেকেরেনকে শাফল করে খেলার চেষ্টায় বোল্ড হন প্রোটিয়া অধিনায়ক। ভালো কিছুর আভাস দিয়ে ২ চারে ১৯ বলে ২৫ রান করে বিদায় নেন রাইলি রুশোও।

দক্ষিণ আফ্রিকা আরও চাপে পড়ে যায় দলীয় ৯০ রানে মারক্রামকে হারিয়ে। ক্লাসেনের বলে শর্ট কাভারে দারুণ ক্যাচ নেন মাইবার্গ।

এরপর তারা তাকিয়ে ছিল মিলারের দিকে। কিন্তু দুই ওভার পরই ডাচদের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার ফন মেরওয়ার সেই অবিশ্বাস্য ক্যাচ। ওই ওভারে ফিরে যান পার্নেলও। আর সেখানেই ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা।

প্রতিপক্ষের শেষ বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান হাইনরিখ ক্লাসেনকে ফিরিয়ে দলের জয় প্রায় নিশ্চিত করে দেন ডে লেডে। ১২ বলে ৩৬ রানের সমীকরণ আর মেলাতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

নেদারল্যান্ডস: ২০ ওভারে ১৫৮/৪ (মাইবার্গ ৩৭, ও’ডাওড ২৯, কুপার ৩৫, আকারম্যান ৪১*, ডে লেডে ১, এডওয়ার্ডস ১২*; পার্নেল ৪-০-৩২-০, রাবাদা ৩-০-৩৭-০, এনগিডি ৩-০-৩৫-০, নরকিয়া ৪-০-১০-১, মহারাজ ৪-০-২৭-২, মারক্রাম ২-০-১৬-১)

দক্ষিণ আফ্রিকা: ২০ ওভারে ১৪৫/৮ (ডি কক ১৩, বাভুমা ২০, রুশো ২৫, মারক্রাম ১৭, মিলার ১৭, ক্লাসেন ২১, পার্নেল ০, মহারাজ ১৩, রাবাদা ৯*, নরকিয়া ৪*; ক্লাসেন ৪-০-২০-২, ফন মেকেরেন ৩-০-৩৩-১, আকারম্যান ৩-০-১৬-০, ফন মেরওয়া ২-০-১৯-০, গ্লভার ২-০-৯-৩, ফন বিক ৩-০-২৩-০, ডে লেডে ৩-০-২৫-২)

ফল: নেদারল্যান্ডস ১৩ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: কলিন আকারম্যান