'সাকিব-তামিমের সমস্যা কী জানি না', বললেন বিসিবি প্রধান

আলোচিত সাক্ষাৎকারের প্রেক্ষিতে তামিম ইকবালের সংবাদ সম্মেলনের পর এবার সবিস্তরে কথা বলেছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। 

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Feb 2023, 06:01 PM
Updated : 27 Feb 2023, 06:01 PM

দুয়ারে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ। তার আগে মাঠের ক্রিকেটের চেয়ে বাইরের বিষয় নিয়ে উত্তপ্ত দেশের ক্রিকেটাঙ্গন। ক্রিকেট ওয়েবসাইট ক্রিকবাজ-এ দেওয়া সাক্ষাৎকারে নাজমুল হাসান পাপন বলেছিলেন, জাতীয় দলের ড্রেসিং রুমের পরিবেশ স্বাস্থ্যকর নয়, দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় সমস্যা গ্রুপিং। সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়েও বিস্ফোরক সব মন্তব্য করেছিলেন তিনি। পরে সংবাদ সম্মেলনে তামিম জানান, নিজের ক্যারিয়ারে ড্রেসিং রুমে  কখনও সমস্যা দেখেননি তিনি। সাকিবের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের বিষয়ে দেন মাঠের পারফরম্যান্স সব দূরে রাখার নিশ্চয়তা। 

তামিমের বক্তব্যের পরদিন সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বিসিবি প্রধান নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যায় যা বললেন, তার আগের কথাগুলোর সঙ্গেই তা হয়ে গেল সাংঘর্ষিক।

একটা বিষয় যদি আপনি পরিষ্কার করতেন। এটা নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে আপনি হয়তো জানেন। গতকাল (রোববার) তামিম ইকবালের যে সংবাদ সম্মেলন হয়েছে, সেখানে বেশিরভাগ প্রশ্ন ছিল জাতীয় দলের ড্রেসিং রুমের চিত্রটা কী? এটার পটভূমি হলো, আপনি একটা সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে আসলে, (ড্রেসিং রুম) স্বাস্থ্যকর নয়। আমরা যেটা পড়েছি। আপনিও হয়তো পড়েছেন। তামিম বলেছেন, গত ১৫-১৬ বছরে ড্রেসিং রুমে সে কোনো সমস্যা দেখেনি। আবার আপনি হচ্ছেন ক্রিকেটের অভিভাবক। আপনিও হয়তো কোনোভাবে জানতে পেরেই বলেছেন, (ড্রেসিং রুম) স্বাস্থ্যকর নয়। আসলে আমরা কোনটা বিশ্বাস করব?  

নাজমুল হাসান: এখানে ট্রাস্টের কোনো ইস্যু নেই। সিম্পল ইস্যুটা হচ্ছে, আজ থেকে তিন বছর আগেও ড্রেসিং রুমে কোনো সমস্যা আমি দেখিনি। তো ১৫ বছর আগে ১২ বছর বাদ দিয়ে দেন। গত ৩ বছরে আমি কিন্তু দলের সঙ্গে নেই। আগে আমি ওদের সঙ্গে একই হোটেলে থাকতাম, সবকিছু করতাম।  

কাজেই এই যে কথাটা, ড্রেসিং রুমের পরিবেশ ভালো না, এই যে তামিম ও সাকিবের মধ্যে সমস্যা- এই সবকিছু কিন্তু আমার বাইরে থেকে শোনা। সবচেয়ে বেশি শোনা মিডিয়া থেকে। এই কথাটা সবচেয়ে বেশি শুনি মিডিয়া থেকে। মিডিয়ার লোকরাই বেশি বলে।  

আমি যত দূর কনসার্নড, আমি প্রথমে যে জিনিসটা করেছি... অস্ট্রেলিয়ায় যে সবশেষ বিশ্বকাপটা হয়েছে, ওখানে আমি সবকিছু খুব ভালো দেখেছি। আমি কিন্তু ওখানে ড্রেসিং রুমে কোনো সমস্যা শুনিনি। এর আগের কথা শুনেছি। তবে নিজে কখনও দেখিনি, আমি কখনও শুনিনি। 

আমি যেটা করেছি, আমি যেটা বলেছি, তামিমও সেটাই বলেছে। আমি ওদের ডেকে কথা বলেছি যে, কোনো সমস্যা আছে কি না? ওরা দুইজনই আমাকে আশ্বস্ত করেছে যে এটার সঙ্গে খেলায় কোনো প্রভাব পড়বে না। যা-ই থাকুক খেলায় কোনো প্রভাব পড়বে না। আমিও আমার ইন্টারভিউতে সেটাই বলেছি এবং তামিমও সেই কথাই বলেছে।

তাহলে (ড্রেসিং রুম) স্বাস্থ্যকর নয়, এই বিষয়টা আসলে কী?  

নাজমুল: এটা তো শোনা কথা। আমার কথাটা হচ্ছে, আমি ৩ বছর আগে যখন দলের সঙ্গে থাকতাম তখন এই কথা ভাবি নাই, বলিও নাই। সো দিস ইজ নাম্বার ওয়ান। মাঝে সবাই বলা শুরু করল, ড্রেসিং রুমের পরিবেশটা ভালো না। এখন এটা বললে, আমি তো আসলে জানি না কী হচ্ছে। আমি দেখিও নাই। আমি গত বিশ্বকাপে গিয়ে দেখেছি, আমার কাছে কোনো সমস্যা আমি দেখিনি। হয়তো কিছু একটা আছে, ওখানটায় হয়েছে।  

সবচেয়ে বেশি যেই কারণটা বলা হতো তামিম ও সাকিবের... তারা খুব ভালো বন্ধ ছিল, ওরা সবচেয়ে কাছের। হঠাৎ করে হয়তো ওদের মধ্যে কিছু একটা হয়েছে। যে কারণে এখানে এখন একটু অস্বস্তিকর পরিবেশ। অস্বস্তিকর পরিবেশ বলতে আসলে যেটা যে, দলে তো আরও ক্রিকেটাররা আছে। ওরা কারও সাথে কথা বলতে একটু ভয় পায়, মানে দ্বিধাবোধ করে। যে আমি এখন যদি সাকিব ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলতে যাই, আবার না ভাবে আমি উনার দলে। ওরা তো কোনো দলে না। আবার তামিমের সাথে কথা বলতে গেলে যদি কেউ মাইন্ড করে। কিন্তু আসলে ওরা (সাকিব-তামিম) করতো যে মাইন্ড, এরকম কোনো কিছু আমি এখন পর্যন্ত শুনিনি।  

সেজন্য আমি যেটা করেছি, আমি নিজে দেখেছি, গত বিশ্বকাপে এই সমস্যাটা ছিল না। তবে ওই বিশ্বকাপে তামিম ছিল না, অনেকেই ছিল না। তবে ওদের সাথে ব্যক্তিগতভাবে আমি বসেছিলাম। দুজনই আমাকে আশ্বস্ত করেছে, যা-ই থাকুক, এটার সাথে খেলায় কোনো প্রভাব পড়বে না। আমি এটাই বলেছি যে, বাইরে কি হচ্ছে তা নিয়ে আমি চিন্তিত নই। আমি খেলা নিয়েই বেশি চিন্তিত।

আপনি তো একটা পরিবারের প্রধান, অভিভাবক। আপনি কি দুইজনকে একসাথে করতে পারেননি? দুইজনকে নিয়ে বসতে পারেননি? 

নাজমুল: আসলে সমস্যাটা হচ্ছে কী, সমস্যাটা কী তা-ই তো জানি না। আসলে সমস্যাটা যদি জানতে পারতাম, তাহলে একটা পরিকল্পনা করতে পারতাম যে কীভাবে এগোনো যায়। 

এখনও আমি তাদের কাছ থেকে জানতেও চাইনি কী সমস্যা। আমি শুধু প্রথম যে কাজটা করেছিলাম, দুজনই বলেছে এটার সঙ্গে খেলার কোনো সম্পর্ক নেই এবং দুজনই বলেছে। তাই আমি মনে করি আমার প্রথম পদক্ষেপের কাজটা হয়ে গেছে। 

এখন পরবর্তীতে... অনেক দিন পরে আবার তো সব একসঙ্গে খেলছে। এখন একটা দেখার সুযোগ হবে। এর আগে তো আমি সুযোগ পাইনি। ভার‍ত সিরিজে তো আসলে তামিমও ছিল না। তারপরে টি-২০ ছেড়ে দিলো অনেকে। সিনিয়র ক্রিকেটাররা খেলেনি।কাজেই ওখানে আসলে বোঝা যাচ্ছিল না। আমার মনে হয়, কোনো সমস্যা তো অবশ্যই হবে না। কারণ ওরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল, পেশাদার ও পরিপক্ব ক্রিকেটার। দলের ক্ষতি হবে, এমন কিছু ওরা করবে এটা আমি বিশ্বাস করি না। 

যেহেতু কথাটা এসেছে। এই জিনিসটা কিন্তু এমন কোনো মানুষ মিডিয়া জগতে নাই, যারা জানে না। আমাকে এত লোক এই প্রশ্নটা করেছে। ভেতরে ভেতরে গুঞ্জনটা আমার ভালো লাগছিল না। এটা কিন্তু একটা অস্বস্তিকর পরিবেশ সবার জন্যই। এমনকি ক্রিকেটারদের জন্যও। আমি এই জিনিসটা বলে শেষ করতে চাই যে, এটি শেষ। এটার সঙ্গে খেলায় কোনো সম্পর্ক নেই।

আপনি মাঠের কথা বলছেন। আপনার কথায় মনে হলো, আপনি তো মেনেই নিয়েছেন, তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক যাই হোক, মাঠের ক্রিকেটে যদি প্রভাব না পড়ে তাহলে আপনি বা ক্রিকেট বোর্ড এটি নিয়ে চিন্তিত নন। যদি কোনো কারণে আপনার মনে হয় তাদের সম্পর্কটা দলের ড্রেসিং রুমকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, তখন বোর্ড প্রেসিডেন্ট হিসেবে আপনি কি যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন? 

নাজমুল: এটা তো হচ্ছে না। আর হলে আপনার কী মনে হয়? (হাসি) এটা তো বলার সুযোগই রাখে না। তবে আমার ধারণা, এটা হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আসলে আমি যেটা মনে করি, সামনে যতটুকু বাকি আছে, সেটাও কীভাবে সুরাহা করা যায়, সেটা নিয়ে কাজ করব।  

আপনার ওই সাক্ষাৎকারের একটা অংশ ছিল, আপনি বলেছেন যে, বাংলাদেশ ক্রিকেটের বড় সমস্যাগুলোর একটি হলো গ্রুপিং। এই গ্রুপিংয়ের কথা যদি আপনি বলে থাকেন, নিশ্চয়ই আপনি কিছু জেনেছেন। আপনি তো আর এমনি এমনি বলবেন না। তো এই গ্রুপিংটা কী নিয়ে? কারা করে? এটা একটু জানা দরকার। 

নাজমুল: গ্রুপিংটা বলতে কী... আসলে... এটার উত্তর আমি এখন দেবো না। যেহেতু একটা সিরিজ সামনে। তবে এই প্রশ্নের উত্তর আমি দেবো।  

তার মানে কি গ্রুপিং আছে? 

নাজমুল: সবসময় থাকে না। সব খেলায়... আপনি জাতীয় দলের খেলায় পাবেন না। খুব কম পাবেন। জাতীয় দলের আপনার অপশন কী আছে? গ্রুপিং করবেন কী আপনি?  

মানে একটু বুঝতে হবে। আমি যেটা বলতে চেয়েছি যে জাতীয় দলের ব্যাপারটা, তা নয়। জাতীয় দলের কথা বাদ দেন। এমনিতেও... মানে আমি তো মনে করি, আমরা যদি ১৫ জন একটা জাতীয় দলে খেলি, আমাদের সবারই একই রকম সবকিছু থাকার কথা, সম্পর্কটা। ওটা নিয়েই আমি চিন্তাভাবনা করছি। তবে এটার (গ্রুপিং) উত্তর আমি পরে দেব। এখন সিরিজ চলছে। এই মুহূর্তে আমি (উত্তর) দেব না।  

খেলাধুলার টকশোর বাইরেও অন্যান্য যে টকশোগুলো হয়, রাজনীতিবিদ বা অনেক বুদ্ধিজীবীরা আসলে জিজ্ঞেস করেছেন যে, একটা সিরিজের আগে, যখন সামনে বিশ্বকাপ, তার আগে বিসিবি সভাপতি এই প্রসঙ্গগুলো কেন সামনে নিয়ে এলেন?  

নাজমুল: এই প্রসঙ্গগুলো আনলাম, যেন এগুলো নিয়ে সামনে আর কথা না হয়।