প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলার দুয়ারে দাঁড়িয়ে অধিনায়ক নিগার সুলতানা বলছেন, এটিই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সিরিজ।
Published : 20 Mar 2024, 03:54 PM
বাংলাদেশের মেয়েদের সামনে এখন ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছে তারা ৭ বার, টি-টোয়েন্টিতে ৬ বার। সাফল্যে তাদের ধারেকাছে নেই কোনো দল। বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের বাইরে তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের খেলার সুযোগ হয় না বললেই চলে। তাই তো অধিনায়ক নিগার সুলতানার চোখে এটিই সবচেয়ে বড় সিরিজ।
তবে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে স্রেফ খেলতে পেরেই বর্তে যাচ্ছেন না বাংলাদেশ অধিনায়ক। বরং আইসিসি উইমেন'স চ্যাম্পিয়নশিপের অন্তর্ভুক্ত সিরিজ থেকে পয়েন্ট অর্জনের ছকও যেন সাজিয়ে ফেলেছেন নিগার।
দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে এসেছে অস্ট্রেলিয়া। তিনটি করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি খেলবে তারা। মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার শুরু ওয়ানডে সিরিজ। খেলা শুরু সকাল সাড়ে ৯টায়।
দুই সংস্করণ মিলে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এখন পর্যন্ত ৩টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। তিনটিই বিশ্বকাপে। এবারই প্রথম দ্বিপাক্ষিক সিরিজে অ্যালিসা হিলি, এলিস পেরি, অ্যাশলি গার্ডনার, বেথ মুনিদের মতো বিশ্ব তারকাদের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।
দ্বিপাক্ষিক সিরিজে ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছে বাংলাদেশ। তবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ শুরুর আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে এটিকেই সবার ওপরে রাখলেন নিগার।
“এখন পর্যন্ত অবশ্যই (সবচেয়ে বড় সিরিজ)। তারা বিশ্বের অন্যদের তুলনায় ভালো দল। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দল। তাদের বিপক্ষে খেলা আমাদের দলের জন্য অনেক বড় একটা অভিজ্ঞতা হবে।”
“গত ৬-৭ মাস আমরা যেমন ক্রিকেট খেলে এসেছি, তারাও আমাদের হালকাভাবে নেয়নি। সেটা তাদের স্কোয়াড দেখেই বোঝা গেছে। (টি-টোয়েন্টি) বিশ্বকাপও হবে এখানে। তো সব কিছু মিলিয়ে যতগুলো সিরিজ খেলেছি, ভারত বলেন, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা... তারা (অস্ট্রেলিয়া) ভালো দল।”
সবশেষ ২০১৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে বাংলাদেশে এসেছিল অস্ট্রেলিয়া। সেই দলের দুজন কেবল আছেন এবারের সফরে-অধিনায়ক অ্যালিসা হিলি ও অলরাউন্ডার এলিস পেরি। এবার দুই দেশের লড়াইয়ের রোমাঞ্চ ছুঁয়ে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ককেও।
“মেয়েরা বাংলাদেশে এসে রোমাঞ্চিত। দলের বেশিরভাগ ক্রিকেটারের জন্য এটি প্রথম বাংলাদেশ সফর। বিশ্বকাপের বাইরে বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলা আমাদের জন্য বিরল ব্যাপার। এটি আমাদের দলের জন্য দারুণ একটি সুযোগ।”
"আমাদের জন্য এটি রোমাঞ্চকর। ভারত, ইংল্যান্ড ও নিউ জিল্যান্ডের মতো দলগুলোর বিপক্ষে আমরা অনেক খেলি। তবে বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলার সুযোগ তেমন আসে না। তাই নতুন কন্ডিশনে ও নতুন প্রতিপক্ষের সঙ্গে খেলা একটা পর্যায় পর্যন্ত দল হিসেবে চ্যালেঞ্জিংও। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য দল দারুণ অবস্থায় আছে।"
গত বছরের মাঝামাঝি থেকে ভালো ছন্দে আছে বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ ড্র করেছে তারা। পরে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়ে জিতেছে একটি ম্যাচ।
শক্তি-সামর্থ্য অনুযায়ী অস্ট্রেলিয়া আরও এগিয়ে। এবার চ্যালেঞ্জটাও তাই অনেক বড়। সেই চ্যালেঞ্জ জয়ের জন্য গত মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে আনুষ্ঠানিক অনুশীলন শুরু করে বাংলাদেশ। পরে খুলনায় দুই সপ্তাহের ক্যাম্প করে তারা।
সেখান থেকে ঢাকায় ফিরে তিন দিন অনুশীলন করেছেন নিগার, ফারজানা হক, নাহিদা আক্তাররা। সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতায় অস্ট্রেলিয়া চ্যালেঞ্জের জন্য দলকে প্রস্তুত মনে করছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
“যদি আমাদের দিক চিন্তা করেন, সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকায় যখন খেলেছি তখন মনে হয়েছে আমাদের ব্যাটিং শক্তিশালী। ঘরের মাঠে ভারত, পাকিস্তানের সঙ্গে যখন খেলেছি তখন মনে হয়েছে আমাদের বোলিংটা শক্তিশালী।”
“এটা দলের জন্য ভালো লক্ষণ। দুইটা বিভাগই অনেক বেশি ভালো জায়গায় আছে। এখন গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কালকের (বৃহস্পতিবার) দিনটায় কোন বিভাগটা দলের জন্য সবচেয়ে বেশি অবদান রাখতে পারে।”
আইসিসি উইমেন'স চ্যাম্পিয়নশিপে এখন পর্যন্ত পাঁচ সিরিজের ১৫ ম্যাচে ১৩ পয়েন্ট পেয়েছে বাংলাদেশ। টেবিলে তাদের অবস্থান সপ্তম।
এই চক্রে স্বাগতিক ভারত ও পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ অন্য পাঁচ দল পাবে সরাসরি ২০২৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলার টিকেট। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে তাই যত বেশি সম্ভব পয়েন্ট নিতে চান নিগার।
“এখন আইসিসি চক্রের (উইমেন'স চ্যাম্পিয়নশিপ) ভেতরে আমরা আছি। তাই প্রত্যেকটা পয়েন্ট অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সেটা হোক অস্ট্রেলিয়া, ভারত বা অন্য যে কোনো দল। তাই আমরা চাই বিশ্বকাপের জন্য যেন বাছাইপর্ব খেলতে না হয়। প্রত্যেকটা ক্রিকেটারের মনোযোগ এখন এটাতেই বেশি, যেন আমরা যত বেশি পয়েন্ট নিতে পারি। এটিকে লক্ষ্য বানিয়েই দল ভালো খেলার চেষ্টা করছে।”