ওয়েস্ট ইন্ডিজের বেশির ভাগ ক্রিকেটার নিজের জন্য খেলে: হুপার

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে সাবেক ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক বললেন, ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটে দৃশ্যমান সমস্যাগুলোর আড়ালে লুকিয়ে আছে আরও বড় সমস্যা।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিঅ্যাডিলেইড থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Nov 2022, 12:24 PM
Updated : 8 Nov 2022, 12:24 PM

দুই যুগের বেশি সময় ধরে অ্যাডিলেইডে থাকেন কার্ল হুপার। এই দেশকেই এখন তিনি বলেন নিজের ‘হোম।’ তবে হৃদয় জুড়ে এখনও তার ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এবারের বিশ্বকাপের মূল পর্বের আগেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিদায়ে তাই রক্তক্ষরণ হচ্ছে সাবেক এই অধিনায়কের হৃদয়ে।

১৯৮৭ থেকে ২০০৩ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ১০২ টেস্ট ও ২২৭ ওয়ানডে খেলা ক্রিকেটার এই বিশ্বকাপে ধারাভাষ্যকার হিসেবে কাজ করছেন এবিসি রেডিওর হয়ে। বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচের আগে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কথোপকথনে সাবেক এই অলরাউন্ডার কথা বললেন নিজের ক্যারিয়ার আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের নানা কিছু নিয়ে। ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের প্রতি তার আবেগ ও ভালোবাসা ফুটে উঠল বারবার। 

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ধারাভাষ্য দিচ্ছেন, কখনও কি মনে হয়, ‘যদি নিজে খেলতে পারতাম…!’ ক্যারিয়ারের শেষভাগে ১০টি ম্যাচ খেলেছেন যদিও, কিন্তু নিয়মিত খেললে কেমন করতেন বলে মনে হয়? 

কার্ল হুপার: ল্যাঙ্কাশায়ারে ক্যারিয়ারের শেষ বছরে কিছু টি-টোয়েন্টি খেলেছি আমি। এই সংস্করণ তখন সবে শুরু হয়েছে। এই পর্যায়ে অবশ্যই তখনও আসেনি। এখন খেললে মানিয়ে নিতে পারতাম বলেই আশা করি। তবে আমি এরকম ব্যাটসম্যান ছিলাম না যে প্রচুর চার-ছক্কা মারতাম। তবে চেষ্টা অবশ্যই করতাম এবং আমার ধারণা, এই সংস্করণের দাবি অনুযায়ীই নিজেকে পরিবর্তন করতে পারতাম। 

এখানে ব্যাট হাতে নিজেকে মেলে ধরার সময়টা খুব কম, কয়েক ওভার মাত্র সুযোগ মেলে। দ্রুত সবকিছু করতে হয়। বোলিংটা আমি নিশ্চিতভাবেই উপভোগ করতাম। কারণ, ব্যাটসম্যানরা আগ্রাসী থাকে বলে উইকেট নেওয়ার সুযোগ থাকে। আমি এমনিতেও আঁটসাঁট বোলিং করতাম। সব মিলিয়ে এই সংস্করণ খেললে, দারুণ ভালো লাগত বলেই মনে হয়। 

এই সংস্করণে দুইবার বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। চ্যাম্পিয়ন দলের অংশ হতে পারতেন? 

হুপার: যদি টি-টোয়েন্টি খেলতাম, নিশ্চিতভাবেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিশ্বকাপ দলে জায়গা করে নিতাম। সেরা একাদশে জায়গা পেতাম কিনা, তা জানি না… ভিন্ন একযুগে খেলেছি…। 

কার্যকর অলরাউন্ডার ছিলেন, পেতেও পারতেন সুযোগ…! 

হুপার: তা বটে। দুটি স্কিলে পারদর্শিতা থাকলে তা কাজে লাগে বৈকি। 

আপনার ব্যাটিংয়ের মূল শক্তি ছিল পায়ের কাজ ও টাইমিং। পেশির জোরের কোনো ব্যাপার সেখানে ছিল না। ধ্রপদি ঘরানার ব্যাটিং দিয়ে টি-টোয়েন্টিতে কতটা সফল হতে পারতেন বলে মনে হয়? 

হুপার: আমাদের সময়ও খেলাটা পরিবর্তন হয়েছে, তবে খুব ধীরে ধীরে। এখন দ্রুত বদলাচ্ছে। সবাই পাওয়ার হিটিংয়ের দিকে যাচ্ছে, বিশেষ করে আমাদের ওয়েস্ট ইন্ডিজের ছেলেদের বল সীমানা পার করাতেই মনোযোগ বেশি। ক্যারিবিয়ার খুব বেশি ছেলে এখন আর পায়ের কাজ দেখিয়ে শট খেলে না। অথচ আমাদের সময়ও কিন্তু স্পিনে দুর্দান্ত সব ব্যাটসম্যান ছিল। আলভিন কালিচরন, ব্রায়ান লারা, স্পিনের বিপক্ষে ওরা গ্রেট। এমনকি ডেজমন্ড হেইন্স, গর্ডন গ্রিনিজরা হয়তো পায়ের ব্যবহার খুব করত না, কিন্তু স্পিন দারুণ খেলত। 

এখন কিন্তু আবার আস্তে আস্তে খেলাটায় স্কিলের দিকটি ফিরে আসছে। এই যে রশিদ খান, মুজিব উর রহমানের মতো স্পিনারদের সামলাতে হলে স্কিল অবশ্যই ভালো থাকতে হবে। পায়ের কাজই এখানে সবকিছু নয়, বল হাত থেকে পড়তে হবে। বল পিচ করে কোন দিকে যাবে, তা বুঝতে হবে। কাজেই আস্তে আস্তে ব্যাটিংয়ের যে মৌলিক ও শৈল্পিক দিক, তা ফিরে আসছে, এমনকি টি-টোয়েন্টিতেও। 

স্পিন খেলায় আপনার দক্ষতা ছিল প্রশ্নাতীত। শেন ওয়ার্ন থেকে শুরু করে অনেকেই প্রশংসা করেছেন অনেকবার। ক্যারিবিয়ায় খেলে কীভাবে স্পিনে এতটা ভালো হয়ে উঠলেন?

হুপার: ক্যারিবিয়ায় হলেও আমি স্পিন খেলেই বেড়ে উঠেছি। গায়ানায় এমন সব উইকেটে খেলেছি, যা ছিল মন্থর ও স্পিন ধরত। এখন যেমন অনেকেই বলে, ক্যারিবিয়ানরা স্পিন ভালো খেলে না। হয়তো সত্যি। কিন্তু সেটার জন্য ব্যাটিং কোচ মন্টি দেশাইকে দায় দেওয়া যায় না। কারণ, স্পিন খেলার ব্যাপারটি এভাবে শেখানো যায় না, দু-এক বছরে কেউ শেখাতে পারে না। আমি ১৪-১৫ বছর বয়স থেকে খেলে খেলে শিখেছি। নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন কি বলছি? 

একজন কোচ এসেই জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের এটা শিখিয়ে দেবে, এটা আশা করা ঠিক নয়। এছাড়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এত খেলা থাকে, ব্যাটিং নিয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করার সুযোগ কোথায় ক্রিকেটার বা কোচদের! স্পিন খেলা শিখতে হবে স্পিন খেলতে খেলতে। আমি এভাবেই শিখেছি। সিম্পল। 

আপনার ক্যারিয়ারে চড়াই-উৎরাই ছিল বেশ। যখনই খারাপ সময় এসেছে, আপনাকে দেখা গেছে ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলে পারফর্ম করে আবার জাতীয় দলে ফিরেছেন… 

হুপার: এটাই তো করা উচিত! আজকে এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলেই যেমন, প্রতিভাবান ও সম্ভাবনাময় ক্রিকেটার যথেষ্টই আছে। কিন্তু ওরা তরুণ। জেসন হোল্ডার ছাড়া এই টি-টোয়েন্টি দলের খুব বেশি জন টি-টোয়েন্টি বেশি খেলেনি। ওদের স্কিলগুলো শাণিত করা হয়নি। ঝালাই করা হয়নি। এসব যতটা করা যায়, ততই একজন ক্রিকেটার ভালো হয়ে ওঠে। এসব করার জায়গাই হলো ঘরোয়া ক্রিকেট। 

আপনি হয়তো কাইরন পোলার্ডের কথা বলতে পারেন, ৫০০-৬০০ টি-টোয়েন্টি খেলেছে। কিন্তু এই সংস্করণে একজন ব্যাটসম্যান কয়টা বল খেলতে পারে? ২০-৩০ টি? অথচ একজন ব্যাটসম্যান বছর দুয়েক টেস্ট খেললে, কয়েকটি সেঞ্চুরি করলে হাজার হাজার বল খেলে ফেলে। এসবই স্কিলের ব্যাপার। স্কিলগুলো পোক্ত করতে হবে। 

বোঝাই যাচ্ছে, এখনও টেস্ট ক্রিকেটের বড় ভক্ত আপনি! 

হুপার: হ্যাঁ, অবশ্যই। টেস্ট ক্রিকেটই ভালোবাসি। এটাই তো আল্টিমেট। স্কিলের চূড়ান্ত পরীক্ষা এখানেই হয়। 

অনেকেই আপনাকে মনে করতেন খামখেয়ালি। ক্যারিয়ার নিয়ে আরও সিরিয়াস হলে হয়তো রেকর্ড আরও ভালো থাকত। তবে একটা ব্যাপারে সবারই একমত থাকার কথা, আপনার ব্যাটিং ছিল দৃষ্টিসুখকর। বরাবরই কি এমন নান্দনিক ছিল নাকি সময়ের সঙ্গে হয়েছে? 

হুপার: আপনি বললেন গ্রেসফুল… এটা আসলে দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার। আমি ব্যাপারটিকে এভাবে দেখি যে, অন্য আরেকজন ব্যাটসম্যান, যার ব্যাটিং দেখতে হয়তো আপনার এত ভালো লাগছে না, আমি স্রেফ তার চেয়ে একটু দ্রুত নড়াচড়া করি। এই তো! 

আমার ক্ষেত্রে এটা হয়েছে ছেলেবেলা থেকেই। বেড়ে ওঠার সময়টায় যখন অনেক দিন বন্ধুদের পেতাম না, কোনো দেয়ালের সামনে ফুট দুয়েক দূরে দাঁড়িয়ে বল ছুড়ে একাই ব্যাটিং করতাম। খুব ছোট্ট জায়গায় ব্যাটিং করতাম বলে রিফ্লেক্স ভালো হয়ে গিয়েছিল। ২২ গজে গিয়ে ব্যাটিং করতাম, তখন হয়তো মনে হতো যে আমার ব্যাটিংয়ে অলস সৌন্দর্য, পরিশ্রম করতে হচ্ছে না, চোখের জন্য আরাম। কিন্তু আমার মুভমেন্ট দ্রুত ছিল বলেই অনেক সময় পেতাম খেলার জন্য। ছোট জায়গায় খেলতে খেলতে বড় পিচে গিয়ে আমার মনে হতো, অনেক সময় পাচ্ছি। 

অনেকটা স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের মতোই গল্প। বাউরালের বাড়িতে পানির ট্যাংকের সঙ্গে গলফ বল আর স্টাম্প দিয়ে ব্র্যাডম্যানের একক ক্রিকেটের গল্প তো কিংবদন্তি হয়ে আছে! 

হুপার: হ্যাঁ, অনেকটাই এরকম। আমিও এটা প্রচুর করেছি। 

আপনার চোখে ওই সময়ের সবচেয়ে স্টাইলিশ ও নান্দনিক ব্যাটসম্যান কে ছিলেন? 

হুপার: (একটু ভেবে) একজন ছিলেন, আপনারা হয়তো তার নামও শুনেননি। তিমুর মোহামেদ। আমাদের গায়ানার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেনি। তবে একবার ইংল্যান্ড সফরের ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে ডাক পেয়েছিল। তার কথা আপনার জানার কথা নয়। 

তিমুর ছাড়া আলভিন কালিচরনের কথা বলতে পারি, দারুণ দৃষ্টিসুখকর ছিল। জেফ ডুজন ছিল, ব্রায়ান লারা তো অবশ্যই। 

তবে তিমুর আলাদা। তাকে যদি ব্যাট করতে দেখতেন, আপনার মনে হতো যে সে ‘ইন্ডিয়ান ডেভিড গাওয়ার।’ তার ব্যাটিং দেখা চোখের জন্য ছিল আরামদায়ক। গাওয়ারের মতোই অসাধারণ ছিল তার টাইমিং। খুব ভালো ব্যাটসম্যানও ছিল। 

১৯৯৯ বিশ্বকাপের মাস তিনেক আগে হুট করেই আপনি অবসর নিয়ে নেন। যদিও এটা নিয়ে নানারকম কথা শোনা যায়। ছুটি না পেয়েও অস্ট্রেলিয়ায় পরিবারের কাছে চলে গিয়েছিলেন বলে নাকি অবসর হিসেবে প্রচার করা হয়েছিল বা এরকম নানা কথা তখন হয়েছে! 

হুপার: আমার ছেলের জন্ম হয়েছিল প্রিম্যাচিউরড। এখন ক্রিকেট বোর্ডগুলো অনেক সহানুভূতিশীল। বাচ্চার জন্মের সময় বা আগে-পরে পিতৃত্বকালীন ছুটি মেলে। বড় বড় সিরিজেও বোর্ড এই ছুটি দেয়। তখন এরকম ছিল না। এসব বিবেচনাই করা হতো না। 

এখন ঠিক কাজটিই করা হয়। কারণ, ক্রিকেট খুবই মনস্ত্বাত্ত্বিক খেলা। মানসিকভাবে খুশি বা থিতু না থাকলে খেলা মন দেওয়া কঠিন। 

কোথাও এরকম পড়েছিলাম যে, অবসরের ওই সময়টায় শুধু ব্রায়ান লারা আপনাকে ফোন করেছিলেন… 

হুপার: ব্যাপারটি পুরোপুরি এরকম নয়। ব্রায়ান আমাকে ফোন করেছিল, যখন আমার ছেলের জন্ম সময়ের আগেই হয়ে গেল এবং আমি ফিরে এলাম (অস্ট্রেলিয়ায়), তখন। তবে যখন অবসর নিলাম, তখন একজনও আমাকে ফোন করেনি। একজনও নয়। 

খুবই দুঃখজনক এটা। এই যেমন, এখানে স্থানীয় কিছু ক্লাবে কোচিং করাতাম। সম্প্রতি আমরা একত্র হয়েছিলাম। ওই ছেলেদের সঙ্গে অনেক বছর ধরে দেখা হয়নি। কিন্তু কয়েক মাস আগে, তারা সবাই ম্যাসেজ পাঠিয়েছে যে, ‘চলো, আবার দেখা করি…।” অথচ, এটা বেদনাদায়ক যে সেই সময়ের সতীর্থদের সঙ্গে আমার প্রায় কথাই হয় না। অথচ ওদের সঙ্গে ১৫-১৮ বছর ধরে খেলেছি। খুবই হতাশাজনক। 

সেই সময় তো এখনকার মতো সিঙ্গেল রুম দেওয়া হতো না। সবারই রুমমেট থাকত। একটা সিরিজে বা সফরে যখন রুমমেট থাকত, মাসের পর মাস, একটা সম্পর্ক গড়ে উঠত। পরস্পর সম্পর্কে অনেক জানা হয়ে যেত। এভাবে সবার সঙ্গেই ঘনিষ্ঠতা বাড়ত। আমারও অনেক রুমমেট ছিল। কিন্তু ওই সময়টায় তাদের কারও ফোন পাইনি। এখনও কথা হয় না। খুবই কষ্টকর এটা। 

দুই বছর পর ফিরলেন অধিনায়ক হিসেবে। আপনার ক্যারিয়ারের সেরা সময়ও এলো। নেতৃত্ব ছাড়া আপনার টেস্ট গড় ৩৩.৭৬, অধিনায়ক হিসেবে গড় সেখানে ৪৫.৭৬। ক্যারিয়ার সেরা ২৩৩ এই সময়েই। দায়িত্বের ভারই কি আপনার সেরাটা বের করে এনেছে? 

হুপার: অধিনায়ক হিসেবে ফেরার পর সবচেয়ে বড় যে বদলটা আমার এসেছিল, তা মানসিকতায়। এর আগে আমার সবসময়ই মনে হতো, কেন ভুগতে হচ্ছে, সেরাটা পাওয়া যাচ্ছে না। চেষ্টার কোনো কমতি ছিল না। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ভালো করতে চাওয়ার তাড়নায় ঘাটতি ছিল না। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে, কাউন্টিতে আমি দাপটে খেলেছি। 

ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলা একটি ব্যাপার এখন হয়তো অনেকে দেখছেন, কিন্তু এটা সবসময়ই ছিল। এখন দল বেশি হারছে বলে এটা বেশি প্রকাশ্য। কিন্তু আসলে সবসময়ই ছিল। কারও সঙ্গে তেমন কোনো যোগাযোগ থাকত না। যখন দেখা হতো, তখন কুশলাদি বা অন্যান্য কথা হতো। কিন্তু অন্য সময়ে কেউ ফোন করা বা ম্যাসেজ পাঠানোর মতো কোনো ব্যাপার ছিল না। কিন্তু ক্রিকেটে, দল হিসেবে খেলতে হয়। এককাট্টা থাকতে হয়। 

যেহেতু লম্বা সময় ধরে আমাদের ধুঁকতে হচ্ছে, আমার মনে হয়, এখন বেশির ভাগ ক্রিকেটারই… স্বার্থপর বলব না, তবে নিজের জন্য খেলে। কিছু সিদ্ধান্ত যা নেওয়া হয়েছে, সেখানেও প্রমাণ পাবেন। তারা কি ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলতে চায়? সম্ভাব্য সেরা দলটা নিয়ে কি ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপে এসেছে? সুনিল নারাইন কোথায়? আন্দ্রে রাসেল? 

দল হিসেবে খেলতে না পারলে হবে না। এই যে, ডাচ ক্রিকেটারদের দেখুন, কতটা উজ্জীবিত। ভারতীয় দলের দিকে তাকান, কতটা উপভোগ করে তারা। বিরাট কোহলিকে নেতৃত্ব থেকে সরানো হয়েছে, তারপরও কতটা প্যাশনেট! 

ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটে তাই অনেক সমস্যা আছে, যা পর্দার আড়ালের। অনেকেই দেখে না। এসব কারণে আমাদের জন্য ধারাবাহিকভাবে ভালো করা কিংবা সমস্যার সমাধান করা কঠিন হয়ে পড়ে। 

কিন্তু এই জায়গাগুলোয় নজর দেওয়া উচিত। বাইরে থেকে দেখে অনেকেই বলে বা আপনারা সাংবাদিকরা লিখছেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজ কেন এত বাজে করছে? আমরা অনেক সময়ই শুনি যে বলা হয়, ওয়েস্ট ইন্ডিজ একটা দল হয়ে খেলতে পারছে না। কিন্তু ভেতরে যারা আছে, তারা সব জানে। 

ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবার প্রাথমিক পর্ব থেকে বাদ পড়ায় ভীষণ কষ্ট পেয়েছেন বলেই মনে হচ্ছে। 

হুপার: খুবই কষ্টকর। আমি যেমন এই বিশ্বকাপে এবিসি রেডিওর সঙ্গে কাজ করছি। আশা করেছিলাম, দল মূল পর্বে খেলবে। যেহেতু নিজেদের দল খেলবে, আমি ছেলেদের নিয়ে কথা বলব, এমন কত কিছু ভেবে রেখেছিলাম। এমন নয় যে নেদারল্যান্ডস, আয়ারল্যান্ড, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, জিম্বাবুয়েকে নিয়ে কথা বলতে আমার খারাপ লাগে। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলায় ধারাভাষ্য দিতে অবশ্যই বেশি ভালো লাগত। হলো না। 

থ্যাংক গড যে পরের বিশ্বকাপ ক্যারিবিয়ায়, আমরা স্বাগতিক হিসেবে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই খেলব। কারণ, এখন যে দলগুলিকে দেখি, আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ডের মতো দলগুলির সঙ্গে খেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ পরের বিশ্বকাপে মূল পর্বে খেলতে পারত, এই নিশ্চয়তা দেখি না। এরকমই অবস্থা আমাদের। 

২০১৩ সালে বাংলাদেশের কোচ হতে আগ্রহী ছিলেন বা প্রস্তাব পেয়েছিলেন, এমন একটি খবর ছড়িয়ে পড়েছিল। কতটা সত্যি? 

হুপার: আমার একজন এজেন্ট বলেছিল যে বাংলাদেশ কোচ খুঁজছে। আমিও বলেছিলাম, দেখা যেতে পারে। ওই পর্যন্তই। খুব একটা আর এগোয়নি। 

এখন যদি সুযোগ আসে? 

হুপার: উপযুক্ত প্রস্তাব যদি আসে… অবশ্যই। তবে আমার হৃদয় ও মনজুড়ে আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট। আমার জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটে কাজ করতে পারলে তা হবে সবকিছুর উর্ধ্বে। ক্রিকেট আমাকে সবকিছু দিয়েছে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেট। কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার সুযোগ থাকলে তা লুফে নিতে চাই। 

তবে যেহেতু ভেতরের অনেক কিছু জানি ও বুঝি, তাই হয়তো সম্ভব নয়। আমি যখন অধিনায়ক হলাম, জিমি অ্যাডামসের কাছ থেকে দলকে পেয়েছিলরাম খুব নড়বড়ে অবস্থায়। মাত্র বছর দেড়েক ছিলাম নেতৃত্বে। ২০০৩ বিশ্বকাপে আমার নেতৃত্বে দল গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়ে যায়। কিন্তু মূল কারণ ছিল আবহাওয়া। বাংলাদেশকে আমরা অবশ্যই হারাতাম। কিন্তু হালকা বৃষ্টিতে খেলাটাই হলো না। 

দলটা তখন বেশ তরুণ। ক্রিস গেইল, রামনরেশ সারওয়ান, মারলন স্যামুয়েলসরা তখনও নবীন। এই দলটিই কিন্তু পরের বছর ইংল্যান্ডে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হয়। দলটা তো আমার নেতৃত্বে ছিল দেড় বছর। চেষ্টা করেছি গড়ে তুলতে। অনেক সময় ফলাফল দেখে সবকিছু বোঝা যায় না। এমন একটা আবহ গড়তে হয় যেন ক্রিকেটাররা নিজেদের সেরাটা মেলে ধরতে পারে। উপযুক্ত পরিবেশ না থাকলে ক্রিকেটাররা যতোই প্রতিভাবান হোক, সেরাটা পাওয়া যায় না। আমি চেষ্টা করেছি সেই পরিবেশ তৈরি করতে। 

আপনার সব কথা শেষ পর্যন্ত গিয়ে ঠেকছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য আবেগ তাহলে এখনও প্রবল? 

হুপার: অবশ্যই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেট আমার কাছে সবকিছু।