শেষ ১২ বলে ৪৩ রানের সমীকরণ মিলিয়ে ভারতকে হারাল অস্ট্রেলিয়া।
Published : 28 Nov 2023, 10:31 PM
জয়ের জন্য শেষ ৪ বলে অস্ট্রেলিয়ার দরকার ১৬ রান। প্রাসিধ কৃষ্ণাকে একটি ছক্কার পর টানা তিনটি চার মারলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। মাঝে হয়ে গেল তার অসাধারণ এক শতক। অস্ট্রেলিয়া পেল দুর্দান্ত জয়। বাঁচিয়ে রাখল সিরিজ।
গুয়াহাটিতে মঙ্গলবার তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে ভারতের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার জয় ৫ উইকেটে। ২২৩ রানের লক্ষ্যে শেষ ওভারে সফরকারীরা ২১ রানের সমীকরণ মিলিয়ে ফেলে শেষ বলে।
স্রেফ ৪৮ বলে ৮টি করে ছক্কা ও চারে অপরাজিত ১০৪ রানের খুনে ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার নায়ক ম্যাক্সওয়েল।
পার্শ্বনায়ক ম্যাথু ওয়েড। ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গে ৪০ বলে ৯১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটির পথে ১৬ বলে ২৮ রানের মূল্যবান ইনিংস খেলেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক।
ম্যাক্সওয়েল তিন অঙ্ক স্পর্শ করেন ৪৭ বলে। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে এই সংস্করণে যা আরও দুজনের সঙ্গে তার যৌথভাবে দ্রুততম শতক। এই সিরিজেই প্রথম ম্যাচে ৪৭ বলে শতক করেন জশ ইংলিস। ২০১৩ সালে অ্যারন ফিঞ্চ রেকর্ডটি প্রথম গড়েছিলেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।
এই সংস্করণে সবচেয়ে বেশি শতকের রেকর্ডে ভারতের রোহিত শার্মার পাশে বসলেন ম্যাক্সওয়েল, দুজনেরই এখন ৪টি করে।
ভারতের নায়ক হতে পারতেন এ দিন রুতুরাজ গায়কোয়াড়। ইনিংসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খেলে ক্যারিয়ারের প্রথম শতকে ৫৭ বলে ১২৩ রান করেন তিনি। যেখানে ১৩টি চারের পাশে ছক্কা ৭টি। শেষ পর্যন্ত কাজে এলো না তার এই ইনিংস।
পাঁচ ম্যাচের সিরিজে অবশ্য এখনও ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে ভারত।
বড় লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা ভালো হয় অস্ট্রেলিয়ার। ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনালের নায়ক ট্রাভিস হেড সিরিজে প্রথমবার খেলতে নেমে চার মারেন ইনিংসের প্রথম বলে। প্রথম চার ওভারে তারা তুলে ফেলে ৪৬ রান।
এরপর দ্রুত কয়েকটি উইকেট হারিয়ে ফেলে অস্ট্রেলিয়া। অ্যারন হার্ডিকে ফিরিয়ে ৪৭ রানের শুরুর জুটি ভাঙেন আর্শদিপ সিং। ১৮ বলে ৩৫ রান করে ফেরেন হেড। জশ ইংলিসকে টিকতে দেননি লেগ স্পিনার রাভি বিষ্ণই।
চতুর্থ উইকেটে মার্কাস স্টয়নিসের সঙ্গে ৪১ বলে ৬০ রানের জুটিতে অস্ট্রেলিয়াকে ম্যাচে রাখেন ম্যাক্সওয়েল। স্টয়নিসের বিদায়ের পর গোল্ডেন ডাক এর তেতো স্বাদ পান টিম ডেভিড।
শেষ পাঁচ ওভারে অস্ট্রেলিয়ার দরকার ছিল ৭৮ রান। শেষ ২ ওভারে যা দাঁড়ায় ৪৩ রানে। ১৮তম ওভারে ৫ রানে ওয়েডের ক্যাচ ফেলেন ভারত অধিনায়ক সুরিয়াকুমার। সেটির চড়া মূল্য দিতে হয় তার দলকে।
জীবন পেয়ে পরের ওভারে আকসার প্যাটেলকে দুটি চারের সঙ্গে একটি ছক্কা হাঁকান ওয়েড। সব মিলিয়ে এই ওভারে আসে ২২ রান।
শেষ ওভার নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে শুরু করতে না পারায় ৩০ গজ বৃত্তের বাইরে পাঁচ জনের জায়গায় চার জন ফিল্ডার নিয়ে ফিল্ডিং করতে হয় ভারতকে। সুযোগটা কাজে লাগান অস্ট্রেলিয়ার দুই ব্যাটসম্যান।
পেসার প্রাসিধের প্রথম বল পুল করে স্কয়ার লেগ দিয়ে চার মারেন ওয়েড। দ্বিতীয় বলে সিঙ্গেল নিয়ে তিনি স্ট্রাইক দেন ম্যাক্সওয়েলকে। পরের বল দারুণ শটে ডিপ কাভার ফিল্ডারের মাথার ওপর দিয়ে সীমানার ওপারে আছড়ে ফেলেন বিস্ফোরক এই ব্যাটসম্যান। পরের তিন বলে তিনটি চারে নিশ্চিত করেন জয়।
ভারতে এই মাসে ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ের পথে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে অবিশ্বাস্য দ্বিশতকে দলকে জেতান ম্যাক্সওয়েল। এবার কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে দেখা গেল তার আরেকটি ম্যাচ জয়ী দুর্দান্ত ইনিংস।
টি-টোয়েন্টিতে ভারতের হয়ে সবচেয়ে খরুচে বোলিংয়ের রেকর্ড গড়ে ৬৮ রান দেন প্রাসিধ। ২০১৮ সালে সেঞ্চুরিয়নে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ইয়ুজবেন্দ্র চেহেলের ৬৪ রান ছিল আগের রেকর্ড।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ভারতের শুরুটা ভালো ছিল না। আগের ম্যাচে ঝড়ো ফিফটি করা ইয়াশাসবি জয়সওয়াল ও ইশান কিষান বিদায় নেন দলীয় ২৪ রানের মধ্যেই।
সেখান থেকে প্রথমে সুরিয়াকুমারের সঙ্গে ৪৭ বলে ৫৭ রানের জুটিতে দলকে এগিয়ে নেন রুতুরাজ। একটা পর্যায়ে তার রান ছিল ২১ বলে ২১। এরপর বাড়ান গতি, ফিফটি পূর্ণ করেন ৩২ বলে।
সুরিয়াকুমারকে (২৯ বলে ৩৯) ফেরানো গেলেও রুতুরাজকে থামাতে পারেননি অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা। তিলাক ভার্মার সঙ্গে বিস্ফোরক জুটিতে দলের স্কোর দুইশ পার করেন ২৬ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। শেষ ওভারে ম্যাক্সওয়েলকে ছক্কায় উড়িয়ে ৯৪ থেকে তিনি প্রথম আন্তর্জাতিক শতকে পা রাখেন ৫২ বলে।
শেষ ওভারে ম্যাক্সওয়েল দেন ৩০ রান। টি-টোয়েন্টিতে এক ওভারে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সবচেয়ে বেশি রান খরচের নজির এটি। আগের সর্বোচ্চ ২৭ রান ব্রেট লি দিয়েছিলেন ২০০৯ সালে ওভালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে।
শেষ ৩ ওভারে ভারত তোলে ৬৭ রান! চতুর্থ উইকেটে রুতুরাজের সঙ্গে ৫৯ বলে অবিচ্ছিন্ন ১৪১ রানের জুটিতে তিলাকের অবদান কেবল ৩১।
সিরিজে প্রথম সুযোগ পেয়ে একটি উইকেট নেওয়া হার্ডি ৪ ওভারে দেন ৬৪ রান। এই সংস্করণে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে যৌথভাবে সবচেয়ে খরুচে বোলিংয়ের রেকর্ড এটি। ২০১৮ সালে অকল্যান্ডে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ৬৪ রান দিয়েছিলেন অ্যান্ড্রু টাই।
ম্যাক্সওয়েল ও হার্ডির বোলিংয়ের হতাশা ম্যাচ শেষে হয়তো থাকার কথা নয়। এমন জয়ের পর এসব আর কে মনে রাখে!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ২০ ওভারে ২২২/৩ (জয়সওয়াল ৬, রুতুরাজ ১২৩*, কিষান ০, সুরিয়াকুমার ৩৯, তিলাক ৩১*; রিচার্ডসন ৩-০-৩৪-১, বেহরেনডর্ফ ৪-১-১২-১, এলিস ৪-০-৩৬-০, স্যাঙ্ঘা ৪-০-৪২-০, হার্ডি ৪-০-৬৪-১, ম্যাক্সওয়েল ১-০-৩০-০)
অস্ট্রেলিয়া: ২০ ওভারে ২২৫/৫ (হেড ৩৫, হার্ডি ১৬, ইংলিস ১০, ম্যাক্সওয়েল ১০৪*, স্টয়নিস ১৭, ডেভিড ০, ওয়েড ২৮*; আর্শদিপ ৪-০-৪৪-১, প্রাসিধ ৪-০-৬৮-০, বিষ্ণই ৪-০-৩২-২, আভেশ ৪-০-৩৭-১, আকসার ৪-০-৩৭-১)
ফল: অস্ট্রেলিয়া ৫ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: পাঁচ ম্যাচ সিরিজে তিনটির পর ২-১ ব্যবধান এগিয়ে ভারত
ম্যান অব দা ম্যাচ: গ্লেন ম্যাক্সওয়েল