মুমিনুল-মিঠুনদের বিধ্বস্ত করে প্রথম দিনেই ভারতীয়দের লিড

প্রথম আনঅফিসিয়াল টেস্ট ম্যাচে ১১২ রানেরই গুটিয়ে গেল বাংলাদেশ ‘এ’ দল, লড়াই করলেন কেবল মোসাদ্দেক হোসেন।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Nov 2022, 12:46 PM
Updated : 29 Nov 2022, 12:46 PM

উইকেটে হালকা ঘাসের ছোঁয়া। তবে বিপজ্জনক হওয়ার মতো কিছু নয়। ভারতীয় বোলাররাও খুব ভয়ঙ্কর বোলিং করেননি। কিন্তু চ্যালেঞ্জ যেটুকু এলো, তাতেই ভেঙে পড়ল বাংলাদেশ ‘এ’ দলের ব্যাটিং। অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান, টেস্ট দলের সদস্যরাও একে একে ফিরলেন হাল ছেড়ে দিয়ে। স্রোতের বিপরীতে লড়লেন কেবল মোসাদ্দেক হোসেন।

মোসাদ্দেকের সেই একার লড়াই খুব বেশি দূর নিতে পারেনি বাংলাদেশ ‘এ’ দলকে। কক্সবাজারে প্রথম আনঅফিসিয়াল টেস্ট ম্যাচের প্রথম দিনে তারা গুটিয়ে গেছে স্রেফ ১১২ রানেই। এই রান প্রথম দিনেই ছাড়িয়ে গেছে ভারত ‘এ’ দল। দিন শেষ করেছে তারা কোনো উইকেট না হারিয়ে ১২০ রান করে।

বাংলাদেশ ‘এ’ দলের অর্ধেকের বেশি রান একাই করেন মোসাদ্দেক। বিপর্যয়ে নেমে দারুণ কিছু শট খেলে তিনি ৬৩ রান করেন ৮৮ বলে।

৪ উইকেট নিয়ে ভারত ‘এ’ সফলতম বোলার সৌরভ কুমার। চোটের কারণে রবীন্দ্র জাদেজা শেষ পর্যন্ত খেলতে না পারলে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে তাকেই খেলানো হবে বলে আলোচনা চলছে। সেই দাবি আরও জোরাল করলেন বাঁহাতি এই স্পিনার।

তবে বাংলাদেশের টপ অর্ডার গুঁড়িয়ে দেওয়ার কাজটি করেন নতুন বলের দুই বোলার নবদিপ সাইনি ও মুকেশ কুমার। ভারতের টেস্ট দলের ফাস্ট বোলার সাইনির শিকার ৩ উইকেট, টেস্ট দলের দুয়ারে কড়া নাড়তে থাকা পেসার মুকেশ নেন ২টি।

শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মাঠে মঙ্গলবার সকালে টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় ভারত। দলীয় সংগ্রহ ৩০ ছোঁয়ার আগেই পাঁচ ব্যাটসম্যানকে হারায় বাংলাদেশ। সাইনির করা ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে ড্রেসিংরুমে ফেরেন মাহমুদুল হাসান। মুকেশের পরের ওভারে একই পথ ধরেন আরেক ওপেনার জাকির হাসান।

অফ-মিডল স্টাম্পে পিচ করা ডেলিভারি সোজা আসবে ভেবে খেলেছিলেন মাহমুদুল। হালকা আউট সুইংয়ে বল তার ব্যাট ঘেঁষে আঘাত হানে অফ স্টাম্পে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্টে ফিফটির পর থেকেই ছন্দে নেই মাহমুদুল। মাঝে জাতীয় লিগে দুই ম্যাচে একটি ফিফটি করলেও হতাশ করেন বিসিএলে।

মুকেশের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা মেরে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন তৌহিদ হৃদয়ের চোটে দলে সুযোগ পাওয়া জাকির। রানের খাতা খুলতে পারেননি জাতীয় লিগে সর্বোচ্চ রান করা বাঁহাতি এ ব্যাটসম্যান। 

মুমিনুলকে টানা অফস্টাম্পের বাইরে আউট সুইং করতে করতে হঠাৎ একটি বল ভেতরে আনেন মুকেশ। বেরিয়ে যাবে ভেবে ছেড়ে দেন মুমিনুল। কিন্তু তীক্ষ্ণ সুইংয়ে বল ভেতরে ঢুকে গেলে উড়িয়ে দেয় বেলস।

তিন নম্বরে নেমে নাজমুল হোসেন শান্ত ইতিবাচক শুরু করেছিলেন। সাইনির করা ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে অফ ড্রাইভ ও স্ট্রেইট ড্রাইভে পরপর দুই বাউন্ডারি মেরে চাপ সরানোর চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিনিও। সাইনির বলে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ দেন ১৯ রানে।

দলকে বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারেননি অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুনও। বরং উইকেট ছুঁড়ে আসেন তিনি বাজে শটে। পেসার অতিত শেঠের অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে ধরা পড়েন তিনি কিপারের হাতে।

১৩ বল খেলেও রানের দেখা পাননি মিঠুন। ২৬ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে তখন চরম বিপদে বাংলাদেশ ‘এ’ দল।

পরের জুটিতে একটু লড়াই হয়। সাতে নেমে পাল্টা আক্রমণের পাল্টা আক্রমণের পথ বেছে নেন মোসাদ্দেক। তাকে সঙ্গ দিয়ে এক প্রান্ত আগলে রাখেন জাকের আলি অনিক।

সৌরভের বাঁহাতি স্পিনে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে স্ট্রেট ড্রাইভে চার মারার পর ওই ওভারেই লং অন দিয়ে ছক্কা মারেন মোসাদ্দেক। একটু পর সৌরভের বলেই চোখধাঁধানো একটি শটে ছক্কায় ওড়ান লং অফ দিয়ে। লাঞ্চ বিরতির আগে ৩ চার ও ২ ছয়ে ২৯ রান করে ফেলেন তিনি।

আরেক প্রান্তে লড়াই চালিয়ে যান জাকের। প্রথম রানের দেখা পেতেই বল খেলেন তিনি ৩৭টি!

লাঞ্চের পর অবশ্য মোসাদ্দেককে আর সঙ্গ দিতে পারেননি জাকের। সাইনির বেশ বাইরের বল তাড়া করে উইকেট বিলিয়ে ফেরেন তিনিও (৪৭ বলে ৪)।

স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের বিদায়ের পর তাইজুল ইসলাম দারুণভাবে লড়াই করেন মোসাদ্দেকের সঙ্গে। সপ্তম উইকেটে ইনিংসের ৪২ রানের জুটি গড়েন দুজন। ইনিংসের সেরা জুটি সেটিই! তাইজুল ১২ রান করে এলবিডব্লিউ হলে ভাঙে এই জুটি।

মোসাদ্দেক ফিফটি করেন ৫৪ বলে। তবে তাইজুলের বিদায়ের পর তিনিও আর টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। সৌরভের ডেলিভারিটায় টার্ন ও বাউন্স ছিল বেশ। তবে অনেক বাইরের সেই বল ছেড়ে দেওয়া যেত অনায়াসেই। সেটিই ব্যাট চালিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন মোসাদ্দেক।

পরে লেজ মুড়িয়ে দিতে বেশি সময় নেননি সৌরভ। শেষ ৩ উইকেটও তিনি নিয়ে নেন দ্রুতই। ৭ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ ‘এ।’

উইকেট যে ব্যাটসম্যানদের বধ্যভূমি নয়, তা এ দিনই প্রমাণ করে দেন ভারত ‘এ’ দলের দুই ওপেনার অভিমন্যু ইশ্বরন ও যাশাববি জয়সওয়াল। বাংলাদেশের পেস-স্পিন অনায়াসেই সামলে বেশ দ্রুতই রান বাড়ান দুজন। গড়ে ওঠে শতরানের জুটি।

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে স্রেফ ৭ ম্যাচেই ৫ সেঞ্চুরি করে ফেলা যাশাসবি দিন শেষ করেন ১০৬ বলে ৬১ রান নিয়ে। ভারতীয় অধিনায়ক ইশ্বরন মাঠ ছাড়েন ১১১ বলে ৫৩ রানে অপরাজিত থেকে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ ‘এ’: ৪৫ ওভারে ১১২ (জয় ১, জাকির ০, শান্ত ১৯, মুমিনুল ৪, মিঠুন ০, জাকের ৪, মোসাদ্দেক ৬৩, তাইজুল ১২, নাঈম ৬*, রাজা ০, খালেদ ০; মুকেশ ১২-২-২৫-২, সাইনি ১০-৫-২১-৩, অতিত ৮-১-২৩-১, সৌরভ ৮-৩-২৩-৪, জয়ন্ত ৭-১-২০-০)।

ভারত ‘এ’: ৩৬ ওভারে ১২০/০ (জয়সওয়াল ৬১*, ইশ্বরন ৫৩*; খালেদ ৮-০-২৬-০, রাজা ৭-১-২৮-০, তাইজুল ১৩-২-৩৮-০, নাঈম ৪-০-১৪-০, মোসাদ্দেক ৪-১-১০-০)