টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ‘ডি’ গ্রুপের কঠিন চ্যালেঞ্জ সামলে কত দূর যেতে পারবে বাংলাদেশ?
Published : 06 Jan 2024, 08:34 PM
শুরুতেই সবচেয়ে কঠিন দুই পরীক্ষা, সেটাও অচেনা মাঠে। বাংলাদেশের ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে যেতে পারে শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম দুই ম্যাচেই। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে নাড়িয়ে দিতে পারে আইসিসি দুই সহযোগী দেশ নেদারল্যান্ডস ও নেপালও। সব মিলিয়ে প্রাথমিক বাধা পেরিয়ে পরের ধাপে যেতে কঠিন পরীক্ষাই দিতে হতে পারে নাজমুল হোসেন শান্ত, মেহেদী হাসান মিরাজদের।
দুই সংস্করণ মিলিয়ে টানা তিনটি বিশ্ব আসর ভালো কাটেনি বাংলাদেশের। এবার নিজেদের মেলে ধরার আরেকটি সুযোগ তাদের সামনে। আগামী জুনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রে বসবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরবর্তী আসর। নতুন বছরের শুরুতেই এর সূচি প্রকাশ করেছে আইসিসি। ‘ডি’ গ্রুপে শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকা, নেদারল্যান্ডস ও নেপালের সঙ্গে আছে বাংলাদেশ।
র্যাঙ্কিংয়ের বিচারে আপাতত গ্রুপের তৃতীয় দল বাংলাদেশ। অল্প ব্যবধানে এগিয়ে থেকে আট নম্বরে সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা। তাদের ঠিক নিচে বাংলাদেশ। আর দক্ষিণ আফ্রিকার অবস্থান ষষ্ঠ। কিছুটা নিচে নেদারল্যান্ডস (১৫) ও নেপাল (১৬)। সুপার এইটে জায়গা পেতে পেছনে ফেলতে হবে এই চার দলের অন্তত তিনটিকে।
সেই অভিযানে ডালাসের পুরোপুরি অচেনা মাঠে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হবেন শান্ত-মিরাজরা। তবে ওই মাঠ শ্রীলঙ্কা বা টুর্নামেন্টের যে কোনো দলের জন্যই নতুন। তাই উইকেট বা মাঠের কন্ডিশনের চ্যালেঞ্জ দুই দলের জন্যই থাকবে সমান।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অনুপ্রেরণা হতে পারে লঙ্কানদের বিপক্ষে সবশেষ চার ম্যাচের দুই জয়। অবশ্য ২০২১ বিশ্বকাপ ও ২০২২ এশিয়া কাপে দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে জয়ী দলের নাম শ্রীলঙ্কা। লড়াইয়ে নামার আগে তাই নিজেদের পরিকল্পনা ভালোভাবে গুছিয়ে নিতে হবে বাংলাদেশকে।
তবে গত বছরের ওয়ানডে বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কাকে হারায় বাংলাদেশ। ওই ম্যাচের সুখস্মৃতি টি-টোয়েন্টিতেও বাড়তি প্রেরণা হিসেবে কাজ করতে পারে বলে মনে করেন শাহরিয়ার নাফীস। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপচারিতায় সেরা আটে উঠতে চাইলে বাংলাদেশ দলকে সতর্ক থাকার তাগিদই দিলেন বোর্ডের ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের ডেপুটি ম্যানেজার।
“সুপার এইটে খেলতে হলে গ্রুপের যে কোনো দলকে তিনটা ম্যাচ জিততে হবে। ভালো খেলে নিজেকে প্রমাণ করেই (সুপার এইটে) যেতে হবে। টি-টোয়েন্টি সংস্করণে কোনো ম্যাচই সহজ নয়। আবার কোনো ম্যাচই একেবারে কঠিন নয়। সব পর্যায়ে ভালো খেলতে হবে, এটিই মূল।”
লঙ্কা-ম্যাচের পর গ্রুপের সম্ভাব্য সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের সামনে পড়বে দল। এই সংস্করণে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আট ম্যাচে এখনও জয়হীন বাংলাদেশ। সবশেষ দুই বিশ্বকাপে প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে ন্যুনতম লড়াইও করতে পারেনি তারা।
আবু ধাবিতে ২০২১ সালে বাংলাদেশকে স্রেফ ৮৫ রানে গুটিয়ে দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। পরের বছর সিডনিতে ২০৫ রানের জবাবে সাকিব আল হাসানের দল থামে কেবল ১০১ রানে। নিউ ইয়র্কে তাই জিততে হলে নতুন গল্পই লিখতে হবে তাদের।
গ্রুপের শেষ দুই ম্যাচের প্রতিপক্ষ অবশ্য তুলনামূলক সহজ হওয়ার কথা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেন্ট ভিনসেন্টে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচ ১৩ জুন। একই মাঠে তিন দিন পর নেপালের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। প্রায় দশ বছর আগের বিশ্বকাপে নেপালের বিপক্ষে একমাত্র ম্যাচ খেলেছে তারা। ঘরের মাঠে সহজ জয়েই সেদিন মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ।
কাগজে-কলমে নেদারল্যান্ডস পিছিয়ে থাকলেও তাদের বিপক্ষে ম্যাচ সবসময়ই চ্যালেঞ্জিং। বিশেষ করে গত বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে চমক দেখায় তারা। এছাড়া বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একাধিক জয় আছে ডাচদের।
গত বিশ্বকাপে বাংলাদেশেরও কঠিন পরীক্ষা নেয় তারা। তাসকিন আহমেদের দুর্দান্ত বোলিং আর জোড়া রান আউটের সৌজন্যে ৯ রানের জয়ে রক্ষা পায় বাংলাদেশ। এর আগে ২০১২ সালে ঘরের মাঠে বাংলাদেশের বিপক্ষে জয়ের সুখস্মৃতিও আছে নেদারল্যান্ডসের।
এই ডাচ চ্যালেঞ্জ মাথায় রেখেছেন জাতীয় দলের নির্বাচক আব্দুর রাজ্জাকও। সব দলকে সমীহ করেই বিশ্বকাপ পরিকল্পনা সাজানোর কথা বলেছেন তিনি।
“বিশ্বকাপের খেলা সবসময়ই কঠিন। টুর্নামেন্টের সব দলই ভালো। যে কোনো দলের সঙ্গেই খেলেন, সহজ হবে না। টি-টোয়েন্টিতে কেউ কারও চেয়ে কম না। তাই আমি কতটা ভালো খেলি, আমরা দল হিসেবে কত ভালো খেলতে পারি সেটিই এখানে গুরুত্বপূর্ণ।”
“প্রতিপক্ষ যদি বিবেচনা করি, বাংলাদেশের গ্রুপে তো নেদারল্যান্ডসও আছে। ওরা কিন্তু এমন বিশ্বকাপে অনেক বড় ম্যাচ জিতেছে। দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছে। শক্তির পরীক্ষা করলে তো ওরা বড় দল নয়। সেটা কিন্তু মাঠে ওদের জিততে কোনো বাধা হয়নি। তো যেটা বললাম, সব দলই আসলে কঠিন।”
বাংলাদেশের গ্রুপ নিয়ে প্রায় একই ভাবনা রাজ্জাকের সাবেক সতীর্থ ও বিসিবিতে বর্তমান সহকর্মী নাফীসের।
“সহজ-কঠিনের কথা যদি চিন্তা করি, ভারত-পাকিস্তান ও ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া (যেখানে আছে) অর্থাৎ গ্রুপ ‘এ’ ও ‘বি’ তুলনামূলক সহজ। বাকি ‘সি’ ও ‘ডি’ গ্রুপে তিনটি করে দল আছে সেরা আটের লড়াইয়ে থাকার মতো। আর বিশ্বকাপে সেরা দলগুলোই খেলে। কাউকে সহজ ভাবার কোনো সুযোগ নেই।”
২০২১ বিশ্বকাপে প্রথম পর্ব পার হলেও সুপার টুয়েলভে কোনো জয় পায়নি বাংলাদেশ। পরের আসরে এই পর্বে জিম্বাবুয়ে ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জিতলেও অন্য তিন ম্যাচে তেমন ভালো হয়নি দলের পারফরম্যান্স।
পেছনের ব্যর্থতা ছাপিয়ে নতুন উদ্যমে দলের লক্ষ্য বড় রাখার কথাই বললেন রাজ্জাক। তবে বাস্তবতাও মাথায় রাখছেন সাবেক বাঁহাতি স্পিনার।
“আসলে টি-টোয়েন্টি নিয়ে আগেভাগে মন্তব্য করা খুবই কঠিন। বিশ্বকাপের প্রস্তুতি শুরু হলে সব দলকে নিয়ে পরিকল্পনা করা হবে। অবশ্যই আমাদের লক্ষ্য থাকবে বড় কিছু করার। এটিও তো আসলে বলে-কয়ে হয় না। সেটি অর্জন করার জন্য যা যা প্রয়োজন তা যথাযথভাবে করার চেষ্টা থাকবে আমাদের দলের।”
গ্রুপের বাধা পেরিয়ে সুপার এইটে খেলার পূর্ণ সামর্থ্য বাংলাদেশের আছে বলেই মনে করেন নাফীস।
“২০২৩ সালে বাংলাদেশ দল টি-টোয়েন্টি সংস্করণে বেশ ভালো খেলেছে। এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে আমরা (সুপার এইটে খেলার ব্যাপারে) আশাবাদী। বাংলাদেশ ভালো করবে ইনশাআল্লাহ্। মূল ব্যাপার হলো, মাঠে ভালো খেলতে হবে। সেই সামর্থ্য আমাদের দলের আছে, আমি বিশ্বাস করি।”
টি-টোয়েন্টিতে ধীরে ধীরে উন্নতি করছে বাংলাদেশ। এই সংস্করণে গত বছর বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করার পাশাপাশি তারা সিরিজ জিতেছে আয়ারল্যান্ড ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে। বছরের শেষ দিকে নিউ জিল্যান্ডের মাঠে পেয়েছে প্রথম জয়, ড্র করেছে সিরিজ। সবমিলিয়ে ১৪ টি-টোয়েন্টিতে তারা জিতেছে ১০টি, হেরেছে তিনটি। উন্নতির ধারা বিশ্ব আসরেও বয়ে নিয়ে যাওয়ার কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে তাদের সামনে।